সুন্দরবনের অজানা ৭

পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পাশাপাশি ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় পড়েছে এ বন। আয়তন প্রায় ৯ হাজার ৪৫৮ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস। তাই আজকের এই দিনে সুন্দরবন সম্পর্কে ৭টি তথ্য জানা যাক।

১ / ৭

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন

সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের মুকুট ধরে রেখেছে। ম্যানগ্রোভ বন মানে সমুদ্রের উপকূলবর্তী বন। ম্যানগ্রোভ শব্দটি পর্তুগিজ শব্দ ‘ম্যাঙ্গু’ থেকে এসেছে। এর অর্থ বৃক্ষ। আর ইংরেজি শব্দ ‘গ্রোভ’ অর্থ অগভীর, বালুকাময় বা কর্দমাক্ত এলাকায় পাওয়া গাছকে বোঝায়। অর্থাৎ যে বন সমুদ্রের নোনা পানিতে সাময়িক সময় ডুবে থাকে, সেটাই ম্যানগ্রোভ বন। আরও সহজ কথায় বলা যায়, লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৯০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীসহ সাড়ে চারশ প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির ও অজগর সাপ। তবে এ বনের প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসে আয়তন হ্রাস পেয়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দিন যত বয়ে যাচ্ছে, আয়তন তত হ্রাস পাচ্ছে।

২ / ৭

১০২টি দ্বীপের সমাবেশ

সুন্দরবনে মোট ১০২টি দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টিতে মানুষের যাতায়াত থাকলেও বাকি ৪৮টি পুরোপুরি জঙ্গলে ছাওয়া। সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৪০ শতাংশ রয়েছে ভারতে। বাকিটা বাংলাদেশের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় রয়েছে। 

৩ / ৭

সুন্দরবনের অনন্য জোয়ার

সুন্দরবনে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার হয়। পানির স্তর ৬-১০ ফুট বাড়লে মুখ্য জোয়ারের সৃষ্টি হয়। এ সময় চাইলে বনের ভেতরে নৌকা ভ্রমণে বের হওয়া যায়। অনেক সময় বনে প্রাণী গণনার কাজে এ ধরনের জোয়ারের অপেক্ষা করা হয়। বনের ভেতরে নৌকার সাহায্যে গণনা করা হয় বন্য প্রাণী।

৪ / ৭

সুন্দরবনে প্রাচীন মানববসতির সন্ধান

এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো মানববসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে সুন্দরবনে। পাওয়া গেছে হাজার বছর আগে ব্যবহৃত মানুষের বিচিত্র বেশ কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী। প্রথম আলোর তথ্য অনুসারে, ইসমে আজম নামে এক গবেষকের ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে এসব নিদর্শন উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। এটা ২০১৮ সালের ঘটনা। সুন্দরবনের খেজুরদানা, আড়পাঙ্গাশিয়া ও শেখেরটেকে সবচেয়ে বড় স্থাপনাগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। আরও কিছু স্থাপনার খোঁজ মিলেছে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশের খোলপটুয়া নদীতীরে এবং খুলনা অংশের কটকায়। ঢেউয়ের তোড়ে নদীর পাড় ভেঙে মাটির আস্তরণ সরে যাওয়ায় পুরোনো এসব স্থাপনা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এর আগেও সুন্দরবনে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের ১৯৯৮ সালের জরিপ এবং বন বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়ার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে কিছু স্থাপনার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। গবেষকদের ধারণা, এগুলো অন্তত এক হাজার থেকে বারো শ বছরের পুরোনো।

৫ / ৭

সুন্দরবনের বহুল জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ গোসাবা

গোসাবা দ্বীপের অবস্থান ভারতে। সুন্দরবনের এই দ্বীপেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস। বনের মোট আয়তনের প্রায় ৪০ শতাংশ জুড়ে এ দ্বীপ। দ্বীপ শেষ হলেই ঘন জঙ্গল। এ দ্বীপে রয়েছে নিজস্ব হাসপাতাল, সরকারি স্কুল, অফিস ও পঞ্চায়েত। দ্বীপটিতে ৫ হাজারের বেশি মানুষের বাস। 

৬ / ৭

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য সুন্দরবন প্রসিদ্ধ। এটি এই প্রাণীর জন্য সংরক্ষিত অঞ্চল। তাই ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারপরেও বাঘের চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। ২০০৪ সালের এক জরিপ থেকে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘ ছিল মোট ৪৪০টি। ২০১৮ সালের মধ্যে তা কমে দাড়িয়েছে মাত্র ১১৪টিতে। বর্তমানে আবারও চলছে বাঘ গণনা। চলতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ গণনার ফলাফল যানা যাবে। বাঘের সংখ্যা আরও কমেছে নাকি বেড়েছে, তা জানা যাবে তখনই। তবে প্রথম আলোর এক সূত্র বলছে, এ বছর বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে।

৭ / ৭

সুন্দরীগাছের নামে সুন্দরবন!

সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুন্দরী গাছ। এ বনের ছবি দেখলে কিংবা হেলিকপ্টার থেকে সুন্দরবন দেখলে মনে হবে, শুধু গাছ আর গাছ। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে, এ কথা বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করলেও সবাই করে না। অনেকের মতে, ‘সমুদ্র বন’ বা ‘চন্দ্র-বাঁধে’ নামে এক প্রাচীন আদিবাসীর নামে এ বনের নামকরণ করা হয়েছে। সে যাই হোক, এ বনের প্রায় ৭০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরী গাছ।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ডিসকভার ওয়াকস ডট কম, উইকিপিডিয়া