সানগ্লাস কি আসলেই চোখকে সুরক্ষা দেয়
ঝলমলে রোদের দিনে ফ্যাশনের জন্য অনেকেই সানগ্লাস ব্যবহার করেন। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, পছন্দের সানগ্লাসটি কি শুধু স্টাইলের জন্য, নাকি এর পেছনে রয়েছে চোখ সুরক্ষার ব্যাপার। অনেকেই ভাবেন, সানগ্লাস সূর্যের তীব্র আলো থেকে কেবল চোখকে স্বস্তি দেয়। কিন্তু সূর্যের আলোতে এমন কিছু অদৃশ্য রশ্মি আছে যা আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাহলে কি এই সানগ্লাসগুলো সত্যিই আমাদের চোখকে সেসব অদৃশ্য বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে?
সহজভাবে বলতে গেলে, হ্যাঁ। সানগ্লাস সত্যিই চোখকে সুরক্ষা দেয়। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী (UV) রশ্মি থেকে চোখ ও চোখের চারপাশের ত্বক বাঁচানোর জন্য সানগ্লাস খুবই জরুরি। তবে সব সানগ্লাসের সুরক্ষা কিন্তু সমান নয়। সূর্যের এই ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের চোখের ভেতরের ম্যাকুলার নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের চোখের রং হালকা, তাদের জন্য এই ঝুঁকি বেশি। তাই শুধু ফ্যাশনের জন্য না কিনে চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সঠিক সানগ্লাস বেছে নেওয়া জরুরি।
অনেক সময় কেবল ইউভি সুরক্ষা লেখা থাকতে পারে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ, সুরক্ষার মাত্রা কত, তা সেখানে বলা থাকে না। কোনো কোনো সানগ্লাস লেবেলে ‘ইউভি৪০০’ লেখা থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো, সানগ্লাস কীভাবে চোখকে সুরক্ষা দেয়? আসলে সানগ্লাসের লেন্সগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সেগুলোতে বিশেষ ধরনের ইউভি ঠেকিয়ে দিতে পারে। এই ইউভি সুরক্ষা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে চোখে পৌঁছাতে বাধা দেয়। অর্থাৎ, এরাই এই অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিফলিত করে ফিরিয়ে দেয়। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি প্রধানত দুই ধরনের হয়। ইউভিএ (UVA) এবং ইউভিবি (UVB)।
ইউভিএ রশ্মির প্রভাবে ত্বকে ক্যানসার ও অকালবার্ধক্য দেখা দেয়। অন্যদিকে, ইউভিবি রশ্মি আমাদের ত্বক পুড়িয়ে দেয়। একে সানবার্ন বলে। এই দুই ধরনের রশ্মির কম্পাঙ্কই সাধারণ দৃশ্যমান আলোর কম্পাঙ্কের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় আমরা খালি চোখে এদের দেখতে পাই না। এমনকি যদি ছায়ায় দাঁড়িয়েও থাকেন, তবু প্রতিফলিত অতিবেগুনি রশ্মি আপনার চোখ ও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
সানগ্লাসের লেন্স সাধারণত কাঁচ, প্লাস্টিক বা পলি কার্বনেটের মতো মজবুত ও হালকা উপাদান দিয়ে বানানো হয়। এরপর লেন্সের ওপর অতিবেগুনি রশ্মি শোষক একটি বিশেষ পদার্থ বা কোটিং যোগ করা হয়। এই কোটিং একটি অদৃশ্য ঢালের মতো কাজ করে। ফলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি চোখে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। ভালো মানের একটি সানগ্লাসের এসব প্রযুক্তির কারণে প্রায় ৯৯ ভাগ পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি আটকে দিতে পারে, যা চোখের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আপনার সানগ্লাসে আসলেই ইউভি সুরক্ষা আছে কিনা, তা জানার সবচেয়ে সহজ ও নির্ভরযোগ্য উপায় হলো নির্দিষ্ট লেবেল দেখে কেনা। সানগ্লাসের লেবেল দেখবেন স্পষ্ট করে লেখা আছে ‘এটি ইউভিএ (UVA) ও ইউভিবি (UVB) রশ্মির বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত’। অনেক সময় কেবল ইউভি সুরক্ষা লেখা থাকতে পারে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ, সুরক্ষার মাত্রা কত, তা সেখানে বলা থাকে না। কোনো কোনো সানগ্লাস লেবেলে ‘ইউভি৪০০’ লেখা থাকে। এটাও অতিবেগুনি রশ্মিকে চোখে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
গরমকালে রোদের জন্য সানগ্লাস পরলেও সারা বছরই এটি ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ইউভিএ (UVA) ও ইউভিবি (UVB) রশ্মি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি সানগ্লাস আরও অনেক ধরনের সুরক্ষা দেয়।
যদি আপনার কেনা সানগ্লাসটিতে কোনো লেবেল খুঁজে না পান, তাহলে ধরে নেওয়া উচিত যে এটিতে পর্যাপ্ত ইউভি সুরক্ষা নেই। কারণ, এই সুরক্ষা খালি চোখে দেখা যায় না। তাই কেবল স্টাইল বা দাম দেখে সানগ্লাস না কেনাই ভালো। বরং চোখের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই কেনা জরুরি। যাদের কাছে ইতিমধ্যেই সানগ্লাস আছে কিন্তু সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত নন, তারা যেকোনো ভালো অপটিক্যাল শপে গিয়ে তা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
গরমকালে রোদের জন্য সানগ্লাস পরলেও সারা বছরই এটি ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ইউভিএ (UVA) ও ইউভিবি (UVB) রশ্মি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি সানগ্লাস আরও অনেক ধরনের সুরক্ষা দেয়। এটি সরাসরি সূর্যের আলোর কারণে হওয়া মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে পারে। চোখের ওপর চাপ কমায় ও আলোর তীব্র ঝলকানি দূর করে। এছাড়াও, এটি বাতাস, ধুলো ও অন্যান্য ক্ষতিকর জিনিস থেকে চোখকে রক্ষা করে। নিয়মিত সানগ্লাস ব্যবহার ছানি ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো গুরুতর চোখের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এমনকি চোখের চারপাশের সংবেদনশীল ত্বককে ক্যানসার ও অন্যান্য সমস্যা থেকেও বাঁচায় সানগ্লাস।