দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার গল্প। বিজ্ঞানীরা তখন মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ নিয়ে গবেষণায় মেতে উঠেছেন। চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সেই গবেষণার ফসল ম্যাগনেট্রন। এটা একধরনের টিউব, মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ তৈরি করতে পারে। আবিষ্কারের পরপরই তা লাগানো হয় ব্রিটেনের রাডারে। নািসদের যুদ্ধবিমান শনাক্তে দারুণ কাজে দেয় সেই ম্যাগনেট্রন লাগানো রাডার।
পার্সি লিবারন স্পেন্সার। মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোনো এই মার্কিন বিজ্ঞানী একদিন রাডারে ম্যাগনেট্রন লাগাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি একটি ম্যাগনেট্রন বসানো সক্রিয় রাডারের সামনে চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর তিনি লক্ষ করেন, তাঁর পকেটে থাকা ক্যান্ডিবারটি গলে গেছে। তিনি বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। বিশেষ করে খাবারদাবার নিয়ে। ইচ্ছে করেই ভুট্টার দানা রাডারের সামনে রাখেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা উত্তপ্ত হয়ে পরিণত হয় পপকর্নে। সেটাই ছিল মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্রক্রিয়াজাত করা প্রথম খাদ্য। স্পেন্সার কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। এরপর একটি কেটলিতে ডিম রেখে সেই কেটলির একটি পাশ কেটে গর্ত তৈরি করলেন। একটি ম্যাগনেট্রনকে তাক করলেন কেটলির সেই গর্তের দিকে। ম্যাগনেট্রন থেকে তৈরি হওয়া মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ পানিসহ ডিম গরম করতে শুরু করল। তবে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও তখন ঘটে তখন। প্রচণ্ড তাপে ফেটে গিয়ে পড়ে তাঁরই এক সহকর্মীর মুখে।
সতর্ক হয়ে যান স্পেন্সার। সতর্কতা ও নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দেন। একটা ধাতব বাক্স তৈরি করলেন। তার ভেতর বসালেন জেনারেটর। এরপর সেই বাক্সের ভেতরে তিনি লাগিয়ে দিলেন একটা শক্তিশালী ম্যাগনেট্রন। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ধাতব দেয়াল ভেদ করতে পারে না। তাই বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই মাইক্রোয়েভ তরঙ্গের। গোটা ব্যবস্থটা আরও নিরাপদ হয়ে ওঠে। ধাতব বাক্সে আরও কয়েক ধাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। আর এভাবেই স্পেন্সার তৈরি করে ফেলেন মাইক্রোওয়েভ ওভেন।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স ডটকম
*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত