মুক্তা কীভাবে তৈরি হয়?

পৃথিবীর প্রায় সব মূল্যবান রত্নের সন্ধান মেলে মাটির নিচে­—হীরা বা চুনি-পান্না—সব। ব্যতিক্রম শুধু মুক্তা। ঝিনুকের মতো মলাস্কা পর্বের প্রাণির গর্ভে তৈরি হয় এই রত্নপাথর। অঙ্গসজ্জার বাহারী গহনা, প্রসাধন সামগ্রী এমনকী ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় মুক্তা। ঠিক কীভাবে ঝিনুকের গর্ভে মুক্তা তৈরি হয়?

অনেকেই মনে করেন, ঝিনুকের ভেতর বালির দানা ঢুকে গেলে সেটা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মুক্তায় পরিণত হয় একটা সময়। আসলে এই ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। ঝিনুকের পেটে মুক্তা তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া জানার জন্য, আগে এর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি কিছুটা বুঝতে হবে। ঝিনুক বাইভালভিয়া শ্রেণির প্রাণি। এর অর্থ, এর খোসল দুই অংশে বিভক্ত। একটি স্থিতিস্থাপক লিগামেন্ট খোলসের দুই অংশকে একসঙ্গে ধরে রাখে। প্রয়োজন অনুসারে এই লিগমেন্টই ঝিনুকের খোসল খোলা এবং বন্ধের কাজ করে। সাধারণত খাদ্য গ্রহণের সময় ঝিনুকের খোলসটি খোলা থাকে।

ঝিনুকের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে ম্যান্টল। ঝিনুকের খাবার থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থগুলো সংশ্লেষ করে বিশেষ একধরণের তরল উৎপন্ন করে এটি। যাকে ন্যাক্রে (Nacre) বলা হয়। ন্যাক্রের মূল উপাদান, আরাগোনাইট (কার্বোনেট খনিজ) এবং কনচিওলিন (প্রোটিন)। এই ন্যাক্রে থেকেই তৈরি হয় ঝিনুকের খোলস।

ঝিনুকের খোলস খোলা থাকা অবস্থায় কোন খাদ্যকণা, পরজীবি বা অন্য কোনো পদার্থ ঝিনুকের ম্যান্টলের মধ্য আটকা পড়লে মূলত মুক্তা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। আত্মরক্ষার খাতিরে ঝিনুকের ম্যান্টল কাজে লেগে পড়ে। অনাহুত সেই জিনিসকে ন্যাক্রে দিয়ে ঢেকে ফেলে। একসময় আচ্ছাদিত এই বস্তুটি পরিণত হয় মুক্তায়। অর্থাৎ, মুক্তা হচ্ছে ন্যাক্রে দ্বারা আচ্ছাদিত ঝিনুকের জন্য বহিরাগত একটি উপাদানের নাম।

আমরা সাধারণত গোলাকার মুক্তা দেখি। সুন্দর গোলাকার মুক্তা মূল্যবান রত্ন হিসেবে গহনায় ব্যবহৃত হয়। তবে, ঝিনুকের পেটে সব মুক্তা এমন গোলাকৃতির হয় না। অসম আকৃতিরও মুক্তাও তৈরি হয়। এগুলোকে ব্যারোক (Baroque) মুক্তা বলা হয়। সাধারণত প্রসাধন বা ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় ব্যারোক মুক্তা।

সাদা, কালো, ধূসর, লাল, নীল এবং সবুজসহ বিভিন্ন রঙের মুক্তা দেখা যায়। ঝিনুকের খাদ্য উপাদান, এর প্রজাতি এবং পরিবেশের কারণে রঙের এমন তারতম্য হয়। পৃথিবী জুড়েই সবধরনের মুক্তার দেখা মেলে। তবে, কালো রঙের মুক্তা বা ব্ল্যাক পার্ল দেখা যায় শুধু দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।

বর্তমানে বেশিরভাগ মুক্তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এসব ক্ষেত্রে মুক্তাচাষীরা ঝিনুকের ম্যান্টলের ভেতর খাদ্যকণা বা জৈববস্তু ঢুকিয়ে দেয়। এটা পরবর্তীতে মুক্তায় পরিণত হয়। একটি ঝিনুকে এভাবে একাধিক মুক্তা তৈরি করে মুক্তাচাষীরা। মিঠাপানি এবং লোনাপানি উভয় পরিবেশই ঝিনুকে মুক্তা তৈরি হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র : লাইভ সায়েন্স