বিজ্ঞানচিন্তার জন্য অনেক অভিনন্দন

DIPU MALAKAR
‘বিজ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনকে আলাদা করা যায় না এবং করা উচিত নয়’
—রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন, রসায়নবিদ ও এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফার

আমার ছোটবেলার প্রতিটি মুহূর্তে যেন কোনো না কোনোভাবে বিজ্ঞানের ছোঁয়া ছিল। স্কুল শেষে বাসায় কেউ দেখার নেই বলে মা-বাবার ল্যাবরেটরিতে থাকতাম। বাবা কখনো মাইক্রোস্কোপে ব্যাকটেরিয়া দেখাতেন, মা বোঝাতেন টিকা কীভাবে বানানো হয় বা তার মান নিয়ন্ত্রণের ধাপগুলো কী কী।

আর সবার সঙ্গে রাতে খাবার টেবিলে খাওয়ার চেয়ে বেশি থাকত বিজ্ঞানের আলোচনা। দেশে ও দেশের বাইরের বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কার, প্রকাশন, নোবেল প্রাইজ, আরও কত কী! মাঝেমধ্যে বাবা নিয়ে যেতেন লাইব্রেরিতে, যেখানে স্তরে স্তরে সাজানো থাকত আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলো।

বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্বের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে
DIPU MALAKAR

তাই বোধ হয় বলা যায়, আমার ছোটবেলাটা একটু আলাদাই ছিল। কিন্তু এখন অনেক কিছু বদলে গেছে, এখন তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। তাল মিলিয়ে চলা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখন আর খাবার টেবিলে বা লাইব্রেরিতে এত তথ্যের পর্যাপ্ত জায়গা হয় না। কোনটা রেখে কোনটা পড়ব? কীভাবে বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সর্বশেষ তথ্যগুলো জানতে পারব? এই চিন্তা করেই তো দিন ফুরায়। তাহলে কী করা যায়?

ঠিক এ শূন্যতাই পূরণ করছে বিজ্ঞানচিন্তা। আমি বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি বছর দুয়েক হবে। তাদের কার্যক্রমে আমি মুগ্ধ। প্রতি মাসে অপেক্ষায় থাকি সংখ্যাগুলোর জন্য। এখন তো আর মা-বাবার ল্যাবে যাওয়া হয় না। খাবারের টেবিলও অনেক বদলে গেছে। জীবন প্রতিনিয়ত ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন বিজ্ঞানচিন্তার নিবন্ধগুলো পড়ি, যেন হারিয়ে যাই ছোটবেলার ওই দিনগুলোতে।

ড. সেঁজুতি সাহা

বিজ্ঞানচিন্তার টার্গেট শ্রোতা হলো কিশোর-কিশোরী, নতুন প্রজন্ম। প্রতি মাসে একটি সংখ্যা বের হয় এবং মাত্র ৫০ টাকায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সর্বশেষ তথ্যের একটি সারমর্ম পাওয়া যায়। পত্রিকাটি পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, মহাকাশ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, বিজ্ঞান বই পর্যালোচনা, এমনকি বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনিও অন্তর্ভুক্ত করে। আমাদের সর্বশেষ বিজ্ঞান গবেষণা, ঘটনা, সাফল্য, সাক্ষাৎকারসহ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সম্পর্কেও অবগত রাখে। যেমন কিছুদিন আগে বিজ্ঞানচিন্তা প্রচ্ছদ করেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী ও তাঁর ম্যাগসাইসাই পুরস্কার জেতার খবর। ড. কাদরীকে চিনি অনেক দিন থেকে, একসঙ্গে কাজও করেছি। কিন্তু আর্টিকেলটা পড়ে তাঁকে অন্যভাবে দেখতে পেলাম। আর মনে হলো যেন ড. কাদরীর সঙ্গে সামনাসামনি বসে এগুলো জানলাম।

পাঁচ পেরিয়ে বিজ্ঞানচিন্তা

এই পত্রিকা বিজ্ঞানকে ইন্টারঅ্যাকটিভ ও মজাদার করে সামনে আনে। যেমন তারা মজার মজার বিজ্ঞানভিত্তিক ছড়া প্রকাশ করে, বিভিন্ন রকমের পাজল, কুইজ ও বিভিন্ন রকমের কমিকও থাকে পাঠকদের জন্য। এগুলো পড়ার সময় মাঝেমধ্যে সত্যই মনে হয় যেন বিভিন্ন বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলছি।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে শুরু করে কীভাবে মাস্ক বা সাবান কোভিড প্রতিরোধ করে, এগুলো সহজভাবে বোঝায় বিজ্ঞানচিন্তা। ইনফোগ্রাফিকস ব্যবহার করে বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞানের কঠিন ধারণাগুলোকে সহজ করে দেয় যেন সবাই বুঝতে পারে।

যখন বিজ্ঞানচিন্তা পড়ি, হারিয়ে যাই সেই দিনগুলোতে, যখন স্কুলের পর মা-বাবার ল্যাবে বসে তাঁদের কাজ দেখতাম। বিজ্ঞানচিন্তার পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনেক অনেক অভিনন্দন ও ভালোবাসা। আশা রাখি, এ রকম আরও অনেক বার্ষিকী আসবে এবং অনুপ্রাণিত করবে তরুণ বিজ্ঞানীদের। একাকার হয়ে যাবে বিজ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবন।

লেখক: অণুজীববিজ্ঞানী, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