কেন আমাদের চুল দরকার?
ঘন কালো রেশমি চুল কি শুধুই সৌন্দর্যের প্রতীক? নাকি এর পেছনে আছে কোনো জৈবিক প্রয়োজন? আদিমকালে মানুষের গায়ে ঘন চুল ছিল। মানুষ যত বুদ্ধিমান হলো গায়ের ঘন চুল চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াল। গরমে গায়ের বড় বড় লোম হয়ে উঠল যন্ত্রণার বিষয়। সময়ের সঙ্গে কমতে শুরু করল মাথার চুল বাদে গায়ের অন্য অংশের লোমের ঘনত্ব। এসব লোমে বাসা বাঁধা পরজীবী প্রাণীর উৎপাতও কমে গেল। তাহলে আর মাথায় চুল রাখা কেন? এটার অবশ্য গুরুত্ব আছে। দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি মাথার ওপরই সরাসরি পড়ে। তাই মাথার চুল মানুষকে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচিয়ে দেয়। প্রচণ্ড গরমে অ্যাপোক্রিন ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম বেরিয়ে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ও শীতল থাকে। এসব ঘর্মগ্রন্থি থেকে আবার ফেরোমনও নিঃসৃত হয়। লোম বা চুলের আশপাশের ঘর্মগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ফেরোমন আটকা পড়ে আর বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে।
অন্যান্য প্রাইমেট দলের সদস্যদের মতো মানুষের শরীরে অত লোম না থাকলেও লোমকূপের সংখ্যা কিন্তু অন্য সদস্যদের সমান। অর্থাৎ লোম গজানোর জন্য লোমকূপ আছে। কিন্তু লোম কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।
ওয়ার উলফ সিনড্রোম
চুলের বৃদ্ধির নির্দিষ্ট একটা সময়সীমা আছে। মাথার চুল যেমন অনেক বড় হয়, অন্যান্য অংশের লোম বা চুল অত বড় হয় না। তবে মাথা ছাড়া অন্যান্য অংশেও চুল অনেক বড় হতে পারে যদি কারও জেনেটিক রোগ থাকে। ওয়ার উলফ সিনড্রোম এমনই এক রোগের নাম। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পুরো শরীর লোমে ঢেকে যেতে পারে, এমনকি মুখমণ্ডলও। এক্স ক্রোমোজোমের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় অতিরিক্ত জিন প্রকাশ হওয়ার কারণে এই রোগ হয়। একেক রোগীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জিনের ধরন একেক রকম হলেও অতিরিক্ত জিনের লোকেশনের কোনো পরিবর্তন হয় না। এই অতিরিক্ত জিনের সমষ্টি চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনদের সক্রিয় করে তোলে।
থাইল্যান্ডের সুপাত্র সুসুফান তাঁর লোমশ মুখশ্রীর জন্য ২০১০ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড জয় করেন।