হাসি মানুষের সার্বজনীন ভাষা। দুঃখ প্রকাশ করতে যেমন চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। তেমনি আনন্দের প্রকাশটা হয় হাসির মাধ্যমে। অনুভূতি প্রকাশের বাইরেও হাসির আলাদা কিছু শক্তি আছে। হাসি সামাজিক বন্ধন শক্ত করে। মানুষকে আশ্বস্ত করে। ভরসা দেয়। আনন্দের সার্বজনীন এক অনুভূতি ছড়িয়ে যায় হাসির মাধ্যমে। আবার হাসি মানুষকে দুঃখও দেয়।
সবাই কমবেশি হাসি আমরা। তবে, ব্যক্তিভেদে হাসির কারণ ও পরিমান কখনো এক হয় না। একসঙ্গে এক পরিস্থিতে থাকলেও কোনো ঘটনায় সবাই সমান হাসেন না। কানাডার ওয়েস্টার্ন ওনটারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানীর (সাইকোলজিস্ট) করা এক গবেষণায় মানুষের রসবোধ ও হাসির রকমফেরের কথা উঠে এসেছে। তাঁদের মতে, মানুষের রসবোধ বা হাসি প্রধানত চার প্রকার। কোনো মানুষ কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু হাসবেন, তা যেমন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তেমনি নির্ভর করে তার সংস্কৃতির ওপরও। অর্থাৎ আমরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে হাসির ভাষায় কথা বলি।
এই চারধরনের হাসির ভাষার একটি হলো, অ্যাফিলিয়েটিভ বা অনুষঙ্গী। আড্ডা গল্পে বা কৌতুক শুনে আমরা যে হাসিটা হাসি তাকে তাকে বলা যায় সংযুক্তির হাসি। কঠিন পরিস্থিতি বা নিজের বোকামির কথা ভেবে অজান্তেই অনেক সময় হেসে উঠি আমরা। অস্বস্তি কাটানোর এই হাসিকে বলা হয় সেলফ-এনহ্যান্সিং বা জড়তা কাটানোর হাসি। আবার নিজের অনুভূতি লুকাতে বা নিজেকে নিয়ে মজা করার সময় সচারচর যে হাসিটা দিই, তার নাম সেলফ ডিফিটিং হাসি। অন্যকে কটাক্ষ, বিব্রত বা বিদ্রুপ করার মাঝে অনেকেই রসবোধ খুঁজে পান। এই রসবোধ থেকে আসা হাসিকে বলা হয় অ্যাগ্রেসিভ বা আক্রমণাত্মক হাসি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের ব্যক্তিত্ব বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহিঃমুখী, তাদের মাঝে অ্যাফিলিয়েটিভ ও সেলফ এনহ্যান্সিং রসবোধ বেশি থাকে। অন্যদিকে রাগী এবং গোটানো স্বভাবের মানুষের মাঝে সেলফ ডিফিটিং এবং অ্যাগ্রেভিস রসবোধ বেশি থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা হাসার বেশি উপকরণ খুঁজে পান।
সাংস্কৃতিক ভিন্নতার ক্ষেত্রে রসবোধের পরিবর্তন কেমন ঘটেও তাও দেখিয়েছেন গবেষকেরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির মানুষের তুলনায় চীনের মতো সমষ্টিবাদী সংস্কৃতির মানুষদের মাঝে আক্রমণাত্মক রসবোধ কিছুটা কম। এর বদলে এ সংস্কৃতির মানুষেরা অনুষঙ্গী হাস্যরস বেশি উপভোগ করেন।
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে মানুষেরা হাসিকে পেশাগত দক্ষতার একটি অংশ মনে করেন। প্রাচ্যে হাসিকে এভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
হাসি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলে। সামান্য এক চিলতে হাসি মানুষকে স্বস্তিবোধ করায়। বলে দেয়, না বলা শত কথা। হাসিখুশি মানুষকেও সবাই পছন্দ করেন। তাই হাসার অভ্যেস থাকাকে ভালো চোখেই দেখেন বিশেষজ্ঞরা।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস