সম্প্রতি মার্কিন সাময়িকী টাইম ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকা স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম। ১৭ এপ্রিল, বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করেছে টাইম।
তালিকায় উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন এই বাঙালি স্থপতি। তাঁর সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিনে লেখা হয়েছে, ‘সাধারণত স্থপতিদের সঙ্গে পরোপকারের বিষয়টি তেমন উল্লেখ করা হয় না, কিন্তু মেরিনা তাবাশ্যুম এ ক্ষেত্রে অনন্য। তিনি স্থাপত্যচর্চায় এমন রীতি তৈরি করেছেন, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পাশাপাশি আমাদের এই পৃথিবী যে বিপদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অগ্রাধিকার পায়।’
যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ জন্য মেরিনা তাবাশ্যুম এমন এক ধরনের ঘর তৈরি করেছেন, যা সহজেই স্থানান্তর করা যায়, খরচও কম। তিনি সব সময় নতুন ধরনের কিছু করতে চান। কোথাও স্থাপনা করার আগে সেখানকার ভৌগলিক পরিবেশ ও সংস্কৃতি মাথায় রেখে নকশা করেন। এ ব্যাপারে প্রথম আলোর যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো স্থাপনা কোথায় বানাচ্ছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেখানে বানাচ্ছি, সেখানকার ভৌগলিক গঠন, আবহাওয়া, পারিপার্শ্বিকতা, সংস্কৃতি, সেই স্থানের ব্যবহারযোগ্য উপাদান—এই সবকিছু মিলিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর আসে।’
বাংলাদেশের তরুণদের জন্য তার পরামর্শ হলো সময়ের প্রয়োজন বোঝা এবং এর ভিত্তিতে সময়োপযোগী সমাধান বের করা। কারণ, তাঁর মতে, আমরা একটা দৃষ্টান্তমূলক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তাই সময় বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াই উচিত।
টাইম ১০০ তালিকায় স্থান পাওয়ার এটাই তাঁর প্রথম স্বীকৃতি নয়। এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকার দক্ষিণখানের সায়েদাবাদে তাঁর নকশা ও তত্ত্বাবধানে নির্মিত বায়তুর রউফ মসজিদের জন্য পেয়েছেন আগা খান পুরস্কার। ২০১৮ সালে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট জাদুঘর আয়োজিত জামিল প্রাইজ। ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী প্রসপেক্ট তাঁকে বিশ্বের ৫০ জন সেরা চিন্তাবিদের তালিকায় স্থান দিয়েছে।
মেরিনা তাবাশ্যুমের জন্ম ঢাকায়, ১৯৬৮ সালে। বাবা চিকিৎসক। শৈশবে পড়েছেন হলিক্রস বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর এক বছর পর স্থপতি কাশেফ চৌধু্রীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন আরবানা ফার্ম। ২০০৫ সালে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘মেরিনা তাবাশ্যুম আর্কিটেক্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকায় স্বাধীনতা জাদুঘর, এ৫ বাসভবন, ফরিদাবাদের অবকাশ বাড়ি, পানিগ্রাম ইকো রিসোর্ট ও বাংলাদেশ উপকূলবর্তী চরসমূহের খুদি বাড়ি।