দেহের পরমাণু কত বছর আগে তৈরি

ছোট থেকে মানুষ ধীরে ধীরে বড় হয়। জীব মানেই সময়ের সঙ্গে বড় হয় সে। কখনো কি চিন্তা করেছেন, এই বড় হওয়া ব্যাপারটা আসলে কীভাবে ঘটে? বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন, বড় হওয়া মানে আসলে পরমাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। জীব বা জড়—দুটোর ক্ষেত্রেই কথাটি খাটে। জীবের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি মোটামুটি ক্রমবর্ধমান। কারণ, জীব নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করে। শ্বাস নেয়। আর এসব জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরমাণু যোগ হতে থাকে শরীরে।

অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন। মানবদেহের মোট ভরের প্রায় ৯৬ শতাংশ তৈরি এই চারটি মৌল নিয়ে।  গড়পড়তা একজন মানুষের ভরের ৬১ শতাংশ অক্সিজেন পরমাণু। ১০ শতাংশ ভর হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি। তবে আমরা যদি দেহের মোট পরমাণুর সংখ্যার কথা চিন্তা করি, তাহলে সেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুর সংখ্যা হবে প্রায় ৬৩ শতাংশ। কারণ, হাইড্রোজেন প্রকৃতির সবচেয়ে হালকা পরমাণু। এদিক দিয়ে শরীরের মোট পরমাণুর ২৪ শতাংশ হাইড্রোজেন, আর বাকি প্রায় ১২ শতাংশ কার্বন পরমাণু।

কালের আবর্তে এসব পরমাণু ঘুরেছে পৃথিবীময়। উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশ হয়ে গেছে। মারা যাবার পর আবারও মিশে গেছে প্রকৃতিতে। সেখান থেকে আজকে হয়তো আমার বা আপনার শরীরে এসে জমা হয়েছে, যুক্ত হচ্ছে এরকম আরও অনেক পরমাণু প্রতিমুহূর্তে।

আমরা যে পানি পান করি, সেখান থেকে দেহের প্রায় সব হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো আসে। শহরে পানি সরবরাহের উৎস সাধারণত নদী বা নির্দিষ্ট কিছু জলাধার। গবেষণায় দেখা গেছে, এ উৎসের পানিগুলোর অণু মোটামুটি ১০০ বছর আগে পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রে ছিল। ভূগর্ভস্ত পানির ক্ষেত্রে অণুর স্থানাস্তর কিছুটা ধীর গতিতে হয়। সে হিসেবে বলা যায়, ভূগর্ভস্থ পানি পান করা মানে, প্রায় ১ হাজার বছর আগে মাটির নিচে থাকা হাইড্রোজেন মিশে আছে আপনার শরীরে!

জীব নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করে। শ্বাস নেয়। আর এসব জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরমাণু যোগ হতে থাকে শরীরে।

জীবন ধারনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মৌল অক্সিজেন। সাধারণত, বাতাস থেকে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। শরীরে প্রবেশের কয়েক বছর আগে এসব অক্সিজেন পরমাণু থাকতে পারে বিশ্বের যে কোনো জায়গায়। বায়ুমণ্ডল যেহেতু অবিরত গতিশীল, তাই এখানে অণুর স্থানান্তর অনেক দ্রুত হয়।

শরীরের কার্বন ও নাইট্রোজেন পরমাণু আসে মূলত খাবার থেকে। আর বর্তমানের বৈশ্বিক কৃষিব্যবস্থার কল্যাণে খাদ্যশস্যে এসব পরমাণু আসে পৃথিবীর নানা স্থান থেকে।

মোটামুটি ১০ লাখ বছর আগে আমাদের দেহের প্রায় সব পরমাণুই ছিল ভূপৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কিছু ছিল পাথরের মাঝে আটকে। ঝড়, বৃষ্টি, অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প এরকম প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে কালের আবর্তে এসব পরমাণু ঘুরেছে পৃথিবীময়। উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশ হয়ে গেছে। মারা যাবার পর আবারও মিশে গেছে প্রকৃতিতে। সেখান থেকে আজকে হয়তো আমার বা আপনার শরীরে এসে জমা হয়েছে, যুক্ত হচ্ছে এরকম আরও অনেক পরমাণু প্রতিমুহূর্তে। এসব পরমাণু কি চিরকাল পৃথিবীতেই ছিল? উত্তর, না।

পৃথিবী নিজেই তৈরি হয়েছে মহাজাগতিক ধূলিকণা থেকে। পৃথিবী ছাড়াও মহাকাশে আছে হাজারও গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু, গ্রহাণুর মতো মহাজাগতিক বস্তু।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর মহাকাশ থেকে প্রায় ৫ হাজার টন নতুন পদার্থ এসে যোগ হয় পৃথিবীতে। তাই পরিসংখ্যানগতভাবে বলতে গেলে, আমাদের দেহের পরমাণুগুলো শুধু পৃথিবীতেই ছড়িয়ে ছিল না, বরং কোটি কোটি বছর আগে সেগুলো ছড়িয়ে ছিল মহাবিশ্বে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস