আমার দেখা সূর্যগ্রহণ

চাঁদের ছায়ায় ঢাকা পড়েছে সূর্য, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ছবি: লেখক

গতকাল (৮ এপ্রিল) পৃথিবী আবারও সাক্ষী হলো সূর্যগ্রহণের মতো একটি সৌরজাগতিক ঘটনার সঙ্গে। সূর্যগ্রহণের দিন-তারিখ-সময় সম্পর্কে ধারণা আগে থেকেই দিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। তাদের হিসেব অনুযায়ী ৮ এপ্রিল, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে আংশিক বা পূর্ণগ্রহণ দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু এই সূর্যগ্রহণ নিয়ে সবার মনে ছিল অন্যরকম জল্পনা-কল্পনা। 

যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে। তবে সেই সময়ে যত মানুষ কিংবা যত জায়গার মানুষ দেখতে পেরেছিল, এবার পেরেছে তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি।

দিনের শুরুটা ছিল আর দশটা দিনের মতোই। ঘুম থেকে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা দিলাম। এভাবেই শুরু। তবে আমার জন্য দিনটি ছিল বিশেষ একটি দিন। শুধু আমার জন্যই না, উত্তর আমেরিকায় অবস্থান করছে, এমন লাখো মানুষের কাছে এটি ছিল বিশেষ দিন। আমি থাকি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরে। এখানে পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা ও গবেষণার কাজ করছি কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে। বিজ্ঞানীদের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ক্লিভল্যান্ড শহর থেকে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাওয়ার কথা। শুধু তা-ই নয়, এটা স্থায়ী হওয়ার কথা প্রায় ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড।

চারদিকে বসন্তের আবহাওয়া আর রঙে ছেয়ে গেছে এই শহর। পথের ধারে হলদে ড্যাফোডিল ফুটে আছে, রাস্তার মোড়ে হঠাৎ দু-একটা চেরি-ব্লসমের শুভ্র রঙিন গাছ দেখা যায়। ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে হলদে কুড়ি এসেছে। অন্যান্য দিন থেকে এ দিন তাপমাত্রাও বেশি, আকাশ ঝলমলে নীল। আগের দুদিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। সূর্যগ্রহণ উপলক্ষ্যে আমাদের আরও একদিন ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তা-ই নয়, প্রায় জেলাতেই যেসব জায়গা থেকে পূর্ণগ্রহণ দেখা যাবে, সেখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ছুটি। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। নারী-পুরুষ, তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে, কোলের ছোট্ট শিশুটিসহ সবাই মিলে রওনা হচ্ছে আগেই নির্ধারণ করে রাখা জায়গায় যাওয়ার জন্য। উদ্দেশ্য একটাই, এই মহেন্দ্রক্ষণ যেন কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সুন্দরভাবে দেখা যায়। আমিও ক্যাম্পাসে ঢুকেই চলে গেলাম লাইব্রেরির পেছনের বিশাল মাঠটায়। লাইব্রেরির সামনে আসা অব্দিও বুঝতে পারিনি ঠিক কেমন হতে চলেছে এই আয়োজন।

আরও পড়ুন

মাঠের কোণায় ঢুকেই তাকিয়ে দেখি চারিধারে সব শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শহর ও বাইরে থেকে আসা নারী-পুরুষ—সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়েছে। রোদ ঝলমলে নীল আকাশের নীচে কেউ কেউ বিছানার চাদর বিছিয়ে, কেউ কেউ ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে পরিবার বা বন্ধুদের সবাই মিলে গল্প করছে, খেলছে, আর খানিক পরপর নিজেদের সূর্যগ্রহণ দেখার চশমা দিয়ে তাকাচ্ছে আকাশের দিকে। কোথাও আছে সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে নানারকম খেলাধুলার আয়োজন। একদিকে কয়েকদল শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে—কেউ কোরিয়ার, কেউ-বা জাপানের, কেউ আবার মেক্সিকোর। মাঠের অন্যদিকে এক কোণায় আমার অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগের বন্ধুরা একটা টেলিস্কোপ বসিয়েছে। তার ভিউফাইন্ডারে দিয়েছে বিশেষ ধরনের কাগজের মলাট, যার ওপর সূর্যের প্রতিবিম্ব এসে পড়ছে। কেউ কেউ কার্ডবোর্ডে পিনহোল তৈরি করেছে। পিনহোল ক্যামেরার মতো ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে আলো এসে প্রতিবিম্ব তৈরি করবে পর্দায়, আর সেখানে দেখা যাবে চাঁদ ও সূর্যের গতি। ওপাশে মাঠের মাঝে আমাদের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক তাঁদের নিজেদের টেলিস্কোপ এনে বসিয়েছেন। পরিবার-পরিজন ছাড়াও পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে নিয়ে দেখছেন, কী হতে চলেছে! তখনও সবে বেলা ১টার মতো বাজে, সূর্যগ্রহণ শুরু হতে আরও একঘণ্টা বাকি।

দৌড়ে চলে গেলাম আমাদের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে আমাদের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ন্যাগি, যিনি বর্তমানে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার গবেষক, তিনি ও তাঁর দল আমাদের গম্বুজাকার বিশাল টেলিস্কোপের পাশে আরও বসিয়েছেন টেলিস্কোপ, অত্যাধুনিক ক্যামেরা; সঙ্গে বিভিন্ন প্রযুক্তি। শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, উত্তর আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এরকম আয়োজন তো করেছেই, সঙ্গে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসাও রেখেছে তাদের গবেষণার জন্য নানা ধরনের আয়োজন।

কিন্তু কী হয় এই সূর্যগ্রহণে, যা দেখার জন্য এত আয়োজন? কেন এখানে এত এত মানুষের ভিড়?

আমাদের সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রহ আবর্তন করছে। এর একটি আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীর উপগ্রহ—চাঁদ—পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, একই সঙ্গে আবর্তন করছে সূর্যকেও। সূর্য একটি নক্ষত্র। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে এর কেন্দ্রে উৎপন্ন হচ্ছে শক্তি। এই শক্তি আলো আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়। তাই সূর্যের নিজের আলো থাকলেও চাঁদের তা নেই। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও চাঁদের এই যে জটিল গতিপথ, তার একটি পর্যায়ে যখন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে, সূর্য চলে যায় চাঁদের পেছনে, সেই ঘটনাকেই বলে সূর্যগ্রহণ। সূর্যের অনেক উত্তাপ ও আলো থাকার ফলে খালি চোখে সূর্যে ঘটে যাওয়া অনেক বৈজ্ঞানিক ঘটনাই আমরা দেখতে পাই না। সূর্যের কেন্দ্রে ঘটতে থাকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া। এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬ লাখ থেকে ১০ লাখ কিলোমিটার দূরে থাকে উত্তপ্ত গ্যাস ও প্লাজমার স্তর, যার তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। একে বলে করোনা (Corona)।(ছবি-১) যখন আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে, তখন সূর্যের আলো কিছুটা স্তিমিত হয়, আর এর চারপাশে তখন এই করোনার দেখা মেলে। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও একটি চমৎকার ঘটনা দেখা যায়। চাঁদ খানিকটা গোলাকার বস্তু, সূর্যও তাই। চাঁদ যখন পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে, তখন সূর্যের আলো চাঁদের ধার ঘেষে প্রতিসরিত হয় এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে প্রতিফলন ও প্রতিসরণের কারণে আমরা বায়ুমণ্ডলের কাছে একটা বিশাল আকৃতির রিং দেখতে পাই। এটাকে বলে হেলো (Halo)। সূর্যের এই করোনা দেখার জন্য এবং এর আগে ঘটে যাওয়া সূর্যগ্রহণের সময়কার করোনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের গবেষণার মেলবন্ধন করার জন্য এরকম পূর্ণ গ্রহণ বিজ্ঞানীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২০১৭ সালে উত্তর আমেরিকায় যে আংশিক সূর্যগ্রহণ হয়, তা থেকে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রকম তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন। তার ভিত্তিতে এবারে ঘটে যাওয়া সূর্যগ্রহণের সময় কীরকম তথ্য পাওয়া সম্ভব, বিজ্ঞানীরা তা আগে থেকেই ধারণা করতে পারেন। এই দুই তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান উন্মোচিত হয় কিংবা পূর্বের জ্ঞানের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল পাওয়া যায়।

