সবাই জানেন, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসে ৩৬৫ দিনে। তবে এর মধ্যে একটু ‘কিন্তু’ আছে। আসলে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর আরেকটু বেশি সময় লাগে। সঠিকভাবে বললে, ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড। হিসেবের সুবিধার্থে এটাকে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ধরা হয়। প্রতি বছর এভাবে ৬ ঘণ্টা করে বেড়ে ৪ বছরে এক দিন অতিরিক্ত হয়। এই দিনটি ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের পরিবর্তে হয় ২৯ দিনে। এর নাম লিপ ইয়ার। চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সাল এরকম একটি লিপ ইয়ার। তাই এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে ২৯ দিনে। লিপ ইয়ার কেন ও কীভাবে হয়, তা আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এই লেখায়। প্রশ্ন হলো, লিপ ইয়ার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
লিপ ইয়ার না হলে প্রতি বছরের বাড়তি প্রায় ৬ ঘণ্টা আমাদের হিসাবে থাকত না। ফলে পরিবর্তন হয়ে যেত ঋতু। কারণ পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপর নির্ভর করেই ঋতু পরিবর্তন হয়। তাই পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করে নিতে হয়। তা না হলে ৬ ঘণ্টা করে বাড়তে বাড়তে এক সময় গ্রীষ্মকালের পরিবর্তে আসবে শীতকাল। এতে কৃষকরা পড়বেন মহাবিপদে। কারণ কৃষকরা যখন ধান রোপন করে অভ্যস্ত, সেই সময়টা যাবে বদলে। যে মাসে শীতকাল হওয়ার কথা, সে মাসে হবে গ্রীষ্মকাল। বসন্ত ঋতুতে গাছে নতুন ফুল না ফুটে ফুটতে পারে শরৎকালে। এরকম সমস্যা যাতে না হয়, তাই প্রয়োজন অনুসারে সব ক্যালেন্ডারই নিজস্ব উপায়ে পরিবর্তন করা হয়।
আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে রমজান হলো ওই ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছর রমজান শুরু হওয়ার কথা ১১ মার্চ। কিন্তু গত বছর রমজান হয়েছিল ২৪ মার্চ।
আরবি ক্যালেন্ডার দেখলে তা বুঝতে পারবেন। এ ক্যালেন্ডার চাঁদের পর্যায়গুলো অনুসরণ করে চলে। কিন্তু বাড়তি কোনো দিন যোগ করে না। ফলে রমজান একই তারিখে হয় না। কারণ এক চন্দ্রবছর হয় ৩৫৫ দিনে। কিন্তু সৌর ক্যালেন্ডার অনুসারে বছর হয় ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে। ফলে ১০ বা ১১ দিন করে চন্দ্রবছর এগিয়ে যায় প্রতি সৌরবছরে।
আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে রমজান হলো ওই ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছর রমজান শুরু হওয়ার কথা ১১ মার্চ। কিন্তু গত বছর রমজান হয়েছিল ২৪ মার্চ। আবার ভবিষ্যতে, যেমন ২০২৫ সালে রমজান হতে পারে ১ মার্চ। ২০২৬ সালে তা শুরু হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (বা একটু আগে-পরে)। অর্থাৎ চন্দ্রমাস বলেই রমজান মাসে এই হেরফের হয়। এটি আরবি ক্যালেন্ডারের জন্য ঠিক আছে। তবে ক্যালেন্ডার অনুসারে ফসল ফলানো, ঋতুর হিসাব রাখা ইত্যাদির জন্য একটু সমস্যার।
তাই প্রতিটি ক্যালেন্ডার নিজস্ব পদ্ধতিতে ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করে। বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে তারিখ দেখি। এ ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরে একবার এক দিন বাড়ানো হয়। সেই দিনটাকেই আমরা লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ নামে চিনি।
লিপ ইয়ার সম্পর্কে আরও জানতে এই লেখাটি পড়ুন: লিপ ইয়ার: কী, কেন, কোথা থেকে এলো