চট্টগ্রামে নোবেল বিজ্ঞান বক্তৃতা ২০২৫ অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রামে আয়োজিত হলো ‘দৃষ্টি নোবেল বিজ্ঞান বক্তৃতা ২০২৫’। গত ১৬ নভেম্বর, রোববার থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। চিকিৎসা ও শারীরতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে চলতি বছরের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ও তাঁদের কাজ নিয়ে আলোচনা করা হয় এতে।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাশ্বত রবি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ কাউছার আলম।

এ ছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও  মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কবি আবুল মোমেন,  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিজ্ঞানী ডাক্তার ইমরান বিন ইউনুস, দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ বকুল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান। এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি সাইফ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা দেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক কাজী আরফাত এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্না মজুমদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সহসভাপতি বনকুসুম মজুমদার।

শুরুতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল জয়ের রহস্য ভেঙে বলেন। আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম কীভাবে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোনো ক্ষতি না করেই বাইরের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে—সেই কৌশল আবিষ্কারের জন্যই এবার তিন গবেষক নোবেল পেয়েছেন। এই আবিষ্কারের ফলে অটোইমিউন রোগের মতো জটিল সমস্যা সমাধান করা এখন আরও সহজ হবে।

কথার একপর্যায়ে তিনি তরুণদের উৎসাহ দিতে গিয়ে মজার এক তুলনা টানলেন। তিনি বললেন, ‘একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে হয়তো শান্তিতে নোবেল পেতে হলে ৮টা যুদ্ধ থামাতে হয়! কিন্তু একজন বিজ্ঞানী ল্যাবে বসে মাত্র একটা যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমেই এই পুরস্কার জিতে নিতে পারেন। তাই বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য এই পুরস্কার জেতা আসলে অনেক সহজ!’

রসায়নের আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাশ্বত রবি। তিনি এবারের নোবেলজয়ীদের কাজকে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্য এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করেন।

তাঁর মতে, ‘কোনো কিছুকে স্থায়ীভাবে বেঁধে রাখতে চাইলে যেমন একটা শক্ত বেড়া বা অবকাঠামো প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি আধুনিক বিজ্ঞানকেও টেকসই করতে এমন একটা মজবুত কাঠামো জরুরি।’

ড. শাশ্বত রবি জানান, এবারের নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানী তাঁদের ‘জৈব ধাতব রসায়ন’আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানজগতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেন। একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানকে আমূল বদলে দিতে এই অবকাঠামোগত ধারণা ও প্রযুক্তিই এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ কাউছার আলম আলোচনা করেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এবার পদার্থে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরা ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কার কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাঁরা এমন একটি অতিপরিবাহী বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা তৈরি করেন, যা হাতে ধরা যায়। সেই সার্কিটে তারা কোয়ান্টাম টানেলিং এবং শক্তির নির্দিষ্ট স্তর—দুটি বিষয়ই দেখিয়েছেন।’

গত চার বছর ধরে চট্টগ্রামে আয়োজিত হচ্ছে নোবেল বক্তৃতা। সেই ধারাবাহিকতায় পঞ্চমবারের মতো এই বিজ্ঞান বক্তৃতা আয়োজন করে দৃষ্টি চট্টগ্রাম। সহযোগিতা করেছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ, চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি, নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনেজিস্ট বাংলাদেশ, ইউএসটিসি ফার্মা সায়েন্স ক্লাব, চুয়েট বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি রোবোটিক্স ক্লাব, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ রিসার্চ ক্লাব, আনন্দ বিজ্ঞান ফুলকি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ ডিবেটিং ক্লাব, সিভাসু বায়োটেক ক্লাব। ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে ছিল বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা।