কলা খেলে কি মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে

কলা আমাদের শরীরের ও স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী একটা ফল। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নতি, ওজন হ্রাস ও উচ্চ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলার ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে এই উপকারী ফলটি তেজস্ক্রিয়। ফলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কলা খেলে উপকারের চেয়ে কি অপকার হবে? মানে বাড়বে মৃত্যুঝুঁকি? আসুন জেনে নিই।

কলায় প্রচুর পটাশিয়াম (K) থাকে। এই পটাশিয়ামের রয়েছে তিনটি আইসোটোপ। পটাশিয়াম-৩৯, পটাশিয়াম-৪০ ও পটাশিয়াম-৪১। এর মধ্যে পটাশিয়াম-৪০ হলো তেজস্ক্রিয়, কারণ এর নিউক্লিয়াস অস্থায়ী। এই আইসোটোপ আমাদের টিস্যুর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু একটা কলায় পটাশিয়াম-৪০ থাকে খুবই কম, যা আমাদের জন্য ক্ষতি করতে পারে না। কারণ এর অর্ধায়ু প্রায় ১২৫ কোটি বছর। অর্থাৎ একটা কলায় যতটুকু পটাশিয়াম-৪০ রয়েছে, তার অর্ধেক ক্ষয় হতে লাগবে ১২৫ কোটি বছর। তাহলে প্রশ্ন হলো, কলা খেলে কি শরীরের ক্ষতি হয়?

আসলে কলা খেয়ে দেহ তেজস্ক্রিয় করা খুব কঠিন। কারণ আমাদের শরীর এমনিতেই তেজস্ক্রিয় থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে সাধারণত ১৪০ গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। এর মধ্যে ১৬ মিলিগ্রাম হলো পটাশিয়াম-৪০। অর্থাৎ আমাদের শরীর এমনিতে একটা কলার চেয়ে ২৮০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়।

আরও পড়ুন
আপনি যদি কলা খেয়ে শরীর তেজস্ক্রিয় করতে চান, তাহলে আপনাকে একসঙ্গে ১ কোটি কলা ক্ষেতে হবে।

গড়পড়তা একটি কলায় এক মাইক্রোসিভার্টের ১০ ভাগের ১ ভাগ বা ০.১ ভাগ বিকিরণ থাকে। শরীরের কোনো অঙ্গের এক্স-রে করালে শরীরে বিকিরণ ঢোকে। একটি বুকের এক্স-রে থেকে ২০ মাইক্রোসিভার্ট বিকিরণ ঢোকে আমাদের শরীরে। তার মানে, বুকের একটি এক্স-রের বিকিরণ ২০০টি কলার বিকিরণের সমান। বুকের সিটি স্ক্যান করালে শরীরে বিকিরণ ঢোকে প্রায় সাত হাজার মাইক্রোসিভার্ট বা সাত মিলিসিভার্ট, অর্থাৎ প্রায় ৭০ হাজার কলার মোট বিকিরণের সমান। মোট কথা, আপনি যদি কলা খেয়ে শরীর তেজস্ক্রিয় করতে চান, তাহলে আপনাকে একসঙ্গে ১ কোটি কলা ক্ষেতে হবে।

সারা জীবনেও আপনি এত কলা খেতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কারণ আপনি যদি গড়ে ৭৫ বছর বাঁচেন, আর এই সময়ের মধ্যে ১ কোটি কলা খেতে হয়, তাহলে দৈনিক আপনাকে প্রায় ২৬৭টি কলা খেতে হবে! তা তো আর সম্ভব নয়। তাই কলা খাওয়ায় কোনো ভয় নেই। তাছাড়া কলার চেয়ে আলু ও মিষ্টি কুমড়ায় আরও বেশি পটাশিয়াম থাকে। কিন্তু এই পটাশিয়ামও আমাদের ক্ষতি করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। বরং প্রতিদিন কলা বা অন্য ফল খেয়ে ১ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের জোগান দেওয়া গেলে, স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই কলা খান, সুস্থ থাকুন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস

প্রদীপ দেব, ট্রাইবোলজি ও কলার খোসা, মাসিক বিজ্ঞানচিন্তা

উইকিপিডিয়া