চট্টগ্রামে খুদে বিজ্ঞানীদের মিলনমেলা

বিজ্ঞান মজার, বিজ্ঞান উপভোগের। বিজ্ঞানী হতে হবে, ভালো মানুষ হতে হবে। এমন নানা মন্ত্র নিয়ে ঢাকার পর চট্টগ্রামে শুরু হলো বিজ্ঞান উৎসব। নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোডের পিটিআই স্কুলের মাঠে সকাল ৭টা থেকেই জড়ো হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী। নিজেদের উদ্ভাবন নিয়েই হাজির হয় তারা। কেউ কেউ অংশ নিচ্ছে কুইজ প্রতিযোগিতায়।

স্কুলশিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা।

জাতীয় পতাকা ও উৎসবের পতাকা উত্তোলনের পর জাতীয় সংগীত গাওয়া শেষে, শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুস্তফা কামরুল আখতার। আরও উপস্থিত ছিলেন বিকাশের রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের এসিসট্যান্ট ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান ও বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার।

বিজ্ঞান হলো বিশেষ একটা জ্ঞান। বিশেষ জ্ঞান বিভিন্ন ধারায় থাকে। আমরা বলি চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান। বিজ্ঞানেকে কাজে লাগিয়ে ধানের উৎপাদন বেড়েছে, ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। চলার পথে তুমি কোনো সমস্যার মধ্যে পড়লে, তুমি তার সমাধানটাও করবে বিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে।
গৌতম বুদ্ধ দাশ, উপাচার্য, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

বিজ্ঞান উৎসব আয়োজন করায় বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তাকে ধন্যবাদ জানান উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ। তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার প্রেরণা দেন। বলেন, 'বিজ্ঞান হলো বিশেষ একটা জ্ঞান। বিশেষ জ্ঞান বিভিন্ন ধারায় থাকে। আমরা বলি চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান। বিজ্ঞানেকে কাজে লাগিয়ে ধানের উৎপাদন বেড়েছে, ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। চলার পথে তুমি কোনো সমস্যার মধ্যে পড়লে, তুমি তার সমাধানটাও করবে বিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে।'

বিজ্ঞানের আশির্বাদ ও অভিশাপ দুটোই আছে, উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন,  'আমাদের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।  বিজ্ঞানের আশির্বাদটাই নিতে হবে।'

অভিভাবকদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, সন্তান যেদিকে যেতে চায়, তাকে সেদিকে যেতে দিন। গণিত ভালোবাসলে উৎসাহ দিন। গণিত সব কাজেই লাগে। কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে হলে গণিত লাগে। আধুনিক মানুষ হতে গেলে বিজ্ঞান লাগে।

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, 'যে শিশুরা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে বড় হবে, সে কখনো ধ্বংসাত্মক পৃথিবী মেনে নেবে না।  বিজ্ঞান আমাদের প্রাণ বাঁচায়, আমাদের  স্বপ্ন দেখায়। তাই বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে বড় হতে হবে। বিজ্ঞান আধুনিক করে তুলবে। ভাবতে শেখাবে।’

শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচিন্তা পড়ার পরামর্শ দেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী। বলেন, 'আমরা যখন বড় হয়েছি, তখন বিজ্ঞানচিন্তা ছিল না। অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়নি। এখন তোমাদের সামনে বিজ্ঞানচিন্তা আছে। এই ম্যাগাজিনের মাধ্যমে নতুন কিছু জানতে পারবে। তাই নিয়মিত বিজ্ঞানচিন্তা পড়তে হবে। '

বিজ্ঞান উৎসব আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান মোস্তফা কামরুল আখতার। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান আমাদের অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। একটা ছুরিও বিজ্ঞানে আবিষ্কার। সেই ছুরি দিয়ে সার্জারি করে প্রাণ বাঁচানো যায়। আবার প্রাণ নেওয়া যায়। ফলে বিজ্ঞানকে কল্যাণের কাজে ব্যবহার করতে হবে।'

বিকাশের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিজ্ঞানে বিকাশ এই থিম নিয়ে বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে সম্মিলিতভাবে বিকাশ এই আয়োজন করে আসছে। বিকাশ হলো বিজ্ঞানের উদ্ভাবন। এটি এখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। বিকাশ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে।'

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'বিজ্ঞানের কারণে আমরা গ্লোবাল সিটিজেন। বিজ্ঞানের কারনে পৃথিবী হাতের মুঠোয়। মোবাইল দিয়ে যে কোনো জিনিস তোমরা পড়তে পারো। শিখতে পারো। আর তোমারাই একদিন এরকম নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেবে। তোমাদের ওপরই দেশের ভবিষ্যৎ। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।'

প্রথম আলো বন্ধুসভা চট্টগ্রামের উপদেষ্টা ফাহিম উদ্দিন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। আয়োজনের সহযোগিতা করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।

চট্টগ্রামের এই আয়োজনে বিজ্ঞান প্রজেক্ট ও কুইজ প্রতিযোগিতা—দুই ক্যাটাগরিতে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি পড়ুয়া অন্তত ৪০০ শিক্ষার্থী এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে। খুদে বিজ্ঞানীদের এই মিলনমেলায় আরও থাকছে বিজ্ঞান ম্যাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ আরও অনেক মজার আয়োজন।

‘বিজ্ঞানে বিকাশ’ স্লোগান সামনে রেখে সাতটি বিভাগীয় শহরে হবে আঞ্চলিক উৎসব। সবশেষে জাতীয় পর্বের মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় উৎসবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ীরা।

বিজ্ঞান উৎসবে উৎসবে স্কুলের ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি ক্যাটাগরিতে অংশ নেবে। আর কুইজ প্রতিযোগিতায় থাকবে দুটি ক্যাটাগরি। নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নেবে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আর মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নেবে ৯ম-১০ম শ্রেণি ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। শুধু নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীরা এই দুই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।

বিজ্ঞান উৎসবের যেকোনো খবর জানতে চোখ রাখুন bigganchinta.com-এ, বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞানচিন্তার ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে, প্রথম আলোয় এবং বিজ্ঞানচিন্তার প্রিন্ট সংস্করণে।