২২ অক্টোবর, রোববার। সকাল ৯টা। আকাশ পরিষ্কার। হাসছে প্রকৃতি। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার আলোকি কনভেনশন সেন্টারে কিশোর-কিশোরীদের ভিড়। সবার হাতে কিশোর আলো। গেটে ম্যাগাজিন দেখালেই ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাতে পড়ছে ছাপ। ওতে লাল গোলের মধ্যে সাদা কালিতে লেখা—কিআর ১০-এ ১০।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঢুকছে উৎসবে। একটু পরেই শুরু হবে নগদ কিআ কার্নিভ্যাল ২০২৩। চলছে কর্মযজ্ঞ। দিনব্যাপী চলবে জনপ্রিয় শিল্পীদের গান, ম্যাজিক, বিভিন্ন কর্মশালাসহ আরও কত্ত কী!
বিশাল এই কর্মযজ্ঞের মাঝে, মূল মঞ্চ থেকে বেরোতেই বিজ্ঞানচিন্তার স্টল। মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে গান, শোনা যাচ্ছে কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হকের কথা। এদিকে বিজ্ঞানচিন্তার স্টলে রয়েছে বিজ্ঞানের মজার সব আয়োজন। দুটি এক ফুট আকৃতির পাজল। এর একটি পর্যায় সারণি, অন্যটিতে এলিয়েন বসে মনযোগ দিয়ে পড়ছে বিজ্ঞানচিন্তা। পাশাপাশি রয়েছে আরও দুটি ছোট পাজল। একটিতে আপন মনে আইনস্টাইন বসে চিন্তা করছেন। অন্যটিতে রয়েছেন রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী মেরি কুরির ছবি। দুই মিনিটের মধ্যে মেলাতে পারলেই পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে আইসক্রিম, বিস্কুট বা কেকের কুপন। সময় বেশি লাগলেও সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে চকলেট। খেলা জমে গেছে। সবাই পাজল মেলাতে চায়!
স্টলের সামনে বিশাল লাইন। সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীরা। কারণ, শুধু পাজল নয়। স্টলের অন্য মাথায় আছে ট্যানগ্রামও। সাত টুকরো কাগজ দিয়ে বানানো যায় মজার সব আকৃতি। এটাই ধাঁধা। মাথা খাটানোর মতো হেঁয়ালি। রয়েছে সুডোকু। গণিতে আগ্রহীদের জন্য একেবারে যুতসই আয়োজন। একটা পাত্রে মজার সব কুইজ রাখা। কাগজ তুলে প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারলেই পুরস্কার!
শুধু বিজ্ঞানের মজার এসব খেলাই নয়, ছিল বিজ্ঞানী পরিচিতি। দশজন বিজ্ঞানীর ছবি। সবার নাম বলতে পারলেই পাওয়া যাবে কুপন। আর এক বা দুইজনের নাম বলতে পারলেও আছে সান্ত্বনা পুরস্কার। যারা সব ধাঁধা সমাধান করতে পেরেছে, তাদের হাতে অন্য পুরস্কারের পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয়েছে মূল্যবান বই।
দিনভর ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। কেউ গেম খেলছে, কেউ কুইজের উত্তর দিচ্ছে। বড়রাও পাজল মেলাতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন শৈশবে। পাজল মিলিয়ে জোর দাবী জানিয়ে কেউ জিতে নিচ্ছেন চকলেট, কেউ খাবারের কুপন। সব ধাঁধা সমাধান করে কেউ আবার জিতে নিচ্ছেন বিজ্ঞানের বই। এভাবেই হাসি-আনন্দে বিভিন্ন বয়সী পাঠকের সঙ্গে কাটল বিজ্ঞানচিন্তা দল ও স্বেচ্ছাসেবীদের দিন। অনেকে তো দিনশেষে বিজ্ঞানের মজার সব হেঁয়ালি আরও কিছু সময় মেলানোর সুযোগ না পেয়ে মন খারাপ করেই ফিরে গেল।
কিশোর আলোর ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত হয় নগদ কিআ কার্নিভ্যাল ২০২৩। মূলত শিশুরাই অংশ নেয় এ উৎসবে। মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এতে নিবন্ধন করার সুযোগ পায় প্রথমে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আগ্রহের জন্য শেষ দিন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও দেওয়া হয় নিবন্ধন করে অংশ নেওয়ার সুযোগ। কিআ কার্নিভ্যালে শিশুদের বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলতেই ছিল বিজ্ঞানচিন্তার স্টল। এ ছাড়াও ছিল বিজ্ঞান কুইজসহ চমৎকার সব কর্মশালা। মঞ্চে ছিল নাচ, গানসহ অনেক আয়োজন। কিআ কার্নিভ্যাল এভাবেই বিজ্ঞানচিন্তা দল, লেখক ও পাঠক-দর্শক—সবার জন্য হয়ে উঠেছে সত্যিকার এক মিলনমেলা।