ছবি ১: পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ
ছবি: লেখক

এবারের এই সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন গবেষকদল নিজস্ব আয়োজন করেছে নানান তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য, একই ভাবে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও মিলিয়ন ডলার খরচ করে কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প চালু করেছে। শুধু এই সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের করোনা পর্যবেক্ষণ করার জন্য নাসা ও ইউরোপিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা নিজ নিজ মহাকাশযান স্থাপন করে রেখেছে। সেখান থেকে সংগৃহীত তথ্য আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিসীমা আরও প্রসারিত করবে বলেই তাদের ধারণা।

ঠিক বেলা ১টা ৫৭-এর আশপাশে আমি আবার খোলা আকাশের নিচে লাইব্রেরির মাঠে চলে এলাম। পেছনে মাইকে ঘোষণা চলছে—আর দুই মিনিটের মধ্যেই চাঁদ আসতে শুরু করবে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে। সবাই উত্তেজনায় যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। আমরা সবাই সূর্যগ্রহণ দেখার চশমা চোখে দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তেই দেখলাম চাঁদ কীভাবে একটু একটু করে সূর্যের আলো ঢেকে ফেলছে। একটু পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেই পাশ থেকে আমার বন্ধু রাহাত বলে উঠল ‘ওই যে হেলো দেখা যাচ্ছে!’ আমিও ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, আকাশে যেন একটা মুক্তোর মালা ঝুলে আছে।(ছবি-২) কী অসাধারণ এক দৃশ্য! কোনো সিজিআই বা সিমুলেশন নয়, পুরোটাই প্রাকৃতিক। আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ নিয়ে আকাশ কেন নীল হয়, সন্ধ্যার আকাশ কেন রঙিন হয়, তা নিয়ে কত অঙ্ক কষেছি। ঠিক তেমনই একটি বৈজ্ঞানিক প্রায়োগিক উদাহরণ আমার সামনে প্রকট হয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন, এই গ্রহণ হবে। সেটাই হচ্ছে। এই অংশটুকুকে বলে আংশিক গ্রহণ। ঠিক ১টা ৫৯-এ আংশিক গ্রহণ শুরু হয়ে গেল। এখন অপেক্ষার পালা পূর্ণগ্রহণের।

ছবি ২: 'হেলো' দেখা যাচ্ছে
ছবি: লেখক

সবাই যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে, কেউ বাউনোকুলারে ফিল্টার লাগিয়ে, কেউ-বা ক্যামেরার লেন্সে ফিল্টার লাগিয়ে হাতে ধরে অপেক্ষা করছে, কখন বাজবে ৩টা ১৩। ধীরে ধীরে পূর্ণগ্রাস করে ফেললে, মানে চাঁদের ছায়া সূর্যকে গিলে নিলে হবে পূর্ণগ্রহণ।

আপনারা কি কখনও ছোটবেলায় লোডশেডিং হলে অন্ধকার ঘরে মোমবাতি ও কাগজ দিয়ে আলো-ছায়া খেলেছেন? কাগজ চোখের কাছে নিয়ে এলে যেমন অনেকটা অন্ধকার দেখা যেত, তেমনি কাগজ মোমবাতির কাছে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গেলেও দেখা যেত অন্ধকার। ঠিক সেই কাগজের কাজটিই করছে চাঁদ। কিন্তু বিভিন্নবার সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব এবং চাঁদ ও সূর্যের দূরত্বের যে অনুপাত, তা সবসময় সমান থাকে না। এই ভিন্নতার জন্য সূর্যগ্রহণের সময় সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য এবং একে পর্যবেক্ষণ করার সময়কাল ও সংশ্লিষ্ট সবকিছুর পরিবর্তন হয়। তবে এবারের সূর্যগ্রহণের সময়ের অনুপাতগুলো ছিল বিজ্ঞানীদের জন্য আদর্শ। ঠিক কিছুক্ষণ পরে বেলা ৩টা বেজে ১৩ মিনিট হবে। আমরা সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। চারপাশে ধূসর রং ধারণ করেছে। হঠাৎ ঠান্ডা লাগতে শুরু করল আমাদের। তাপমাত্রা প্রায় তিন ডিগ্রি কমে গেছে অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে। চারিধারে কেমন উত্তেজনা। একটু দূরে অবেলায় আর্ট মিউজিয়ামের পাশ থেকে পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে। ঠিক যে মুহূর্তে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে ঢেকে ফেলল, সূর্য ও চাঁদের মাঝের সামান্য বিন্দুসম আলোকীয় ব্যবধান তখন একটা আলোর ছটা; ক্যামেরার ফ্লাশের মতো বিচ্ছুরিত হলো যেন একটা ডায়মন্ড রিং। সূর্যের আলো পুরোপুরি ঢেকে গেল চাঁদের ছায়ায়।

