শুরু হচ্ছে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলা। আগামীকাল ১১ জুন, মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স ভবনে এ আয়োজন শুরু হবে। ১২ জুন, বুধবার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে দুই দিনের এ আয়োজন। ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত হচ্ছে এই বিজ্ঞান মেলা। এতে সারা দেশের নির্বাচিত প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী অংশ নেবে।
জাতীয় বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষ্যে ১০ জুন, সোমবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ডাহুক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের আওতায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর সারা দেশে তিন ধাপে এ বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে। প্রথম ধাপে দেশের সব উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয় বিজ্ঞান মেলার উপজেলা পর্ব। এ পর্বের বিজয়ীরা দ্বিতীয় ধাপে জেলা পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয়। জেলা পর্যায়ের বিজয়ী ও সেরা প্রকল্পগুলো নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে এই জাতীয় বিজ্ঞান মেলা। এতে ১৯২টি স্টলে বিভিন্ন উদ্ভাবনী বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শন করবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের আয়োজন হিসেবে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে ৮ম জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ও ৮ম বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতা। এ আয়োজনের বিজয়ীদের জন্য রয়েছে সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণসহ আকর্ষণীয় সব পুরস্কার।
এ আয়োজনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন এবং সভাপতি হিসেবে থাকবেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আব্দুর রাজ্জাক। এ ছাড়া উপস্থিত থাকবেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ আরও অনেকে। আর সমাপনী পর্বের প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।
৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষ্যে ১০ জুন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে মিডিয়ার ভূমিকা’। এতে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, সিনিয়র কিউরেটর সুকল্যাণ বাছাড়সহ আরও অনেকে।
আয়োজনে উপস্থিত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রথম আলোর তারিকুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘সহজ ভাষায় বিজ্ঞানকে সবার মধ্যে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তবে বিজ্ঞান নিয়ে লিখলে সেটা যেন সঠিক হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একসময় আমরা বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতা প্রকাশ করতাম, এখন বিজ্ঞানচিন্তা নামে আলাদা একটি বিজ্ঞান ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। তবে সব সংবাদপত্রেই বিজ্ঞানের আলাদা পাতা, কলাম থাকা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা সেখানে সহজ ভাষায় লিখবেন। এর উদ্দেশ্য হবে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করা। বিজ্ঞানমনস্ক আর বিজ্ঞানী এক জিনিস নয়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আগ্রহীরা বিজ্ঞানী হবেন, বিশেষজ্ঞ হবেন। কিন্তু যাঁরা বিজ্ঞানী হবেন না, তাঁরাও যেন বিজ্ঞানমনস্ক হন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে ওঠে, সেটাই আমাদের চাওয়া।’
এ বিজ্ঞান মেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কিশোর ও তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি শুধু রাজধানীই নয়, দেশের সব প্রান্তে বিজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে। ঢাকার যেকোনো শিক্ষার্থী যেসব সুবিধা পায়, তার কিছুটা যেন পঞ্চগড়ের শিক্ষার্থীরাও পায়, তারাও যেন বিজ্ঞানে আগ্রহী হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ঢাকার বাইরে স্কুলগুলোতে অনেক জায়গায় ভালো ল্যাব নেই। আমরা তাই মিউজো বাস নিয়ে যাই, ওদেরকে পাঠ্য বইয়ের এক্সপেরিমেন্টগুলো হাতে-কলমে করে দেখাই, যেন ওরা বিজ্ঞানের আনন্দটুকু পায়।’
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ডিজিআই বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ইমদাদুল হক, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান মেলা কীভাবে সফল করা যায়, আরও কী কী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, বিজ্ঞান জাদুঘরের দায়িত্ব, বর্তমান কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলা সব দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত।