না শুনে কখনো থেমে যাওয়া যাবে না— গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী, অধ্যাপক

এশিয়ান সায়েন্টিস্ট-এর সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। প্লাস্টিক দূষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের জলজ প্রতিবেশ এবং বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় অবদানের জন্য ২০২২ সালে পেয়েছেন ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড। তাঁর মূল লক্ষ্য, বাংলাদেশের জলজ প্রতিবেশ, তথা নদীনালা ও অন্যান্য জলাধারে প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি এবং এ সমস্যা যথাসম্ভব কমিয়ে আনা। কাজ করছেন উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্যও। নানা ধরনের পরিত্যক্ত ও মাছ ধরার নষ্ট জাল থেকে কার্পেট বা এ ধরনের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে তাঁদের সহায়তার পরিকল্পনা করছেন। তাঁর স্বীকৃতিপ্রাপ্তি, গবেষণা, দেশে বিজ্ঞানচর্চাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার ও সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ

ছবি: অপূর্ব রাজীব মালাকার

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: এশিয়ান সায়েন্টিস্ট-এর সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর একজন আপনি। এই স্বীকৃতি পেয়ে কেমন লাগছে?

গাউসিয়া চৌধুরী: আমার জীবনে কষ্ট, স্বীকৃতি—একটার পর একটা ছিলই। এ রকম স্বীকৃতি পেয়ে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার অনেক ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। যে কাজ করছি, তা আরও ভালো ও সুন্দরভাবে করার অনুপ্রেরণা এটি। এমনিতে তো কমিটমেন্ট থাকেই। তারপরও এখন মনে হচ্ছে, আমার কাজটা যেভাবেই হোক আরও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: প্লাস্টিক দূষণ কমানো, জলজ পরিবেশ সুরক্ষা—এগুলো নিয়ে আপনি কাজ করছেন। নারীদের কর্মসংস্থান নিয়েও কাজ করছেন। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা সহজ করে বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের উদ্দেশে বলুন।

গাউসিয়া চৌধুরী: আমি জলজ পরিবেশ ও জলজ বিপন্ন প্রাণীদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছি। ২০১৯ সাল থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রকল্পে কাজ করছি। এটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সবচেয়ে বড় নারী নেতৃত্বাধীন প্রকল্প। উৎস থেকে সাগরে আসা পর্যন্ত ১০টি সাইট থেকে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি, গঙ্গা নদীতে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা কতটুকু। সেটা জানা–বোঝার চেষ্টা করেছি। স্থলপথ ও নদীপথ হয়ে এগুলো কীভাবে সমুদ্রে যাচ্ছে, এটা বুঝতে গিয়ে আমরা এক বর্ষা মৌসুমে মোট তিনটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করেছি। বর্ষার পরে আরেকটি ধাপে আমরা চারটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করেছি। স্থল-গবেষক দল, জল-গবেষক দল, আর্থসামাজিক দলের পাশাপাশি আমরা একটি এডুকেশন টিমও তৈরি করেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি কাজ করার সময়। এর মাধ্যমে আমরা মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছি। অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে এ দূষণের কোনো সম্পর্কে আছে কি না, তা বোঝার চেষ্টা করেছি। গঙ্গা নদীর বাস্তুতন্ত্র বোঝার চেষ্টা করেছি। আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতিদিন গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত প্রবাহে এক থেকে তিন বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিকের টুকরো গিয়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরে। এটা অনেক ভয়াবহ একটি চিত্র।

আমরা কম খরুচে ওপেন সোর্স ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেকটি কাজ করেছি। প্লাস্টিক বোতলের মধ্যে জিপিএস ট্র্যাকার জুড়ে দিয়ে সেলুলার নেটওয়ার্ক ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছি, এর গতিটা কেমন। আমরা দেখেছি, ৯৪ দিনে একটি বোতল ২ হাজার ৮৪৫ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছে। আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি, নদী হয়ে কীভাবে এটা সমুদ্রে যাচ্ছে। আমাদের গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, জেলেদের পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়ায় দূষণ বাড়ছে। তাঁরা যেখানে–সেখানে ছেঁড়া বা নষ্ট জাল ফেলে দেন। আমরা খুঁজে দেখেছি, এ জালের প্রভাবে কোন প্রাণীগুলোর বেশি ক্ষতি হচ্ছে। তাতে দেখেছি, যে প্রাণীগুলো পানিতে থেকেও বাতাসের সাহায্যে বেঁচে থাকে, সেগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১০টি সাইটের মধ্যে বাংলাদেশে ছিল ৩টি, বাকি ৭টি ভারতে। এর মধ্যে বাংলাদেশের একটি সাইটে সবচেয়ে বেশি জালের সংখ্যা পাওয়া গেছে। ফেলে দেওয়া জালের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল চাঁদপুরে।

এ ধারাবাহিকতায় আমরা আবার সেখানকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এবং আমাদের কী করণীয় আছে, তা বোঝাতে চেষ্টা করেছি। তাঁরাও আগ্রহী হয়ে অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন যে আমরা এটা এভাবে করতে পারি। কিছু কিছু ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগের কথাও তাঁরা বলেছেন।

আমাদের সঙ্গে ছিলেন বুশরা নিশাত আপা, তিনি এখন বিশ্বব্যাংকে যুক্ত হয়েছেন। তাঁর চেষ্টায় যুক্তরাজ্যনির্ভর একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা যুক্ত হয়েছি। ওরা আরও পাঁচটি দেশে এ উদ্যোগ পরিচালনা করছে। আসলে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া জাল সংগ্রহ করতে নারী মৎস্যজীবীদের উজ্জীবিত করে ওরা। আমাদের দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ নারীসহ মোট প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মৎস্যজীবী আছেন। তাঁদের অবদান আড়ালেই রয়ে যায়। আমরা তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা দুই ধাপে বেশ ভালোভাবেই হয়েছে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সেটআপ আগে থেকেই ছিল সেখানে। চরফ্যাশন এলাকার নারীরা অবশ্য একটু রক্ষণশীল। সেখানকার নারীরা অতটা কথা বলতে চান না। কিন্তু পরে যখন তাঁরা এই দূষণের মাত্রা সম্পর্কে বুঝেছেন যে এর প্রভাবে আর মাছ ধরার অবস্থা থাকবে না, তখন তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা নিজেরাই বলেছেন যে এখন মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বেশি ওঠে জালে। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান বের করেছি। পরের ধাপে বাইরের সেই সংগঠন জালগুলো নিয়ে যাবে। সেখান থেকে বানানো পণ্য আমাদের পাঠাবে। এখন আমাদের রিপোর্ট রিভিউ হচ্ছে। রিভিউয়ের পর তৃতীয় ধাপে আবারও বিশ্বব্যাংকের সাহায্য এলে আমরা পরবর্তী কাজ শুরু করতে পারব।

এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আমাদের কী কী করণীয়, সেটি নিয়ে এখন কাজ করছি, একটি ফান্ডও পেয়েছি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তিন বছরের জন্য। আমরা সুন্দরবনকে সাইট হিসেবে নিয়েছিলাম। ওখানে দেখেছি মাইক্রোপ্লাস্টিকের ট্রফিক ট্রান্সফার হচ্ছে। ওটা আমরা শেষ করেছি। আমাদের দুটো পেপার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ মাসে আমরা আবার সুন্দরবনে যাচ্ছি। সুন্দরবনের বাছাইকৃত কিছু স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। কিছু মৎসজীবীদের সাথেও আমরা কাজ করছি। তাদের আমরা কিছু যন্ত্র বা মোবাইল দিয়েছি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এর মাধ্যমে ‘ওপেন সোর্স প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে আমরা সুন্দরবনের মাছ, অন্যান্য পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং প্লাস্টিক দূষণ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এখানে একটা বিষয় বলি, স্থানীয়দের যুক্ত করবে যে বিজ্ঞানটা, সিটিজেন সায়েন্স, সেটা নিয়ে আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা একটা অ্যাপ বেজড টুল ডেভেলপ করেছি। জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমের মতোই এটা। আমরা এটার নাম দিয়েছি ‘C4CEM’। মানে সিটিজেন ফর কোস্টাল ইকোসিস্টেম মনিটরিং। ওখানে অনেকগুলো বিষয় আছে, যেখানে জেলেরা তাঁদের পর্যবেক্ষণ থেকে তথ্য দিতে পারেন। এর একটি হলো প্লাস্টিক দূষণ। প্রথম ধাপে আমরা আটজন জেলেকে চিহ্নিত করেছি। তাঁদের আমরা এই টুল বা মোবাইল দিয়েছি, প্রশিক্ষণ দেব। তাঁরা কী মাছ, কতটুকু ওজন এবং কতটুকু প্লাস্টিক পাচ্ছেন, পানির অবস্থা কেমন, অ্যাপে সব অপশন থাকবে, ওতে ক্লিক করলেই হবে।

এ ছাড়া একটা কাজ করছি। যে দূষণ হচ্ছে, সেটা অন্য প্রাণীদের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা বোঝার চেষ্টা করছি। মানুষকে নিয়ে ভাবছি, মাইক্রোপ্লাস্টিক জলজ প্রাণীর কী পরিমাণ ক্ষতি করছে, সেই ক্ষতির মাত্রা ও তা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী
ছবি: অপূর্ব রাজীব মালাকার

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: গবেষণার জন্য আপনাকে প্রচুর ছোটাছুটি করতে হয়। পড়ানোর পাশাপাশি যে এসব গবেষণা করছেন, এটা কতটা পরিশ্রমের বিষয়? দুটি কীভাবে একসঙ্গে করছেন?

গাউসিয়া চৌধুরী: এ জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিবার এবং প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাও এখানে একটা বড় ব্যাপার। দুটি উদাহরণ দিই। আমি কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি করেছি। সেখানকার সুপারভাইজার আমার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রাখেন। ওই সুপারভাইজারের এক শিক্ষার্থী, ইসাবেল ওলার্ড আমার সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা ম্যাক্রোপ্লাস্টিক আর ম্যাক্রোইনভার্টিব্রেট (অমেরুদণ্ডী প্রাণী) যে একসঙ্গে একটা বাস্তুতন্ত্রে আছে, তা বোঝার কাজ করছি। তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ২১ দিনের জন্য। আমরা অনেক প্ল্যান করে সময়টা ঠিক করেছি। প্রায় দেড় বছর পরিকল্পনার পর তিনি এসে বাংলাদেশে কাজ করে গেছেন। আমার চারজন রিসার্চ স্টুডেন্ট আছে এবার। আগের আরও শিক্ষার্থী আছে। তাদের ছুটির সময় বেছে নিতে হয়। আমরা ময়মনসিংহ, ব্রহ্মপুত্র নদ ও ঢাকার বড় বড় নদী ও জলাভূমি নমুনা সংগ্রহ করেছি রমজানে রোজা রেখে। এখন ল্যাবে সেগুলো বিশ্লেষণ করছি। ইচ্ছা ছিল বলেই হয়তো করতে পেরেছি। আমি ল্যাব ও ফিল্ড—দুটোই একসঙ্গে করার চেষ্টা করছি। সব সুযোগ আমার ল্যাবে নেই। তখন আমি অন্য জায়গায় গিয়ে সেই কাজ করি। রোজার ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ওই কাজ করেছি। কাজের প্রয়োজনে যেখানে আমার যাওয়া দরকার, সেখানে আমি নিজেই চলে যাই।

আমার ধারণা, অনেকেই গবেষণা করছেন দেশে। কিন্তু অনেকে হয়তো শুধু ল্যাবে কাজ করেন। আমার কাজের ধরনের জন্য ছোটাছুটিও করতে হয়, এই আরকি।

অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী
ছবি: অপূর্ব রাজীব মালাকার

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি বর্তমানে দেশে বসে বিশ্বমানের গবেষণা করছেন। সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে বসে এ ধরনের গবেষণার সুযোগ কেমন? 

গাউসিয়া চৌধুরী: দেশের জন্য আমাকে অবশ্যই কিছু দিতে হবে। বাংলাদেশে হয়তো অনেক কিছু নেই, কিন্তু যেখানে সুযোগ কম বা সুযোগ নেই, সেখানে আমাদের সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। নেই নেই বললে হবে না। কাজটা কীভাবে করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। নিজের কথা যদি বলি, কাজ শুরুর পর থেকে না–ই শুনেছি বেশি। কিন্তু না শুনে আমার ইচ্ছাশক্তি আরও বেড়ে গেছে। আসলে না-এর পেছনে অনেক সুযোগও তৈরি হয়। না-এর বাধা পেরোনো এবং এসব সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অনেকে অনেক প্যাশন নিয়ে মাত্র পিএইচডি শেষ করেছেন। অনেকে হয়তো মাত্র পিএইচডি করে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের সঙ্গেও কিন্তু আমি কাজ করছি। তাঁদের চিন্তাভাবনা ও আমার চিন্তাভাবনা মিলিয়ে একত্রে বিশ্বমানের গবেষণা করা যায়। এটা অন্যরাও করতে পারবেন এবং অনেকে করছেনও। আমি এবং আমার মতো অনেকে বাইরে পিএইচডি করে সেটা দেশের কাজে ব্যবহার করছেন।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার সঙ্গে আপনার শিক্ষার্থীরা কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহজেই যুক্ত হতে পারছেন আপনার সঙ্গে। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ যুক্ত হতে চাইলে তাঁদের কী রকম প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?

গাউসিয়া চৌধুরী: আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে কাজ করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ এখনো কাজ করেনি। কিন্তু তারপরও যদি কেউ আগ্রহী হয়ে আসে এবং সে ওই ব্যাপারে দক্ষ হয়, তাহলে আমি তাকে অবশ্যই নেব। এখন আমার সঙ্গে মোট ৮–৯ জন কাজ করছে। তারা সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের না। সিরাজগঞ্জের একটি মেয়ে, সে সাত কলেজেরও না, কিন্তু অনেক দক্ষ, আমার সঙ্গে কাজ করছে। এরকম দক্ষ কেউ আসলে আমি নেব না কেন? সে রকম প্রকল্প যদি আমার কাছে থাকে, তাহলে আসতে পারবে।

এ ধরনের গবেষণায় আসতে হলে ছেলেমেয়েদের বেশি পড়া উচিত। পাঠ্যবই বা পেপার, মানে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। ক্লাসের পড়াগুলো অন্তত ঠিকভাবে শেষ করতে হবে। লেখালেখি ও কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে। সবাইকে সরাসরি আমি নিতে না পারলেও আমাদের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু সে জন্য তাকে সে রকম দক্ষ হতে হবে।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার বেশির ভাগ পাঠক কিশোর ও তরুণ। তাদের জন্য কিছু বলুন।

গাউসিয়া চৌধুরী: কিশোরদের জন্য বলব, তাদের প্রথমে একটি বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। তাহলে স্বপ্নটাই তাকে পথ দেখাবে। ছোট ছোট পদক্ষেপে এগোনো যাবে। আমার বাবা বলতেন, স্বপ্ন দেখতে হয় আকাশছোঁয়া, তাহলে অন্তত সাততলা পর্যন্ত তুমি উঠতে পারবে। তোমার স্বপ্ন গড়ার কারিগর তুমি নিজে। তুমি নিজেই তোমার স্বপ্নের রূপ দেবে। সুতরাং নিজেকে সেভাবে তৈরি করো। না শুনে কখনো থেমে যাওয়া যাবে না। তাহলে সেখানেই আমাদের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটবে। যা–ই হোক না কেন, আমাদের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে হবে। তাহলে আমরা সফল হতে পারব।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

গাউসিয়া চৌধুরী: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

অনুলিখন: কাজী আকাশ