কী রোমহর্ষক মুহূর্ত! সবাই জোরে কড়তালি দিয়ে, শিষ দিয়ে, চিৎকার করে নিজেদের মনের এ আনন্দ প্রকাশ করছে। এই পূর্ণগ্রাসের সময়টুকু খালি চোখেও তাকানো যায় সূর্যের দিকে। আমরা তাকিয়ে রইলাম। সূর্যের ওপরে ডান দিকে, নিচে ডান দিকে, বাঁয়ে মাঝখানে দেখা যাচ্ছিল করোনার গ্যাস ও প্লাজমা থেকে ধেয়ে আবার করোনাতেই মিলে যাওয়া গ্যাস। এই সময়টায় আকাশে সূর্যের ঠিক কাছেই দেখা যাচ্ছিল বুধ গ্রহ। আর খানিকটা দূরে ছিল শুক্র। সূর্যের পূর্ণগ্রহণ হওয়া মাত্রই চারদিকে পুরো অন্ধকার নেমে আসে। এই সময়টায় হঠাৎ তাপমাত্রাও কমে যায় প্রায় চার ডিগ্রি। ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক মা দেখাতে চায় এই দৃশ্য। ভরদুপুরে চারিধারে রাতের মতো অন্ধকার হয়ে আসে, আর আমরা সবাই পূর্ণগ্রহণ দেখে বিমোহিত হতে থাকি।

প্রায় ৩টা ১৬-এর কাছাকাছি সময়ে চাঁদ তার গতিপথ অনুযায়ী সূর্য ও পৃথিবীর মাঝ থেকে সরে যেতে শুরু করে। আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, চারদিকে একটু একটু করে আলো বাড়তে থাকে। ক্রমে ফিরে আসতে থাকে দিনের আলো।

সূর্যগ্রহণের বিভিন্ন দশা
ছবি: সাফ সারওয়ার, পিএইচডি শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

সূর্যগ্রহণ একটি সচরাচর ঘটনা। তবে সর্বশেষ আমেরিকায় সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে। আর ওটা ছিল আংশিক গ্রহণ। এই ক্লিভল্যান্ডে আবারও সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে আনুমানিক আরও ৪২০ বছর পরে। ঠিক এভাবে সময়ের ব্যবধান, চাঁদ-পৃথিবী-সূর্য তাদের নিজেদের মাঝের দূরত্ব—সব মিলে এবারের সূর্যগ্রহণ একটি অনন্য সাধারণ মুহূর্তে পরিণত হয়েছে।

আমি যখন স্কুলে পড়ি ২০০৯ সালে, তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকেও এভাবে সবাই সূর্যগ্রহণ দেখেছিল। তখনকার ঘটনা আমার বিশেষ মনে নেই। তবে এটুকু ঠিক মনে করতে পারি যে চারিধারে মুহূর্তেই অন্ধকার নেমে এসেছিল, ঠিক ভর দুপুরে নেমে এসেছিল রাতের আঁধার।

আজকের এই দৃশ্য, এই মুহূর্তও নিশ্চয়ই সবার কাছে একইরকম স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: পিএইচডি শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র