শ্রদ্ধাঞ্জলি
সুদূর ভবিষ্যতের দূরদ্রষ্টা
ফ্রিম্যান ডাইসনের লেখা থেকে জামাল নজরুল ইসলামকে চেনা। এই বিজ্ঞানী চিন্তা করতেন মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি নিয়ে, সুদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে। দীপেন ভট্টাচার্যের লেখায় উঠে এসেছে তাঁর জীবন ও কর্ম, সবিস্তারে...
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের কথা আমি প্রথম ফ্রিম্যান ডাইসনের লেখা পড়েই জানতে পারি। পিএইচডি শেষ করে আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে বসে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত গামা দুরবিনের ডেটাতে নিকটবর্তী গ্যালাক্সিগুলো থেকে নির্গত গামা রশ্মির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করছি। সালটা ছিল ১৯৯০। মহাবিশ্বের সুদূর ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে জামাল নজরুল ইসলাম গুরুত্বসহকারে ভেবেছিলেন, ডাইসনকে তা অনুপ্রাণিত করে। খুব কম বিজ্ঞানীই তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে মাথা ঘামাতেন। পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ পাল্টে যায় ১৯৯৮ সালে, যখন আবিষ্কৃত হলো যে মহাবিশ্বের প্রসারণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। তারপর থেকে মহাবিশ্বের সুদূর ভবিষ্যৎ কসমোলজিস্টদের কাছে একটা আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠল।
তাঁর সঙ্গে মাত্র একবারই সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল আমার। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সভা শেষে উঠে গিয়ে আলাপ করেছিলাম। ক্যালিফোর্নিয়ায় রিভারসাইডে কাজ করি শুনে বলেছিলেন, অনতিদূরে প্যাসাডেনার ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে কাজ করতেন তিনি। দুটো কথার মধ্যেই তাঁর বিনম্রতা সম্পর্কে সচেতন হয়েছিলাম। এরপর আর তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। আমার কাজ পরীক্ষামূলক গামা রশ্মি নিয়ে, জ্যোতির্বিদ্যায় যার পরিসর ছিল ক্ষুদ্র, তার সঙ্গে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কোনো আপাতসম্পর্ক ছিল না। পরে আপেক্ষিকতা এবং মহাবিশ্ব তত্ত্ব বা কসমোলজি নিয়ে আমার অপেশাদার আগ্রহ বাড়লেও তিনি চট্টগ্রামে থাকার ফলে আর দেখা হয়নি। তাই তাঁর ব্যক্তিগত সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে তিনি যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, সেটাও ভাবিনি। অধ্যাপক ইসলামের চিন্তার পরিধি ছিল বিশাল। ৫০ বছরের ফলপ্রসূ বৈজ্ঞানিক জীবনে তিনি কঠিন সব বৈজ্ঞানিক ধারার ওপর কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব, আপেক্ষিকতার সূত্র, নক্ষত্রের গঠন, মহাবিশ্ব তত্ত্ব। তাঁর বিজ্ঞান ট্রেনিং ছিল ধ্রুপদী। ষাটের দশকে ক্যামব্রিজে তিনি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার তালিম নিয়েছেন স্বয়ং পল ডিরাকের কাছ থেকে, কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব (ফিল্ড থিওরি) পড়েছেন জন পলকিংহর্নের কাছে। নোবেল বিজয়ী পল ডিরাক ছিলেন হাইজেনবার্গ-শ্রোডিঙ্গার–পরবর্তী আধুনিক কোয়ান্টামবিদ্যার জনক, আর আবদুস সালামের ছাত্র পলকিংহর্ন কোয়ার্ক তত্ত্বে বিশেষ অবদান রাখেন। তখনকার দিনে ইউরোপের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রবন্ধ জমা দেওয়া হতো কোনো প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী মারফত। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে পত্রিকার সম্পাদকেরা প্রবন্ধ প্রত্যাখ্যান করার ভার থেকে নিজেদের অনেকখানি মুক্ত রাখতেন। জামাল ইসলামের প্রবন্ধ জমা দিয়েছেন ফ্রেড হয়েল, স্টিফেন হকিং, মার্টিন রিজের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা।
তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদ্যা
অধ্যাপক ইসলাম আমাদের কাছে আপেক্ষিকতাবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর বৈজ্ঞানিক জীবনের শুরু হয়েছিল কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বে। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান বিভিন্ন মৌল কণার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার পদ্ধতি মাপতে এক ধরনের চিত্রের উদ্ভাবন করেছিলেন, যাকে আমরা এখন বলি ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম। জামাল ইসলাম ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এই সময়ে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের পুনর্জাগরণ হয় এবং ইয়াং-মিলসের তত্ত্ব প্রকৃতিতে সবল মিথস্ক্রিয়ার (Strong force) অস্তিত্ব নির্ধারণে সাহায্য করে। এই ফাইনম্যান ডায়াগ্রামে বিভিন্ন ক্ষুদ্র মৌলিক কণা কতখানি তীব্রতা নিয়ে অংশগ্রহণ করবে, সেটা নিয়ে সোভিয়েত বিজ্ঞানী নোবেল বিজয়ী লেভ লান্ডাউ ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্যানলি মান্ডেলস্ট্যাম কিছু কৌশলের উদ্ভাবন করেছিলেন, জামাল ইসলাম সেই কৌশলগুলোর বৈশিষ্ট্যের ওপর কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
১৯৬৪ সালে জামাল নজরুল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। আমার ধারণা, জামাল নজরুল ইসলাম হয়তো পরবর্তী সময়ে এই ধরনের তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদ্যা বা কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের ওপরই কাজ করতেন, যদি না বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল ও তাঁর ছাত্র জয়ন্ত নারলিকরের সান্নিধ্যে আসতেন। তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ক্যামব্রিজের ইনস্টিটিউট থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে কাজ করেছেন, যার পরিচালক ছিলেন ফ্রেড হয়েল।
কনফরমাল মহাকর্ষ তত্ত্ব
ষাটের দশকের শেষে জামাল ইসলাম বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লেখেন হয়েল ও নারলিকারের নতুন কনফরমাল মহাকর্ষ তত্ত্বের ওপর। কনফরমাল তত্ত্বে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার সূত্রগুলোকে রেখে একটা বাড়তি জিনিস ঢোকানো হয়েছে। জিনিসটা হলো বিখ্যাত অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আর্নস্ট মাখের তত্ত্ব—যেকোনো বস্তুর ভর বা জড়ত্ব সমগ্র মহাবিশ্বের বস্তুর অস্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। অন্যভাবে বললে, স্থানীয় প্রাকৃতিক নিয়মাবলি মহাবিশ্বের বৃহৎ গঠনের ওপর নির্ভরশীল। এই মাখীয় তত্ত্বের অবতারণার একটা ফলাফল হচ্ছে মহাকর্ষ বলের মধ্যে যে G ধ্রুবকটিকে পাওয়া যায়, সময়ের সঙ্গে সেই ধ্রুবকটির পরিবর্তন হয়। যেহেতু G-এর মানের ওপর মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার তীব্রতা নির্ভর করে, সেহেতু সময়ের সঙ্গে মহাকর্ষীয় বলের মানের পরিবর্তন হবে। তবে এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ব্যাপারটার মীমাংসা করি যায়নি।
সাধারণ আপেক্ষিকতার আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সূত্র
সত্তরের দশকে তাঁর গবেষণায় আবার পরিবর্তন দেখা গেল। এবার তিনি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সাধারণ আপেক্ষিকতার আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সূত্র সমাধানে কৌতূহলী হলেন। আপেক্ষিকতা তত্ত্বে আইনস্টাইনের সমীকরণগুলোর সঙ্গে একটা বিদ্যুচ্চুম্বক ক্ষেত্র (বা ক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত টেনসর) জুড়ে দিলে সেগুলোকে আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ বলে। সাধারণ আপেক্ষিকতার বিচারে ঘূর্ণমান ধূলিকণার (বা ঘূর্ণমান সিস্টেম) ওপর পরপর পাঁচটি মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখলেন।
এই দশকে (১৯৭০-এর) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক), লন্ডনে কিংস কলেজ, কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর লন্ডনের সিটি কলেজে। ১৯৭৬ সালে তাঁর প্রবন্ধ আ ক্লাস অব অ্যাপ্রোক্সিমেট রোটেটিং সল্যুশন অব আইনস্টাইন ইকুয়েশনসে (A class of approximate rotating solutions of Einstein’s Equations) তিনটি জায়গার নাম ছিল। ক্যালটেক, সিয়াটলের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ও লন্ডনের কিংস কলেজ। ক্যালটেকে তাঁর আমন্ত্রক ছিলেন বিখ্যাত আপেক্ষিকতাবিদ কিপ থর্ন (যিনি ২০১৭ সালে নোবেল পুরস্কার পান মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ওপর কাজের জন্য)। এর মধ্যে কয়েকটা বছর তিনি কাটিয়েছিলেন ফ্রেড হয়েল আর হয়েলের ছাত্র সিংহলী এন সি বিক্রমাসিংহের সঙ্গে গবেষণায় কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিক্রমাসিংহ ও ফ্রেড হয়েল ধূমকেতুর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণ-জীবাণুর আবির্ভাব ঘটেছে বলে এক সাহসী তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন। মহাশূন্য থেকে প্রাণের আগমনের এই প্রক্রিয়াকে প্যানসপারমিয়া (Panspermia) বলা হয়। ফ্রেড হয়েলের আরেক ছাত্র জয়ন্ত নারলিকরও পরবর্তীকালে উচ্চ বায়ুমণ্ডলে বেলুন উড়িয়ে মহাশূন্য থেকে আগত জীবাণু খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন।
যা-ই হোক, নির্দিষ্ট কৌণিক গতিবেগে ঘূর্ণমান ধূলিকণা কি মহাবিশ্বে রয়েছে? জামাল নজরুল এই ব্যাপারে তাঁর প্রবন্ধে লিখলেন, ‘এই অবস্থা জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার জন্য হয়তো ইন্টারেস্টিং হবে না, তবে সাধারণ আপেক্ষিকতার কিছু সূক্ষ্ম জিনিস বুঝতে এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।’ এটা হচ্ছে একজন খাঁটি তাত্ত্বিকের কথা। তবে তিনিও জানতেন, মহাবিশ্বে ঘূর্ণমান বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি আছে, কৃষ্ণবিবরের চারদিকে চ্যাপ্টা চাকতি থেকে আরম্ভ করে ঘূর্ণমান নিউট্রন নক্ষত্রের চারদিকের ক্ষেত্র—এই সব জায়গায় আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সূত্রের সঠিক সমাধান দরকার। তাই ঘূর্ণমান সিস্টেমে আপেক্ষিকতার প্রয়োগে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
সাধারণ আপেক্ষিকতায় ঘূর্ণমান সিস্টেমের ওপর তাঁর শেষ প্রবন্ধটি জমা পড়ে লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে। প্রবন্ধটি জমা দেন স্টিফেন হকিং। এই কাজে জামাল ইসলাম আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সমীকরণের সিলিন্ডার-প্রতিসাম্যযুক্ত একটি যথাযথ সমাধান দেন। মূলত, এই প্রবন্ধ সিরিজই আপেক্ষিকতাবিদ হিসেবে অধ্যাপক জামাল নজরুলকে প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮৫ সালে এই বিষয়ের ওপর তাঁর বই রোটেটিং ফিল্ড ইন জেনারেল রিলেটিভিটি বের হয় ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রেস থেকে।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ
ইতিমধ্যে মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে, দ্য কোয়ার্টারলি জার্নাল অব রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি পত্রিকায়। লেখাটির মুখবন্ধে তিনি মহাবিশ্ব যে সব সময়ই প্রসারিত হতে থাকবে, এ রকম একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারপর বলছেন, আমাদের গ্যালাক্সির সব তারার মৃত্যু আগামী ১০০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে হবে। পরে একটি গ্যালাক্সিপুঞ্জের (গ্যালাক্সি ক্ল্যাস্টার) মধ্যে থাকা সব গ্যালাক্সি তাদের শক্তি মহাকর্ষ তরঙ্গের মাধ্যমে বিকিরণ করে, একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়ে একটা ১০১৪ বা ১০১৫ সৌরীয় ভরের মহাকৃষ্ণবিবর সৃষ্টি করবে। এর জন্য সময় লাগবে ১০৩৪ বছর। আর ১০৪০ বছরে মহাজগতের তাপমাত্রা ১০-২০ কেলভিন বা পরমশূন্য তাপমাত্রার খুব কাছাকাছি থাকবে।
ইদানীং মহাবিশ্বের ত্বরিত প্রসারণ আবিষ্কারের পর এ ধরনের ভাবীকথনের কিছু পরিবর্তন হতে পারে। যেমন মনে করা হচ্ছে, ১০০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে আমাদের স্থানীয় গ্যালাক্সিপুঞ্জ ছাড়া আর সব গ্যালাক্সি দৃশ্যমান দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাবে। তবে স্থানীয় গ্যালাক্সিগুলো, যেমন অ্যান্ড্রোমিডা, আমাদের গ্যালাক্সি, M33 গ্যালাক্সি মিলে একটা বড় গ্যালাক্সি হবে।
জামাল নজরুলের এই লেখা ওই সময়ের বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখকদের খুবই প্রভাবিত করে। তাঁর লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স স্টাডির ফ্রিম্যান ডাইসন লিখলেন ‘টাইম উইদাউট এন্ড: ফিজিকস অ্যান্ড বায়োলজি ইন ওপেন ইউনিভার্স’। ডাইসনের প্রবন্ধটি একটি আশাবাদী লেখা, ভবিষ্যতের অন্ধকার মহাবিশ্বে মানবসভ্যতার অসীম সময়ের অবস্থানের জন্য যা দরকার, তার একটা রূপরেখা। নোবেল বিজয়ী স্টিভেন ওয়েনবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বকে যতই আমাদের বোধগম্য মনে হয়, ততই মনে হয়, এর কোনো অর্থ নেই।’ তাঁর প্রবন্ধে ডাইসন ওয়েনবার্গকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, তাঁর এই অসীম সম্ভাবনাময় মহাবিশ্ব ওয়েনবার্গের নৈরাশ্যের মহাবিশ্ব থেকে একেবারেই ভিন্ন।
১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস বের করল এই বিষয়ে জামাল নজরুলের সর্বজনবোধ্য বই দি আল্টিমেট ফেট অব দি ইউনিভার্স। এখনকার দিনে আমরা খুব সহজেই এই নিয়ে কথা বলতে পারি, কিন্তু আজ থেকে ৩০ বছর আগে এই প্রসঙ্গের অবতারণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ একটা যুগান্তকারী ঘটনা। এই বইয়ের ১১তম অধ্যায়টির নাম হচ্ছে ‘জীবন ও সভ্যতার ভবিষ্যৎ’। আমি এই অধ্যায় থেকে কিছু লাইন বাংলায় তুলে দিচ্ছি।
‘আমাদের গ্যালাক্সিতে মানবসভ্যতা যদি কোনো ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে পায়, তবে সেই কৃষ্ণগহ্বর থেকে পেনরোজ পদ্ধতি ব্যবহার করে শক্তি আহরণ করে সেই সভ্যতা বেঁচে থাকতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের গ্যালাক্সি একটা গতিময় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে (যা কিনা আগামী ১০১২ থেকে ১০২৭ বছর চলবে), যার পরিণতিতে সমগ্র গ্যালাক্সিটিই একটি মাত্র কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে। কিন্তু সেই ভবিষ্যৎ সভ্যতার প্রাণদাত্রী কৃষ্ণগহ্বর কোনো না কোনো দিন আরও দুটি বা তার বেশি তারার সঙ্গে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার (যাকে ৩-বস্তুর মিথস্ক্রিয়া বলে) ফলে গ্যালাক্সির বাইরে উৎক্ষিপ্ত হবে। তখন সভ্যতাকে সেই কৃষ্ণগহ্বরকে পরিত্যাগ করে গ্যালাক্সির মধ্যেই আরেকটি কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে বের করতে হবে।’
শ্রদ্ধেয় কামাল ইসলাম তাঁর চিঠিতে আরও লেখেন, লন্ডনে তিনি যখন রাত ১১টায় শুতে যেতেন, তখন দেখতেন, জামাল নজরুল বইপত্রের ওপর ঝুঁকে আছেন, সকাল ৭টায় উঠলে তাঁকে একই অবস্থায় টেবিলে বসা দেখা যেত। জামাল নজরুলের চারজন সতীর্থ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন
মহাজাগতিক ধ্রুবক
অধ্যাপক ইসলাম মহাজাগতিক ধ্রুবক (ল্যামডা-L) নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছিলেন। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, আইনস্টাইন এই ধ্রুবককে তাঁর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সমীকরণে ঢুকিয়েছিলেন মহাবিশ্বকে স্থিতিশীল রাখার জন্য। কিন্তু ১৯২৯ সালে জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল যখন দেখালেন যে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে, তখন আইনস্টাইন এই ধ্রুবককে একটা বিরাট ভুল বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানের ত্বরণশীল মহাবিশ্বতত্ত্বে এই ধ্রুবক একটা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কারণ, মহাবিশ্বের ক্রমে দ্রুতশীল প্রসারণের পেছনে এই ধ্রুবক দিয়ে যে শক্তিকে (ডার্ক এনার্জি) বোঝানো হয়, সেই শক্তিকেই দায়ী মনে করা হচ্ছে।
১৯৮৩ সালে এই নিয়ে জামাল নজরুল একটি খুব চমৎকার প্রবন্ধ লিখলেন, যেখানে তিনি কিছুটা ধ্রুপদী পদ্ধতিতে এই ধ্রুবকের মান নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি দেখালেন, ল্যামডা ধ্রুবকের মান প্রতি বর্গমিটারে ১০-৩৮ -এর কম হবে (ইংরেজিতে একে বলে Upper limit, বাংলায় সর্বোচ্চ সীমা বলা যেতে পারে)। এই মান হয়তো খুব একটা চমকপ্রদ নয়, কারণ তখনকার মহাজাগতিক পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে তিনিই দেখিয়েছিলেন যে এই ধ্রুবকের মান প্রতি বর্গমিটারে ১০-৫০-এর কম হবে। আসলে যে পদ্ধতিতে তিনি এই উচ্চসীমা নির্ধারণ করেছিলেন, সেটাই চমকপ্রদ।
জামাল নজরুল ইসলাম বুধ গ্রহের অনুসূরের পরিবর্তন বা চলন অবলম্বন করে এই সীমা বের করেছিলেন (কোনো গ্রহের সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী বিন্দুকে সেই গ্রহের অনুসূর বলা হয়)। এই বুধ গ্রহের অনুসূর চলনকে তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পেরেই আইনস্টাইন নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সঠিক। তাই অধ্যাপক ইসলাম একেবারে মূলে ফিরে গিয়ে দেখাতে চাইলেন, এভাবেও মহাজাগতিক ধ্রুবক গণনা করা সম্ভব। কাজটি করতে স্টিফেন হকিং তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আর প্রবন্ধটি প্রকাশ করার জন্য সম্পাদকের কাছে জমা দেন পরবর্তী সময়ের ব্রিটিশ রাজকীয় জ্যোতির্বিদ মার্টিন রিজ। এখানে বলে রাখি, বর্তমান পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই ধ্রুবকের মান প্রতি বর্গমিটারে ১০-৫২।
অনেক পরে, শূন্য দশকে জামাল নজরুল আবার ফিরে এসেছিলেন মহাজাগতিক ধ্রুবক প্রসঙ্গে ব্রান্স-ডিকি মহাজাগতিক তত্ত্বের আলোকে। আমরা এর আগে হয়েল-নারলিকর কনফরমাল মহাকর্ষ তত্ত্বের কথা উল্লেখ করেছিলাম, যেখানে মাখীয় জড়ত্বীয় বা জাড্য নীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। ব্রান্স-ডিকি হচ্ছে সেই রকম একটি কনফরমাল তত্ত্ব। তত দিনে মহাবিশ্বের ত্বরণে ল্যামডার ভূমিকা বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে, সেই সম্পর্কে অধ্যাপক ইসলাম সচেতন ছিলেন।
১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার স্বাধীনতা পেয়েছিলেন, যেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস। ১৯৮৯ সালে আবদুস সালাম এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রামে কাজ করতে পেরেছেন তাঁর সুপাঠ্য অ্যান ইন্ট্রোডাকশন ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি, ১৯৯২) বইটির ওপর। এখন যেমন কসমোলজির অনেক বই পাওয়া যায়, সেই সময়ে এই বিষয়ে প্রায় কোনো বই–ই ছিল না। কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের ওপরও তিনি বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন তখন।
অধ্যাপক ইসলাম একজন ধ্রুপদী বিজ্ঞানী ছিলেন। নিজে যেমন গুণী ছিলেন, অনেক গুণী বিজ্ঞানীরও সান্নিধ্যে এসেছেন। অনেকেই আবদুস সালাম, সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর, রিচার্ড ফাইনম্যান, স্টিফেন হকিংয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি কাজ করেছেন একা। দু-একটি প্রবন্ধ বাদ দিলে তাঁর কোনো সহলেখক নেই, যদিও প্রতিটি প্রবন্ধ জমা পড়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী দ্বারা। এটি সব সার্থক তাত্ত্বিকেরই একটি বৈশিষ্ট্য। এই উপমহাদেশের আরও দুইজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আবদুস সালাম ও জয়ন্ত নারলিকরের মতো তিনিও একটি তাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে তৃতীয় বিশ্বের গবেষকেরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। যে সময়ে তিনি দেশে ফিরেছেন, সেই সময়ে এখনকার মতো ইন্টারনেট যোগাযোগ ছিল না, তবু কাজে বিরতি দেননি।
ক্যামব্রিজে থাকাকালে অধ্যাপক ইসলাম ফ্রেড হয়েল, জয়ন্ত নারলিকর, বিক্রমাসিংহ প্রমুখের সাহচর্য পান বেশ কিছু বছর। নাইট উপাধিপ্রাপ্ত ফ্রেড হয়েল খুবই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ক্যামব্রিজে ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ১৯৭২ সালে নানা কারণে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন। নক্ষত্রের অভ্যন্তরে পারমাণবিক সংশ্লেষণের ফলে নতুন ভারী মৌলিক পদার্থের সৃষ্টির গণনা তিনি করেছিলেন উইলিয়াম ফাওলারের সঙ্গে। কিন্তু হয়েল ও নারলিকর মহাবিশ্বের সাম্যাবস্থার (স্টেডি স্টেট থিওরি) এক মডেলের প্রস্তাব দেন, যা ছিল বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী। আমরা ‘বিগ ব্যাং’ কথাটা পেয়েছি হয়েলেরই বদৌলতে; তিনি কিছুটা তাচ্ছিল্য করে এই আদি ‘বিস্ফোরণকে’ ‘বিগ ব্যাং’ বলেছিলেন। স্টেডি স্টেট তত্ত্বমতে, মহাবিশ্বের প্রসার আছে, কিন্তু প্রসারিত শূন্যস্থানে ক্রমাগত নতুন বস্তু সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে সময়ের সঙ্গে মহাবিশ্বের চেহারা অপরিবর্তিত থাকছে।
স্টেডি স্টেট তত্ত্বে কোনো ‘বিগ ব্যাং’ নেই এবং বর্তমানের পর্যবেক্ষণ স্টেডি স্টেট তত্ত্বকে সমর্থন করে না।
ক্যামব্রিজ থেকে পদত্যাগ করায় হয়েলের বিজ্ঞান বা রাজনৈতিক মহলে কোনো প্রভাবই থাকল না আর। স্টেডি স্টেট তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান মহল দ্বারা ত্যাজ্য হলেন। ফাওলার নোবেল পেলেন, হয়েল পেলেন না। ক্যামব্রিজের ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে হয়েল যখন পরিচালক ছিলেন, জামাল নজরুল সেখানে কাজ করতেন। তাঁর ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় ফ্রেড হয়েলের প্রতি জামাল নজরুল বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আমার মনে হয়েছিল, হয়েলের সঙ্গে বিজ্ঞান মহলের ঠান্ডা লড়াইয়ের আঁচ কিছুটা হলেও অধ্যাপক নজরুলের গায়ে লেগেছিল, যদিও তিনি কখনোই স্টেডি স্টেট তত্ত্বের লোক ছিলেন না। হয়তো হয়েলের সঙ্গে সাহচর্যের কারণেই অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের মূল্যায়ন পশ্চিমে যতটা হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।
কিন্তু আমার ধারণাটা সঠিক ছিল না। অধ্যাপক জামাল ইসলামের ওপর আমার একটি লেখার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বড় ভাই শ্রদ্ধেয় কামাল ইসলাম আমাকে একটি চিঠি লেখেন। এই ব্যাপারে তাঁর সাহায্য চাইলে কামাল ইসলাম পুনরায় জয়ন্ত নারলিকরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জয়ন্ত নারলিকর উত্তরে লেখেন, সে সময় ব্রিটেনে জামাল নজরুলের কাজ মূলধারার বাইরে ছিল বলে সেটার যথেষ্ট মূল্যায়ন হয়নি, কিন্তু হয়েলের সহযাত্রী হিসেবে তিনি কোনো বৈষম্যের শিকার হননি। বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য আমি কামাল ইসলামের কাছে কৃতজ্ঞ। শ্রদ্ধেয় কামাল ইসলাম তাঁর চিঠিতে আরও লেখেন, লন্ডনে তিনি যখন রাত ১১টায় শুতে যেতেন, তখন দেখতেন, জামাল নজরুল বইপত্রের ওপর ঝুঁকে আছেন, সকাল ৭টায় উঠলে তাঁকে একই অবস্থায় টেবিলে বসা দেখা যেত। জামাল নজরুলের চারজন সতীর্থ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কামাল ইসলাম লিখছেন, অধ্যাপক ইসলামের প্রতিভা তাঁদের কারোর থেকেই কোনো অংশেই কম ছিল না।
আর আমাদের কাছে তাঁর মূল্যায়ন কেমন করে হবে? অধ্যাপক জামাল নজরুল তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে এক ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমার জীবনই আমার বাণী।’
এক সার্থক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীর কর্মজীবন দেখেই তাঁর মূল্যায়ন সম্ভব। ঠাট্টা করে বলা হয়, যাঁরা মৌলিক বিজ্ঞানে কাজ করেন, তাঁরা দারিদ্র্যের ব্রত নিয়েছেন। তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের জন্য পিএইচডি ছাত্র, পোস্ট-ডক বা সিনিয়র গবেষকের মতো ক্ষণস্থায়ী, অনিশ্চিত ও যথাযথ পারিশ্রমিকহীন কর্ম অনেক মানসিক দুশ্চিন্তার উৎস হলেও তাঁরা বিজ্ঞানের জন্য সব আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে থাকেন। যাঁরা এটা করতে পারেন না, তাঁদের জন্য এই পথ নয়। অধ্যাপক জামাল ইসলামের জীবনের দেশ-কালের নকশা আঁকলেই বোঝা যাবে, বিজ্ঞানের জন্য তিনি কতখানি আত্মত্যাগ করেছেন। সেই অর্থে তাঁর জীবনই তাঁর বাণী। তদুপরি তিনি ভবিষ্যতের কথা বলেছেন। সেই দূর ভবিষ্যৎকে নিয়ে যাঁরা ভাবতে পারেন, তাঁরাই বর্তমানের ক্ষুদ্র স্বার্থ ও বোধের ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র বিশ্বকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে পারেন। মহাবিশ্ব ও পৃথিবীকে যে কি ভিন্ন দৃষ্টি দিয়ে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম দেখতেন, সেটা বোঝাতে এই লেখা শেষ করছি দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স বইয়ের আরেকটি প্যারার বাংলা ভাষান্তর দিয়ে।
‘রাতের জীবেরা দিনের আলোকে যেমন আকর্ষণীয় মনে করবে না, তেমনই দূর ভবিষ্যতের অতি শীতল মহাবিশ্বের অজানা সচেতন প্রাণীরা আমাদের উষ্ণ মহাবিশ্বকে হয়তো খুব একটা আরামদায়ক মনে করবে না। তবু তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাওয়া যাবে, যাদের কল্পনাশক্তি প্রখর; তারা অতীতের দিকে, আমাদের মহাবিশ্বের দিকে ফিরে তাকাবে, দেখবে একটা পৃথিবী, যা কিনা সূর্যকরোজ্জ্বল, যেখানে কয়েক কোটি বছরের শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত। তারা ভাববে, সেই পৃথিবী ছিল এক স্বপ্নের জগৎ। কিন্তু তাদের জন্য সেই স্বপ্নের পৃথিবী চলে গেছে, কোনো দিন সে আর ফিরে আসবে না। কিন্তু আজকে এই স্বপ্নের পৃথিবীটা নিয়ে আমরা কী করছি? আমরা একে অপরকে অত্যাচার করছি, একে অপরকে ধ্বংসের জন্য পারমাণবিক মারণাস্ত্র তৈরি করছি, আর পৃথিবীর সম্পদকে অবাধে লুট করছি।’
