ইলেকট্রোম্যাগনেট মানে, বিদ্যুচ্চালিত চুম্বক। সাধারণ চুম্বকের সঙ্গে এর পার্থক্য হলো, এটিকে চাইলে চালু বা বন্ধ করা যায়। লাউড স্পিকার বা ডিস্ক ড্রাইভের মতো যন্ত্রের জন্য এ ধরনের চুম্বক দরকার হয়। এসব যন্ত্রে শুধু প্রয়োজনের সময় চৌম্বক ক্ষেত্র চালু রাখা হয়। তুমি চাইলে স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারো ইলেকট্রোম্যাগনেট।
যা যা লাগবে
১. প্লাস্টিকের হাতলওয়ালা স্ক্রু-ড্রাইভার
২. ইনসুলেটেড তার
৩. ৪.৫ ভোল্টের একটি ব্যাটারি
৪. স্টিকি টেপ
৫. রুলার
৬. স্টিলের পেপারক্লিপ
৭. কাঁচি
১। স্ক্রু-ড্রাইভারের ধাতব অংশটি যেখানে হাতলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেখানে হাতলের সঙ্গে তারটা প্যাঁচাতে হবে এবং টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। তবে প্যাঁচানোর আগে ৩০ সে.মি. (১২ ইঞ্চি) পরিমাণ তারের মাথা বের করে রাখতে হবে। পরীক্ষা করে দেখো তো!
কয়েল বা প্যাঁচের সংখ্যা কমিয়ে-বাড়িয়ে দেখতে পারো, এটি চৌম্বক ক্ষেত্রের ওপর কী প্রভাব ফেলে। ৮০ প্যাঁচের ইলেকট্রোম্যাগনেট কি ৪০ প্যাঁচের ইলেকট্রোম্যাগনেটের চেয়ে ভালো কাজ করবে? নিজেই করে দেখো!
২। স্ক্রু-ড্রাইভারের ধাতব অংশের সঙ্গে তারটাকে শক্ত করে ৬০ প্যাঁচ দিতে হবে। শেষ প্যাঁচ দেওয়ার পর সেখানে টেপ লাগিয়ে দিতে হবে যেন তারটা জায়গামতো থাকে, নড়ে না যায়।
৩। এ পাশেও ৩০ সেমি (১২ ইঞ্চি) পরিমাণ তারের মাথা বের করে রেখে কেটে ফেলতে হবে। এবার বড় কাউকে বলে তারের দুই মাথা থেকেই ২-৩ সেমি (১ ইঞ্চির মতো) ইনসুলেশন বা প্রলেপ ছাড়িয়ে দিতে হবে।
৪। তারের দুই মাথা ব্যাটারির দুই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে।
কীভাবে কাজ করে?
বিদ্যুৎ ও চৌম্বকত্বের মধ্যে একধরনের সম্পর্ক আছে। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই প্রবাহ বন্ধ করে দিলে চৌম্বক ক্ষেত্রটিও আর থাকে না। কয়েল বা প্যাঁচানো তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে দণ্ডচুম্বকের মতো শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়।
৫। এবার স্ক্রু-ড্রাইভারের ধাতব অংশের মাথা দিয়ে কিছু পেপারক্লিপ স্পর্শ করে দেখো তো, কয়টা ক্লিপ তুলতে পারে? ব্যাটারি থেকে তার খুলে নিয়ে আবার একইভাবে চেষ্টা করে দেখো। এবারে আর স্ক্রু-ড্রাইভার কোনো ক্লিপ তুলতে পারবে না। অর্থাৎ এটা চুম্বকত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত করলেই স্ক্রু-ড্রাইভারটা চুম্বকে পরিণত হবে
কম্পাস ক্লু
বিদ্যুতের প্রবাহ যে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, এটি প্রথম লক্ষ করেন ড্যানিশ বিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান ওয়েরস্টেড (১৭৭৮-১৮৫১)। ১৮২০ সালে তিনি প্রথম খেয়াল করেন, কোনো কম্পাসের কাছাকাছি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে কম্পাসের কাঁটা কাঁপতে থাকে। ১৯৩১ সালে মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) দেখান এই সম্পর্ক উল্টোভাবেও কাজ করে। তারের কয়েলের কাছাকাছি একটা চুম্বক নাড়াচাড়া করে তিনি দেখেন, নড়নশীল চুম্বক তারে বিদ্যুতের প্রবাহ তৈরি করছে।
খেয়াল করো
স্ক্রু-ড্রাইভারের মাথা সাধারণত খানিকটা চুম্বকীয় হয়। এর ফলে স্ক্রুগুলো ড্রাইভারের মাথায় লেগে থাকে। এতে কাজ করতে সুবিধা হয়। পরীক্ষাটা শুরু করার আগে দেখে নেওয়া উচিত, তোমার স্ক্রু-ড্রাইভার এমনিতে কয়টা পেপারক্লিপ তুলতে পারে। তারপর এটাকে ইলেকট্রোম্যাগনেটে রূপান্তর করার পর কয়টা ক্লিপ তুলতে পারে। পর্যবেক্ষণ করলেই তুমি বুঝতে পারবে, পরীক্ষাটা ঠিকভাবে কাজ করছে কি না।
ইলেকট্রোম্যাগনেটের ব্যবহার
ইলেকট্রোম্যাগনেট ভবিষ্যতে ম্যাগলেভ, অর্থাৎ লেভিটেটিং বা ভাসমান ট্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দিতে পারে। এতে কোনো চাকার দরকার পড়ে না। ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বললেও, বর্তমানেই ম্যাগলেভ ট্রেন আছে। পৃথিবীর প্রথম দ্রুতগতির ব্যবসায়িক ম্যাগলেভ সাংহাই ম্যাগলেভ স্টেশন ও সাংহাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে ৪৩১ কিলোমিটার/ঘণ্টা (২৬৮ মাইল/ঘণ্টা) বেগে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। ট্রেনের নিচের দুই পাশের কিছু অংশ রেললাইনের নিচে বেঁকে থাকে। এই বেঁকে যাওয়া অংশের ইলেকট্রোম্যাগনেট ও রেললাইনের ইলেকট্রোম্যাগনেট একে অন্যকে আকর্ষণ করে। খেয়াল রাখতে হবে, বেঁকে যাওয়া অংশটা থাকে রেললাইনের নিচে। ফলে, ইলেকট্রোম্যাগনেটের আকর্ষণে নিচের বেঁকে যাওয়া অংশটা লাইনের সঙ্গে লেগে যায় এবং ট্রেনটা রেললাইন থেকে কিছুটা ওপরে একরকম ভাসমান অবস্থায় থাকে।