প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর নামাঙ্কিত এই বোর্ড ব্যবহার করেই সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিল বাংলাদেশ।
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২-এ বাংলাদেশের টিম ‘লেইজি-গো’ ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। বাংলাদেশের অন্য টিম ‘রোবনিয়াম বাংলাদেশ’ হয়েছে অষ্টম।
বাংলাদেশের ডিজাইন করা জেআরসি বোর্ড আগামীদিনের রোবটিক্স এবং আইওটিকে মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়। এই জেআরসি বোর্ডে কমিউনিকেশন করতে আলাদাভাবে ওয়াইফাই ও ব্লুটুথের প্রয়োজন হয় না। প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর নামাঙ্কিত এই বোর্ড ব্যবহার করেই সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিল বাংলাদেশ।
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড রোবটিকস প্রতিযোগিতার ২৪তম আসরে প্রথমবার সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। ১৭ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিন চলে আই আয়োজন। প্রতিযোগিতায় ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স ক্যাটাগরিতে টিম ‘লেইজি-গো’ বিশ্বের ২৪ দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। অন্যদিকে ফিউচার ইনোভেটরস ক্যাটাগরিতে ‘রোবনিয়াম বাংলাদেশ’ ৩২ দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে হয়েছে অষ্টম। সারা বিশ্বের ৭৩ দেশের ৩৭৫টি দলের প্রায় এক হাজার তিন শতাধিক প্রতিযোগী এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের দুটি দলের দুজন করে মোট চারজন প্রতিযোগী অংশ নেয়।
২০২১ সালে অনলাইনে অনুষ্ঠিত আসরে প্রথমবার অংশ নিয়ে ৬৬টি দেশের ২০০টি দলের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ।
টিম ‘লেইজি-গো’-এর সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল সামিন পৃথুল ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তওসিফ সামিন। টিম রোবনিয়াম বাংলাদেশের দুই সদস্য রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ইসরাফিল শাহীন অরণ্য এবং মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মীর মুহাম্মদ আবিদুল হক। বাংলাদেশের দুটি দলের দলনেতা হিসেবে আছেন রেদওয়ান ফেরদৌস এবং উপ-দলনেতা মাহেরুল আজম কোরেশী।
মাহেরুল আজম কোরেশী বলেন, ‘আমাদের এই পথ চলাটা খুব কঠিন ছিল। রোবট সম্পর্কিত অনেক উপকরণ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। আমরা অনেক কষ্টে সেগুলো দেশের বাইরে থেকে এনেছি। প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলেরা প্রথম দুই রাউন্ডে সবার ওপরেই ছিল। ফাইনাল রাউন্ডে আমরা পিছিয়ে যাই। ছেলেদের সব সময় বলেছি, যাই হোক আমরা শেষটা দেখতে চাই। আমরা তৃতীয় হয়েছি। প্রথম হওয়া চীনের দলটির পয়েন্ট ছিল ৭৫, দ্বিতীয় হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পয়েন্ট ৭৪, আমাদের পয়েন্ট ৭৩। প্রথমবার সরাসরি অংশগ্রহণ করে ছেলেরা ভালোই করেছে।’
টিম ‘লেইজি-গো’-এর সদস্য ইকবাল সামিন বলেন, ‘বাংলাদেশে রোবট তৈরি থেকে শুরু করে জার্মানির ভিসা পাওয়া পর্যন্ত অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, জাতীয় আয়োজকেরা এবং জার্মান প্রবাসীদের সহযোগিতার ফসল আজকের এই পুরস্কার।’
২০২০ সালে আমরা ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডের সদস্য হয় বাংলাদেশ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, ‘২০২০ সালে আমরা ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডের সদস্য হয়েছি। সেবার প্রতিযোগিতার আসর হয়নি। ২০২১ সালে অনলাইনে অনুষ্ঠিত আসরে প্রথমবার অংশ নিয়ে ৬৬টি দেশের ২০০টি দলের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। এ বছরের আয়োজনে সশরীরে বিশ্বের ৭৩টি দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আমাদের দেশের ছেলেরা।’ আগামী ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় দেশের মাটিতে পা রাখবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজয়ী বাংলাদেশ এই দল।
এর আগে, গত অক্টোবরে রাজধানীর আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২–বাংলাদেশের জাতীয় পর্ব। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক দল নির্বাচনী ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পের সাফল্য এবং পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে ‘ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২’-এ বাংলাদেশ দল নির্বাচন করা হয়।
এ বছর ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগীরা নিজেদের খরচেই অংশ নিচ্ছে। তাঁদের সহযোগিতা করছে জেআরসি বোর্ড এবং ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট।
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা