ভূমিকম্পে কী করবেন

আজ ২ ডিসেম্বর, শনিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ ধরনের ভূমিকম্পের সময় আমাদের কী করা উচিত? আবহাওয়াবিদ মো. মমিনুল ইসলামের এ লেখায় জেনে নিন...

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বা প্রেডিকশন খুবই জটিল। আমরা কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকম্প সরাসরি নির্ণয় করতে পারি না। কিন্তু মাইক্রোসিসমিসিটি গবেষণা, ফোকাল ম্যাকানিজম গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাব্য পূর্বাভাস এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, হাই-সিসমিসিটি, লো-সিসমিসিটি নির্ণয় করতে পারি, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জীবন ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি রোধে অত্যন্ত সহায়ক।

ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার প্রয়োজনে সম্ভাব্য ভূমিকম্প মোকাবিলায় নিচের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেওয়া একান্ত প্রয়োজন—

১. জনসচেতনতা বৃদ্ধি

২. ভূমিকম্প মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি

৩. ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্গঠন কর্মসূচি ইত্যাদি

ভূমিকম্পে দালানকোঠার নিচে পড়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। সম্ভাব্য ভূমিকম্পের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। সেজন্য সবাইকে জানাতে হবে, ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় ও পরে কী করা উচিত।

তা ছাড়া ভূমিকম্প কী, কেন হয় ও এর প্রভাব; পরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ না করলে, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড মেনে না চললে কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, সে বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন। নিচে ভূমিকম্পের আগে, পরে ও ভূ-কম্পনের সময় সাধারণের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ভূমিকম্পের আগে

ক. বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন বন্ধ করার নিয়মকানুন পরিবারের সবার জেনে রাখা।

খ. ঘরের ওপরের তাকে ভারী জিনিসপত্র না রাখা, পরিবারের সব সদস্যের জন্য হেলমেট রাখা।

গ. পরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে চলা। ভবনের উচ্চতা ও লোডের হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া, রি-ইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার, পাশের বাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাড়ি নির্মাণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা। গর্ত ও নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ না করা।

ভূমিকম্প চলাকালে

ক. নিজেকে ধীরস্থির ও শান্ত রাখা, বাড়ির বাইরে থাকলে ঘরে প্রবেশ না করা।

খ. একতলা দালান হলে দৌড়ে বাইরে চলে যাওয়া। বহুতল দালানের ভেতরে থাকলে টেবিল বা খাটের নিচে চলে যাওয়া ও কাচের জিনিসের কাছ থেকে দূরে থাকা। লিফট ব্যবহার না করা।

গ. উঁচু দালানের জানালা বা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নামার চেষ্টা না করা। ভূমি ধসে পড়ার সম্ভাবনা আছে এমন উঁচু ভূমি থেকে দূরে থাকা।

ঘ. ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।

ভূমিকম্পের পরে

ক. ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধীরস্থির ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বের হওয়া।

খ. বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইনে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, পরীক্ষা করে নেওয়া ও প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গ. সরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা।

ঘ. উদ্ধারকাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। যোগাযোগব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা।

২. ভূমিকম্প বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের পূর্বপ্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। সে জন্য সম্ভাব্য ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে নিজেকে সেবায় মনোনিবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ সব প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

৩. ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মসূচি নিশ্চিতকরণ। উদ্ধার কর্মসূচির অভাবে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে। পূর্বপ্রস্তুতি, দক্ষ প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক উদ্ধার কর্মকাণ্ডের মূল চাবি। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ বা ওষুধ, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ফায়ার ব্রিগেড, সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চমৎকার সম্পর্ক থাকা জরুরি।

যেহেতু ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একে থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেহেতু ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে ভূমিকম্প-পরবর্তী শক্তিশালী এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব।

লেখক: আবহাওয়াবিদ