শতবর্ষ ধরে চলা বিজ্ঞান গবেষণা

অধ্যাপক বিলের সেই বোতলডেরিক এল. টার্নার
দলের প্রধান ড. টেলেভিস্ক স্থপতিদের নীলনকশার মতো দেখতে একটা মানচিত্রের কপি মেলে ধরলেন। সেটা ঘিরে দাঁড়ালেন সবাই। এই মানচিত্রই তাঁদের পৌঁছে দেবে মাটিতে পুঁতে রাখা বালু ও অনেক পুরোনো কিছু বীজভর্তি একটা বোতলের কাছে, একজন উদ্ভিদবিদের কাছে যা রীতিমতো গুপ্তধন।

বৃহস্পতিবারের এক শীতল সকাল। সূর্য উঠতে এখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি। মার্জরি ওয়েবার এবং আরও তিনজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এসে জড়ো হয়েছেন। পায়ের নিচে বিক্ষিপ্ত তুষার; তাঁরা দুহাতের মধ্যে ফুঁ দিয়ে শীত তাড়াতে ব্যস্ত। এরই মধ্যে দলের পঞ্চম সদস্য ফ্র্যাঙ্ক টেলেভিস্ক, ড. ওয়েবারের ভাষ্যমতে, বেলচা কাঁধে অন্ধকারের মধ্য থেকে উদয় হলেন।

দলের প্রধান ড. টেলেভিস্ক স্থপতিদের নীলনকশার মতো দেখতে একটা মানচিত্রের কপি মেলে ধরলেন। সেটা ঘিরে দাঁড়ালেন সবাই। এই মানচিত্রই তাঁদের পৌঁছে দেবে মাটিতে পুঁতে রাখা বালু ও অনেক পুরোনো কিছু বীজভর্তি একটা বোতলের কাছে, একজন উদ্ভিদবিদের কাছে যা রীতিমতো গুপ্তধন।

ড. ওয়েবার ও তাঁর সহকর্মীরা বিল (Beal) বীজের কার্যকারিতা পরীক্ষার সর্বশেষ অভিভাবক। এই শতক পার করা পরীক্ষার উদ্দেশ্য এটা জানা যে বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আগে কত দিন সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। প্রতি ২০ বছর পরপর এই গবেষণার অভিভাবকেরা সবার অগোচরে রাতের অন্ধকারে এক গোপন জায়গায় জড়ো হন, মাটি খুঁড়ে একটা বোতল বের করেন, এর বীজগুলো একটা ট্রেতে রাখা অনুর্বর মাটির ওপর ছড়িয়ে দেন এবং দেখেন কোনগুলো বেড়ে উঠল।

এটা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘকাল ধরে চলা গবেষণা; ইতিমধ্যেই যার ১৪২ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর এই উদ্ভিদবিদেরা আশা করছেন যে এটা অন্তত আরও ৮০ বছর চালানো যাবে।

বীজের টিকে থাকার ক্ষমতা পরিমাপের একটা সোজাসাপ্টা প্রয়াস হিসেবে যা শুরু হয়েছিল, তা দশকের পর দশক পেরিয়ে পরিণত হয়েছে এক আকর্ষণীয় গবেষণায়। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও জ্ঞানের বিকাশের ফলে বিজ্ঞানীদের কাজ এখন আর শুধু প্রতিটি বোতলের কয়টি বীজ সফলভাবে অঙ্কুরিত হতো, সেটা গোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন তাঁরা বীজের ভেতর কী ঘটছে, সেটা যেমন দেখতে পারেন, তেমনি এসবের দীর্ঘায়ুর কারণও জানতে শুরু করেছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি পুনরুদ্ধার করতেও সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। এই কাজ থেকে যা শিখতে পারছেন, তা তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে দীর্ঘকাল ধরে শস্যবীজ সংরক্ষণ করার মতো নানা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু সবার আগে, তাঁদের খননের জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে।

অধ্যাপক বিল
ওয়েক ফরেস্ট ম্যাগাজিন
ড. বাস্কিন বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রফেসর বিল একটি অত্যন্ত উঁচু মানের গবেষণা করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি যদি আরও কিছু বোতল মাটিতে পুঁতে যেতেন!’

