রাজশাহীতে জমজমাট ফিজিক্স অলিম্পিয়াড

বেলুন উড়িয়ে সকালে অলিম্পিয়াডের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন অতিথিরা
১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, ৭ম-৮ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, ৯ম-১০ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি।

'আগুন এত গরম কেন?', 'আলোর ভর নেই কিন্তু ভরবেগ থাকে কেন?' 'আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে কোনো ব্ল্যাকহোল থাকলে গ্রহগুলো কি এভাবে নিজ অক্ষের ওপরে ঘুরত?' অদৃশ্য বা ইনভিসিবল কোনো জিনিস কি পৃথিবীতে আছে? শিক্ষার্থীদের এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ঢাকা ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ জাহাঙ্গীর মাসুদ, রাজশাহী কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও রাজশাহী ম্যাথ ক্লাবের সভাপতি মাসুদ রানা।

এর আগে সকাল ৯টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের রাজশাহী আঞ্চলিক পর্ব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। রাজশাহী কলেজ মাঠের সবাই একসঙ্গে গেয়ে ওঠেন 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোভাসি।' এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ জাহাঙ্গীর মাসুদ। বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। ইভেন্টের পতাকা উত্তোলন করেন প্রধান অতিথি রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

সমাবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অলিম্পিয়াড
পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা

উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন রুয়েটের সিইসি বিভাগের অধ্যাপক বসির আহমেদ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কাদির জিলানী, স্থাপকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইকবাল মতিন ও প্রথম আলোর রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ। এ পর্ব উপস্থাপনা করেন বন্ধুসভার ফারুক হোসেন।

উদ্বোধনী পর্বে প্রথম আলোর রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সবাইকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আজ শিক্ষার্থীদের মুখ পলাশ ফুলের মতোই উজ্জ্বল। আশাকরি, রাজশাহী থেকে একাধিক শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ে যাবে এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।

বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের প্রথম থেকেই রাজশাহী বিভাগ থেকে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। অনেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণপদক জিতেছে। আশাকরি তোমরা সেই ধারা বজায় রাখবে। ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন একটু কঠিনই হয়। প্রশ্ন দেখে ভড়কে যাবে না। এটাকে স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে উত্তর করতে পারবে।

রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ভাষার মাসে সবাইকে শুভেচ্ছা। অনেক শিক্ষার্থী কষ্ট করে এই সকালে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের জন্য এসেছ। তোমাদের কষ্ট সার্থক হোক সেই কামনা করি।

পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। চার ক্যাটাগরিতে মোট ১০৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

উদ্বোধন শেষে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন সকাল ৯.৩০টায়। ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট চলে পরীক্ষা। এরপর সকাল ১১.৩০টায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় রাজশাহী কলেজের অডিটোরিয়ামে। শুরুতেই 'ভাব আছে যার গায়, দেখলে তারে চেনা যায়' গানটি পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধু আব্দুল হাকিম। আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে…গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রেয়সী সাহা মেঘা। এরপর মঞ্চে আসেন যাদুশিল্পী মিনহাজুর রহমান যুবরাজ। শুরুতেই ছবির পায়রাকে বাস্তবে পরিণত করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। হাত তালিতে সম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম মুখরিত হয়ে ওঠে। এরপর একে একে টানা ২০ মিনিট জাদু দেখান। কখনো পানিকে পরিণত করেন ছোট ছোট কাগজের টুকরোতে।

এরপর আরও একটি নৃত্য পরিবেশন করেন প্রেয়সী সাহা। নৃত্য শেষে মঞ্চে ওঠেন শিক্ষকরা। তারা শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

প্রশ্ন উত্তর পর্বের শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষন। পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। চার ক্যাটাগরিতে মোট ১০৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। 'এ' ক্যাটাগরির ৮ জন, 'বি' ক্যাটাগরির ২৫ জন, 'সি' ক্যাটাগরির ৫০ জন ও 'ডি' ক্যাটাগরির ২২ জনকে দেওয়া হয় পুরস্কার। মেডাল, সার্টিফিকেট ও টিশার্ট ছিল পুরস্কার হিসাবে।

১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, ৭ম-৮ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, ৯ম-১০ম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে সকালে রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে হাজির হয় শিক্ষার্থীরা
ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ

২০২৩ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। বাছাইপর্বের নির্বাচিতদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা ও যশোর আঞ্চলিক পর্ব। এ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে অফলাইনে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলটিই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসাবে থাকছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসাবে আছে বিডিকম।

দেশের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে ২০১১ সাল থেকেই আয়োজিত হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এবারেও একই উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩।

ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও আঞ্চলিক পর্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে bdpho.org ওয়েবসাইটে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা