সময় দেখুন সূর্যঘড়িতে

সূর্যঘড়ি

সূর্যঘড়ি খুব মজার একটা জিনিস। আকাশে সূর্যের অবস্থান কাজে লাগিয়ে সূর্যঘড়ি ব্যবহার করে দিনের বেলায় কয়টা বাজছে, সেটা বের করা যায়। সূর্যঘড়ি মানুষ অনেক প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করে আসছে। প্রাচীন মিসরীয় এবং ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে ছায়াঘড়ি ব্যবহারের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ সালের দিকে মিসরে ব্যবহৃত বেশ বড় আকারের সূর্যঘড়ি উত্তর আফ্রিকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মানুষ সম্ভবত তারও অনেক আগে থেকে ছায়ার দৈর্ঘ্য মেপে তা থেকে সময় বের করার কাজ চালিয়ে আসছে। দিনের বেলায় সূর্য এবং রাতের বেলায় আকাশের চাঁদ আর তারা ব্যবহার করেই মানুষ দিব্যি সময়ের হিসাব রেখেছে। বাংলাদেশে সূর্যঘড়ি দেখতে হলে ঢাকার বলধা গার্ডেনে যেতে হবে। সেখানে বেশ বড়সড় একটি সূর্যঘড়ি রয়েছে।

সূর্যঘড়ি তৈরি করা খুব কঠিন কিছু নয়। নিজে হিসাবনিকাশ করে সূর্যঘড়ি বানাতে গেলে তাতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। আমরা তাই সূর্যঘড়ি বানাতে একটা টেমপ্লেট ব্যবহার করেছি। এটা এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে (shorturl.at/lmCHZ)। এ ধরনের সূর্যঘড়িকে ইকুয়েটরিয়াল সানডায়াল (বাংলায় নিরক্ষীয় সূর্যঘড়ি) বলে। সূর্যঘড়িটির মুখ (সংখ্যাওয়ালা অংশটি) খ-গোলকের নিরক্ষীয় তলের সমান্তরালে থাকে বলে এই নামকরণ। তাহলে শুরু করা যাক।

যা যা প্রয়োজন

সূর্যঘড়ির টেমপ্লেট, A3 আকারের অফসেট কাগজ, বোর্ড পেপার কিংবা শক্ত কাগজ, পেনসিল, ডাবল সাইডেড টেপ, স্কেল, কাচি ও অ্যান্টিকাটার

১ নং ছবি

১। সূর্যঘড়ির টেমপ্লেটটি ডাউনলোড করে A3 কাগজে প্রিন্ট করে নিতে হবে। A3 আকারের কাগজ না পাওয়া গেলেও সমস্যা নেই, সে ক্ষেত্রে A4 আকারের কাগজে প্রিন্ট করলেই হবে। সে ক্ষেত্রে সূর্যঘড়িটি কিছুটা ছোট হবে, এটুকুই পার্থক্য।

এই টেমপ্লেটটি উত্তর গোলার্ধের যেকোনো জায়গার জন্য কাজ করবে। দক্ষিণ গোলার্ধের জন্য এটি কাজ করবে না, আলাদা টেমপ্লেটের প্রয়োজন হবে।

২। বড় বোর্ড পেপার A3 আকারের অফসেট কাগজের সমান করে কেটে নিতে হবে। বোর্ড পেপারের পেছনের অংশে ডাবল সাইডেড টেপ লাগিয়ে নিতে হবে (১ ও ২ নং ছবি)। তারপর A3 কাগজটি বোর্ড পেপারের যে পাশে টেপ লাগানো হয়েছে, তার ওপর ভালোভাবে বসিয়ে দিতে হবে।

২ নং ছবি

৩। টেমপ্লেটে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ‘এখানে কাটুন’ লেখা লাইন বরাবর দুই পাশ থেকে কাঁচি দিয়ে কেটে নিতে হবে (৩ নং ছবি)। তারপর ‘ভাঁজ করুন’ লেখা লাইন বরাবর ৪ নং ছবির মতো কাগজটি ভাঁজ করতে হবে।

৩ নং ছবি
৪ নং ছবি
৫ নং ছবি

৪। ঢাকার অক্ষাংশ হচ্ছে ২৩.৮১ ডিগ্রি। টেমপ্লেটটিতে দেওয়া সবচেয়ে কাছের অক্ষাংশ হচ্ছে ২৫ ডিগ্রি। কাজেই ২৫ ডিগ্রি লেখা লাইন বরাবর টেমপ্লেটটির দুই পাশেই ৬ নং ছবির মতো করে ভাঁজ করে নিতে হবে।

৬ নং ছবি

৫। টেমপ্লেটটির ওপরের অংশে, দুপাশেই যেখানে শেড দেওয়া অংশটুকু শেষ হয়েছে, সে বরাবর স্কেল বসিয়ে অ্যান্টিকাটার দিয়ে অতিরিক্ত সাদা অংশটুকু কেটে ফেলে দিতে হবে (৭ নং ছবি)।

৭ নং ছবি
৮ নং ছবি

৬। টেমপ্লেটে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজে টেপ লাগিয়ে এবং ভাঁজ করে ৮ নং ছবির মতো করে সূর্যঘড়িটি তৈরি করতে হবে। তারপর ঘড়িটির চাঁদার মতো অংশটিতে সকাল ছয়টা এবং সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে যে গোল অংশটি আছে, তাতে পেনসিল দিয়ে ফুটো করতে হবে (৯ নং ছবি)। তারপর পেনসিলটি কাগজের সঙ্গে লম্বভাবে রেখে (৯০ ডিগ্রি কোণে) ফুটো দিয়ে ঢোকাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, পেনসিলের অর্ধেক যাতে কাগজটির এক পাশে এবং বাকি অর্ধেক অন্য পাশে থাকে।

৯ নং ছবি

৭। সূর্যঘড়িটি সম্পূর্ণ তৈরি হলে ১০ নং ছবির মতো দেখাবে।

৮। ঘড়িটি দিয়ে সময় মাপার জন্য দিনের বেলায় যেকোনো সময়ে ঘড়িটিকে সূর্যের আলো ভালোভাবে পড়ে এমন কোনো জায়গায়, যেমন মাটিতে, বাসার ছাদে কিংবা ভূমির সমান্তরাল কোনো জায়গায় রাখতে হবে। তারপর পেনসিলের ছায়া ঘড়িটির চাঁদার মতো অংশটিতে (যেখানে ঘণ্টা অনুযায়ী দাগ কাটা আছে) যে বরাবর পড়বে, সেটিই হচ্ছে তখনকার স্থানীয় সময়।

এই সূর্যঘড়িটি থেকে একেবারে সঠিক সময় পাওয়া যাবে না। কারণ, আমরা ঘড়িটি বানানোর সময় কিন্তু একেবারে সঠিক অক্ষাংশ ব্যবহার করিনি। কাছাকাছি একটা সময় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঘড়িটির সামনের অংশটিতে ছায়া পড়বে কেবল বসন্ত বিষুব থেকে শারদীয় বিষুব পর্যন্ত (২০ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। বছরের বাকি সময় ঘড়িটার কাগজের পেছনের অংশে পেনসিলের ছায়া পড়বে। কাজেই পেছনের অংশেও ঘড়ির দাগকাটা অংশটুকু প্রিন্ট করে লাগিয়ে নিলে ভালো হবে।

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০১৭ সালে সংখ্যায় প্রকাশিত