আপডেট
নতুন যা জানলাম
প্রতিদিন বিজ্ঞানের জগতে ঘটছে নানা ঘটনা। প্রতিমুহূর্তে এগোচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন গবেষণাপত্র, জানা যাচ্ছে নতুন গবেষণার কথা। কিছু বিষয় এত সুদূরপ্রসারী যে এগুলোর প্রভাব বোঝা যাবে আরও অনেক পরে। এরকম নানা বিষয়, নানা ঘটনা দেখে নিন একনজরে, জেনে নিন সংক্ষেপে।
১. সৌরজগতের ৭ গ্রহ একরেখায়
একটি অবিশ্বাস্য দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছি আমরা। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের রাতের আকাশে একটি বিরল ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে রাতের আকাশে শুক্র, শনি, বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহ দেখা যাবে একরেখায়। শুক্র আর শনি আকাশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বৃহস্পতি মাথার ওপরে আর মঙ্গল পূর্ব দিকে থাকবে। তবে ইউরেনাস ও নেপচুনকে স্পষ্ট দেখার জন্য টেলিস্কোপের প্রয়োজন হবে। এই বিরল ঘটনাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘গ্রহদের মিছিল’ বা ‘প্যারেড অব প্ল্যানেট’। আর প্যারেড অব প্ল্যানেট পরিপূর্ণভাবে দেখা যাবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। তখন বুধ গ্রহ বাকি ছয়টি গ্রহের সঙ্গে দেখা যাবে একরেখায়।
২. ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে মহাকাশের বিকিরণ প্রতিরোধ
নভোচারীরা যখন মহাকাশে যান, তখন তাঁদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয় মহাকাশের ক্ষতিকারক বিকিরণ থেকে নিজেদের বাঁচানো। এই বিকিরণ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তবে বিজ্ঞানীরা এমন এক ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার করেছেন যা এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। ব্যাকটেরিয়াটি এত শক্তিশালী যে মহাকাশের ক্ষতিকর বিকিরণও সহ্য করতে পারে। মানুষ যতটুকু বিকিরণ সহ্য করতে পারে, তার চেয়ে ২৮ হাজার গুণ বেশি সহ্য করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া। এই অসাধারণ ক্ষমতার পেছনে রয়েছে এর শরীরে থাকা একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। দীর্ঘদিন গবেষণার পরে বিজ্ঞানীরা এখন জানেন যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি কীভাবে কাজ করে। এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে ভবিষ্যতে মহাকাশে মানুষ বিকিরণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে আশা বিজ্ঞানীদের। এর বৈজ্ঞানিক নাম ডিনোককাস রেডিওডুরানস (Deinococcus radiodurans)। জীববিজ্ঞানীরা এর ডাকনাম দিয়েছেন ‘কোনান দ্য ব্যাকটেরিয়াম’।
৩. মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে শত গুণ বড় দুই পর্বতের সন্ধান
নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভূগর্ভে মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে একশ গুণ লম্বা দুটি বিশাল পর্বতের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর ভূগর্ভে আবিষ্কৃত এই দুটি বিশাল ভূখণ্ড অন্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি গরম এবং অন্তত ৫০ কোটি বছরের পুরানো। এই গবেষণা পৃথিবীর কেন্দ্র ও ম্যান্টল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগের ধারণাকে বদলে দিয়েছে। আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, পৃথিবীর ভেতরের অংশ খুব দ্রুত বেগে চলে। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, পৃথিবীর ভেতরের অংশ আগের ভাবনার মতো অতটা দ্রুত চলে না। এই ভূগর্ভস্থ অঞ্চল আমাদের পায়ের নিচে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার গভীরে এবং প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার উঁচু। নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা ২০ শতকের শেষের দিকে ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে দুটি বিশাল ভূখণ্ডের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন। এই আবিষ্কার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে নেচার জার্নালে।
৪. ফিউশন শক্তি উৎপাদনে চীনের কৃত্রিম সূর্যের নতুন রেকর্ড
চীন আবারও চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। চীনের তৈরি ‘কৃত্রিম সূর্য’ নামে পরিচিত ফিউশন চুল্লিটি শক্তি উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছে। কৃত্রিম সূর্য নিজের আগের রেকর্ড ভেঙে আরও বেশি সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাজমা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। চীনের দাবি, এই অর্জন পারমাণবিক ফিউশন শক্তি উৎপাদনে বড় অর্জন। এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক (ইএএসটি) নামে নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর গত ২০ জানুয়ারি ১ হাজার ৬৬ সেকেন্ড প্লাজমার একটি স্থির ও অত্যন্ত সীমাবদ্ধ লুপ বজায় রেখেছে। এটি সক্ষম হয়েছে প্লাজমার উচ্চ শক্তির চতুর্থ অবস্থাকে ধরে রাখতে, যা আগের ৪০৩ সেকেন্ডের রেকর্ডের দ্বিগুণেরও বেশি সময়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে ভবিষ্যতে ফিউশন শক্তিকে একটি নির্ভরযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
৫. মানুষের ভাবনার গতিসীমা পরিমাপ করেছেন বিজ্ঞানীরা
সম্প্রতি একটি গবেষণায় মানুষের মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের গতি পরিমাপ করা হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের মস্তিষ্ক তুলনামূলক কম দ্রুত কাজ করে। মানুষের মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১০ বিট তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে। এটি কম্পিউটারের তুলনায় অত্যন্ত কম। কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন অপারেশন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা ক্যালটেকের নিউরোবায়োলজির পিএইচডি গবেষক জিয়েও এবং একই প্রতিষ্ঠানের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক মার্কাস মেইস্টার এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিওরোসায়েন্সের আন্তর্জাতিক জার্নাল নিউরন-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, আমরা যখন রুবিকস কিউব সমাধান করি বা ভিডিও গেম খেলি, তখন মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১০ থেকে ১২ বিট তথ্য প্রক্রিয়া করে। তবে নিবন্ধ পড়ার সময় মস্তিষ্কের কাজের গতি কিছুটা বাড়ে।
৬. স্বাদুপানির এক চতুর্থাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে
পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ জীববৈচিত্র্য। এই জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ স্বাদুপানির জীবজগৎ। ভূপৃষ্ঠে মাত্র এক শতাংশ স্বাদুপানি। এই স্বাদুপানির উৎস হলো নদী, হ্রদ, জলাশয়, পুকুর ও খাল-বিল। যদিও পরিমাণে কম তবে এই জায়গাগুলোতে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মাছ এবং এক-তৃতীয়াংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী বাস করে। কোটি কোটি মানুষের খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগায় এই জৈববৈচিত্র্য। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশ্বব্যাপী সমস্যা মোকাবেলায়ও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে এই জৈববৈচিত্র্য বিপন্ন। ২৩ হাজারের বেশি স্বাদুপানির প্রাণীর ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৪ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৫০০ সাল থেকে প্রায় ৮৯টি স্বাদুপানির প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। আরও ১৭৮টি প্রায় বিলুপ্তির পথে। সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
৭. প্রযুক্তি বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে ডিপসিক
চীনের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ডিপসিক। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি জগতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এটি এত শক্তিশালী যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়ার ব্যবসায়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ডিপসিকের কারণে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম কমে গেছে এবং কোম্পানিটি শীর্ষ থেকে নেমে গেছে তিন নাম্বারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই মডেলের পেছনের গবেষক দল জানিয়েছে, ৬০ লাখ ডলারের কম খরচ করে তারা এই এআইকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ওপেনএআই, মেটা এবং আলফাবেট (গুগল)-এর বিপুল অর্থের বিপরীতে এত অল্প খরচে ভালো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে চীন বুঝিয়ে দিল, তারা কোনোভাবেই কম যায় না। আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: ডিপসিক: নতুন চীনা এআই কাঁপিয়ে দিল প্রযুক্তি বিশ্বকে।