নাসার স্পেস লঞ্চিং সিস্টেম

একুশ শতকের চন্দ্রঅভিযান আর্টেমিস। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত এই মিশনের প্রথম নভোযান আর্টেমিস ১ চাঁদের উদ্দেশ্য ছুটবে আজ শনিবার ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২। ২০২৫ সালে আর্টেমিস প্রকল্পের তৃতীয় পর্বে মানুষ আবারও পা রাখবে চাঁদের বুকে। চাঁদ নিয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা এ মিশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তবে এর মূল লক্ষ্য, আগামী দশকে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর নানা প্রতিবন্ধকতার সমাধান খোঁজা। এমনটাই জানিয়েছে নাসা।

আর্টেমিস মিশনের মূল চালিকাশক্তি একটি মেগারকেট, স্পেস লঞ্চিং সিস্টেম। সংক্ষেপে এসএলএস (SLS)। এই মেগারকেট একে একে আর্টেমিস ১ থেকে শুরু করে প্রকল্পের অন্যান্য নভোযানগুলোকে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। নাসার মতে, এটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট।

আর্টেমিস মিশনের ওরিয়ন স্পেসক্র্যাফট, নভোচারী ও প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত হবে এসএলএস। ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহসহ দূর মহাকাশে পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানের জন্য ক্রমান্বয়ে এসএলএসকে আরও উন্নত করা হবে বলে জানিয়েছে নাসা।

এসএলএসের বিভিন্ন অংশ
বিবিসি

এসএলএস বর্তমানে একমাত্র মার্কিন সরকারি মালিকানাধীন রকেট, যেটা সরাসরি চাঁদের কক্ষপথে ওরিয়ন নভোযান ও অন্যান্য মালামাল পাঠাতে সক্ষম। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের তুলনায় চাঁদের কক্ষপথের দূরত্ব প্রায় ১ হাজার গুণ বেশি। সেখানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই মেগারকেট মূল নভোযান ওরিয়নকে নিয়ে ছুটবে ঘন্টায় ২৪ হাজার ৫০০ মাইল বেগে।

স্পেস লঞ্চিং সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়েছে আরএস-২৫ নামের চারটি শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন। এ রকেটের মূল অংশে থাকবে ৭ লাখ ৩৩ হাজার গ্যালন অতি শীতল তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। আরএস-২৫ ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে এই হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। এছাড়া এসএলএসের মূল অংশের দুপাশে থাকবে পাঁচটি অংশে বিভক্ত হতে পারে, এমন দুটি সলিড বুস্টার।

এসএলএসের বিভিন্ন সংস্করণের তুলনামূলক চিত্র

আর্টেমিস-১ মিশনের জন্য ব্যবহৃত হবে ‘এসএলএস ব্লক ১’ সংস্করণের রকেট। এটি ২৭ মেট্রিক টনেরও বেশি ভর পৃথিবী থেকে সাড়ে ৪ লাখ কিলোমিটার দূরে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পারবে। রকেটটির উচ্চতা ৩২২ ফুট। স্থির অবস্থায় এর ভর প্রায় ২৬ লাখ কেজি। উৎক্ষেপণের সময় ত্বরণের জন্য এর ওজন (ভর নয়) প্রায় ৪০ লাখ কেজি ছাড়িয়ে যাবে! অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত রকেট স্যাটার্ন ফাইভের চেয়ে এই ওজন ১৫ শতাংশ বেশি।

রকেটটি অবশ্য এ যাত্রায় কোনো নভোচারীকে বয়ে নেবে না। ওরিয়ন স্পেসস্ক্র্যাফট ও চাঁদের কক্ষপথের জন্য ১০টি কিউবস্যাট নিয়ে যাবে সঙ্গে করে। আর্টেমিস ২ এবং ৩ মিশনে ব্যবহৃত হবে ‘এসএলএস ব্লক ১ ক্রু’ সংস্করণ। এটি প্রায় ৩৮ টন ভর গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। পরবর্তীতে ‘এসএলএস ব্লক ২’ সংস্করণের মাধ্যমে প্রায় ৪৬ টন পর্যন্ত মালামাল চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহে পাঠানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে নাসা।

বলে রাখা প্রয়োজন, মার্কিন সরকারের না হলেও স্পেসএক্স ও ব্লু অরিজিনের মতো বেসরকারী বেশ কিছু কোম্পানিনির্মিত রকেট এ ধরনের দূরপাল্লার মহাকাশযাত্রায় নভোচারী ও ভারী মালামাল বয়ে নিতে পারে বর্তমানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্পেস-এক্সের ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভি রকেট। আর্টেমিস প্রকল্পের কিছু মিশনেও এ ধরনের বেসরকারী রকেট ব্যবহৃত হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।

সূত্র: নাসা।