ঘুমের অজানা তথ্য

ঘুমের ঘোরে কথা বলতে শুনেছেন কাউকে? কিংবা কেউ কি আপনাকে বলেছে, ঘুমের ঘোরে নাক ডাকেন? দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়নি, এমন কাউকে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

প্রতিদিন ঘুমাই আমরা। অথচ প্রাত্যাহিক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রহস্য। এর কোনো কোনোটি আমাদের বিব্রত করে, কোনোটি ভয়ও ধরিয়ে দেয়। তবে এ রহস্যগুলো সমাধানের আগে জানা প্রয়োজন ঘুমের নানাদিক নিয়ে।

ব্যক্তিভেদে মানুষের ঘুমের সময় বা দৈর্ঘ্য ভিন্ন হতে পারে। চারটি পর্যায় আছে ঘুমের। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এগুলোকে বলেন এন১, এন২, এন৩ এবং রেম। তবে আমরা বোঝার জন্য সহজ ভাষায় বলতে পারি—হালকা ঘুম ও ভারী ঘুম। এন১ ও এন২ মূলত ঘুমের হালকা পর্যায়। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়টি এন১, একটু গভীর ঘুম এন২। ঘুম আরও গভীর হলে এন৩ পর্যায় শুরু হয়। এই পর্যায় পেরিয়ে গেলে শুরু হয় রেম (REM)। ঘুমের এ পর্যায়ে আমরা স্বপ্নে দেখি।

রেমের পূর্ণরূপ র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট। এ সময় মানুষের চোখের পাতা কাঁপতে থাকে। মানুষ স্বপ্নে দেখে। সেটা হতে পারে দুঃস্বপ্নও। নানারকম দুঃস্বপ্ন দেখি আমরা। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন গভীর রাতে হালকা খাবার খেলেও দুঃস্বপ্ন দেখতে পারেন কেউ। হালকা খাবার খেলে দেহের মেটাবলিজম বা বিপাক বেড়ে যায়। ফলে অনেকে দুঃস্বপ্ন দেখেন। আবার সারাদিন নানারকম দুশ্চিন্তাও ঘুমের ভেতরে ফিরে আসতে পারে দুঃস্বপ্ন হয়ে।

ঘুম কম হওয়াও বাজে স্বপ্ন দেখার একটি কারণ। অতিরিক্ত চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণে অনেকে দুঃস্বপ্ন দেখেন। তা ছাড়া ব্লাড প্রেশার, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা কোনো ধরনের বিপদজনক ঘটনার সম্মুখীন হলেও দুঃস্বপ্ন দেখেন অনেকে।

অনেক রকম দুঃস্বপ্ন দেখি আমরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখি ওপর থেকে পড়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন। শতকরা প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ এ ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখেন। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ দেখেন, তাঁদের কেউ তাড়া করছে। মৃত্যুর স্বপ্ন দেখেন প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়াও হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দুঃস্বপ্ন দেখেন অনেকে, দেখেন দাঁত পড়ে গেছে বা কেউ আক্রমণ করছে ইত্যাদি।

অনেকে আবার ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে পারেন না। এ অবস্থাকে বলে স্লিপ প্যারালাইসিস। আমরা যখন রেম পর্যায়ে প্রবেশ করি, তখন দুটি কেমিক্যাল গ্লাইসিন ও GABA আমাদের মস্তিষ্কের কিছু কোষের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। ফলে পেশি নড়াচড়া করতে পারে না। অনেক সময় এই রেম পর্যায়ে আমরা জেগে উঠি। তখন গ্লাইসিন ও GABA সক্রিয় থাকলে সাময়িভাবে নড়াচড়া ও কথা বলতে পারি না আমরা। আবার ঘুমের এক পর্যায়ে থেকে অন্য পর্যায়ে প্রবেশের সময়ে শরীর অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সাময়িকভাবে। একে স্লিপ প্যারালাইসিস বলে।

আর যাঁরা ঘুমের ঘোরে কথা বলেন, এর পেছনেও রয়েছে গ্লাইসিন ও GABA-এর কারিকুরি। রেম পর্যায়ে আমাদের মুখ ও ভোকাল কর্ডে এ রাসায়নিক দুটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে আমরা স্বপ্নে দেখা কথাগুলোই উচ্চস্বরে বলতে থাকি অনেক সময়। একে মটর ব্রেকথ্রু বলে। তবে এটি ছাড়াও অনেকে কথা বলেন ঘুমের ঘোরে অন্যান্য কারণে। দুশ্চিন্তা, পিটিএসডির মতো বিষয়েও এর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।

ঘুমের ঘোরে হাঁটার বিষয়টি কী? গভীর ঘুমের নন-রেম পর্যায়ে থাকাকালে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময় রেম পর্যায়ে প্রবেশ করে না। বরং সরাসরি জেগে ওঠে। ফলে, আমরা ঘুমের এমন এক পর্যায়ে প্রবেশ করি, যেখানে মস্তিষ্ক কেবল ভৌত কাজগুলো করার মতো জেগে থাকে। এ সময় মানুষ উঠে হাঁটতে পারে, নানা কাজও করতে পারে। এটিই স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমের ঘোরে হাঁটা। 

অনেক তো হলো। শেষ করার আগে সবার জানা উচিত, এমন একটি তথ্য দিই। কোনভাবে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো? সোজা হয়ে ঘুমালে, অর্থাৎ পিঠ নিচে ও মুখ ওপরের দিকে দিয়ে ঘুমালে আমাদের মেরুদণ্ড ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে। এভাবে ঘুমালে ঘাড় ও কোমরের ব্যথা দূর হয়। পাশাপাশি মুখ বালিশে চাপা পড়ার কোনো ভয় থাকে না। কিন্তু এভাবে ঘুমালে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে।

বুকের ওপর ভর দিয়ে ঘুমালে নাক ডাকা কমে। কিন্তু এতে মেরুদণ্ড ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে না। ফলে দেহের বিভিন্ন জোড়ায় চাপ পড়ে। ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হতে পারে এর ফলে। একপাশে কাত হয়ে ঘুমালে মেরুদণ্ড খানিকটা সম্প্রসারিত অবস্থায় থাকে। ঘাড় ও কোমরের ব্যথা দূর হয়। এভাবে ঘুমানো রক্ত সঞ্চালন ও পরিপাকের জন্য ভালো। তবে আপনার জন্য কোনটি ভালো বা কীভাবে ঘুমানো উচিত, সেটা বোঝার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও ঘুমসংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে, যেমন ঘুমের ঘোরে কথা বলা বা হাঁটা, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন দেরি না করে। চিকিৎসকের পরামর্শে এসব সমস্যা থেকে সেরে ওঠা যায় সহজেই।

লেখা: শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ

সূত্র: উইকিপিডিয়া, স্লিপ ফাউন্ডেশন ডট অর্গ