চতুর্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পাডের পর্দা নামল

পর্দা নামল চতুর্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সকল আয়োজনের। ২৭ সেপ্টেম্বর ফলাফল ঘোষণা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্বের ইতি টানা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল কবির। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান।

১৬ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর টানা বারোদিনব্যাপী আয়োজিত হয় চতুর্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব। সারা দেশের আঞ্চলিক পর্বে বিজয়ী ১১ শ ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এ পর্বে। মোট পাঁচটি ক্যাটাগরি এবং সিনিয়র ও জুনিয়র গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয় রোবট অলিম্পয়াড—ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি, রোবট ইন মুভি, রোবট গ্যাদারিং, রোবটিক কুইজ এবং রোবটিকস কুইক কুইজ। পাঁচ ক্যাটাগরি থেকে থেকে মোট ৩৯ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এ বছর রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে দেশের প্রত্যন্ত জেলা উপজেলার প্রতিযোগীরা। এটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্মার্ট জাতি তৈরি করতে রোবটিকসকে প্রাধান্য দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, উন্নত বাংলাদেশ তৈরি করা তখনি সম্ভব হবে, যখন আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারব। এক্ষেত্রে রোবট অলিম্পিয়াডের মতো সহযোগী সংগঠনগুলোর সরকারী পর্যায়ে সহযোগিতা প্রয়োজন।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল কবির বলেন, ২০১৮ সালে যে প্রতিযোগিতার শুরু হয়েছিল নামমাত্র কিছু প্রতিযোগী নিয়ে তা আজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা আমাদের ডিজিটাল বিপ্লবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ব্যাপার।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান আরো বৃহৎ পরিসরে রোবট অলিম্পিয়াড আয়োজনের কথা জানিয়ে অলিম্পিয়াডে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান।

সমাপনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ দেওয়ান এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর।

চতুর্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক পেয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী মিসবাহ উদ্দিন ও উইলিয়াম কেরি একাডেমির শিক্ষার্থী জাইমা যাহিন। একই ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রুপে রৌপ্যপদক পেয়েছে ঢাকার আগা খান স্কুলের শিক্ষার্থী যারিয়া মুসাররাত ও ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে নেভি অ্যাঙ্কারেজ স্কুলের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আয়মান। ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে চ্যালেঞ্জ গ্রুপ থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী রাগিব ইয়াসার ও ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আরেফিন আনোয়ার। এ ক্যাটাগরিতে রৌপ্যপদক পেয়েছে চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল ঢাকার শিক্ষার্থী তাফসীর তাহরীম, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল সিলেটের শিক্ষার্থী রাফিহাত সালেহ ও মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী মাহির তাজওয়ার চৌধুরী এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে আগা খান স্কুলের শিক্ষার্থী যাহরা মাহযারীন ও জাইবা মাহজাবীন।

রোবট ইন মুভি ক্যাটাগরিতে চ্যালেঞ্জ গ্রুপ থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছে নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ মীর উমাইমা হক ও প্রপা হালদার, রৌপ্যপদক পেয়েছে সানবিমসের শিক্ষার্থী নাশীতাত যাইনাহ রহমান ও চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল ঢাকার কাজী মোস্তাহিদ এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী রাগিব ইয়াসার ও ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আরেফিন আনোয়ার। একই ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রুপে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী মিসবাহ উদ্দিন ও উইলিয়াম কেরি একাডেমির শিক্ষার্থী জাইমা যাহিন।

রোবট গ্যাদারিং প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ গ্রুপে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে নোয়াখালীর ছিলোনিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম ও অনারেবল মেনশন পেয়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আনজুম।

রোবটিক কুইজ প্রতিযোগিতায় জুনিয়র গ্রুপে যথাক্রমে স্বর্ণপদক পেয়েছে ঢাকার ডিপিএস এসটিএস স্কুলের শিক্ষার্থী মো. ফাইয়াজ সিদ্দিকী, রৌপ্যপদক পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. ত্ব-সীন ইলাহি এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে ভেলাতৈড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শফিউজ্জামান। একই ক্যাটাগরিতে চ্যালেঞ্জ গ্রুপ স্বর্ণপদক পেয়েছে ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী মো. আশরাফুজ্জামান ফুয়াদ, রৌপ্যপদক পেয়েছে দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান এবং যৌথভাবে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ময়মনসিংহের আব্দুল খালেক মোকসুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাইসুল আলম ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আবরার।

রোবটিকস কুইক কুইজ প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ গ্রুপে স্বর্ণপদক পেয়েছে সিলেট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মাজেদুল ইসলাম, সিলেট সরকারি টেকনিকাল কলেজের তানজিম আহমেদ ও দনিয়া কলেজের আতিকুর রহমান। একই ক্যাটাগরিতে রৌপ্যপদক পেয়েছে ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী ফাহিম মোশারফ ও রাইয়ান হক এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে সামিট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. নিয়ামুল মোর্শেদ ও খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফাহিমুজ্জামান। রোবটিকস কুইক কুইজ প্রতিযোগিতায় জুনিয়র গ্রুপে রৌপ্যপদক পেয়েছে বরিশাল জেলা স্কুলের শিক্ষার্থী মো. সামিন মুসতাকিম ও ফরিদপুরের পুলিশ লাইনস হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আহনাফ সাদিক আল সায়েম এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিভা সরকার ও সাফিনা নাফসি।

জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে পরে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে। সেখান থেকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২৩তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

উল্লেখ্য, চতুর্থ বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২১-এর আয়োজক বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস এন্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। বাস্তবায়ন সহযোগী বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সহযোগিতায় বাংলাদেশ ফ্লায়িং ল্যাবস, মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব), কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড, ইএমকে সেন্টার, আম্বার আইটি এবং এসএসএলকমার্জ।