এক দীর্ঘ প্রয়াস

উদ্ভিদবিদ দলটি যে বোতল খুঁজছে, তাতে এক হাজারের বেশি বীজ আছে, ২১টি প্রজাতির ৫০টি করে।

১৮৭৯ সালে উইলিয়াম জেমস বিল, মিশিগান স্টেটের একজন উদ্ভিদবিদ, এ রকম বিশটি বোতল ভর্তি করে ক্যাম্পাসের কোনো এক জায়গায় এক সারিতে মাটিতে পুঁতে রাখেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন যে তিনি এবং পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরসূরিরা পাঁচ বছর পরপর একটা করে বোতল খুঁড়ে বের করবেন এবং ভেতরে সংরক্ষিত বীজগুলো রোপণ করে দেখবেন।

যখন গাছ থেকে বীজ ঝরে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু সেসব থেকে নতুন চারা গজায় না। যেকোনো জমির নিচেই এমন কিছু বীজ পাওয়া যায়, যারা সুপ্তাবস্থায় থাকে, আর ড. ওয়েবারের মতে, নিজেদের সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। কখনো এরা এক ঋতু, কয়েক বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য সুপ্ত থাকে, যতক্ষণ না পরিস্ফুটিত হওয়ার জন্য সঠিক পরিবেশ পায়।

এ রকম উদ্ভিদ সংরক্ষণকে বলা হয় বীজ ব্যাংক। ড. বিল পরীক্ষামূলক এটি প্রস্তুত করে আশা করেছিলেন যে মাটিতে কত দিন উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে এবং এদের বৃদ্ধিতে উদ্দীপক হিসেবে কী কী কাজ করে, তা জানতে পারবেন। স্থানীয় কৃষকদের সাহায্য করাই সম্ভবত তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। কৃষকেরা আগাছার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলেন এবং অপেক্ষা করতেন, কখন তাঁদের জমির নিচে আগাছার এই বীজ ব্যাংক কিছুটা হ্রাস পাবে এবং তাঁদের খাটনির পরিমাণ কমবে। ড. টেলেভিস্ক বলেন।

গবেষণার প্রথম কয়েক দফায় অনেক প্রজাতির বীজ প্রস্ফুটিত হয়ে ১০, ১৫ বা ২০ বছর পরই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে যায়। এভাবে অধিকাংশ প্রজাতিই বাদ পড়ে গেল। কেবল একটি শেষ পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য হয়ে রইল, Verbascum blattaria, একটি চওড়া পাতা ও হলুদ ফুলযুক্ত বীরুৎ–জাতীয় উদ্ভিদ। ২০০০ সালের বোতলটিতে যেসব Verbascum বীজ ছিল, তার প্রায় অর্ধেকই অঙ্কুরিত হয়, যদিও সেসব ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে মাটির নিচে ছিল।

এখন কৃষকদের আসলে আগাছা নিয়ে সে ধরনের সাহায্যের আর প্রয়োজন হয় না, যে জন্য ড. বিল এসব বোতলে বীজ ভরে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এখনো কোন বীজগুলো বেশি সময় টিকে থাকে এবং কেন, সেই উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত, তবে সেটা অন্য কারণে।

লার্স ব্রডভিগ মিশিগান স্টেটের একজন সহকারী অধ্যাপক এবং বিল বীজ গবেষণার আরেক সদস্য। তিনি বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির নিচে কী কী বীজ ব্যাংক রয়েছে, সেটা এখনো পুনরুদ্ধার করা বাস্তুবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অজানা বিষয়; কেননা বিশেষজ্ঞরা বাইরের প্রজাতিগুলো বাদ দিয়ে স্থানীয় প্রজাতির অধিক বিস্তার ঘটাতে চান। বিপন্ন ও বহু আগে হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির বীজ কখনো কখনো মাটির নিচে চাপা পড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।

অন্যান্য গবেষকেরা, যাঁরা বীজের আয়ুষ্কাল ও অঙ্কুরোদ্‌গম নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা সাধারণত জলবায়ুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বীজ সংরক্ষণ করেন অথবা খুঁজে পাওয়া অতি পুরোনো বীজ নিয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু ড. বিলের পরীক্ষাটি সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে চলা এমন এক গবেষণা, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও যত্নশীল উপাত্ত সংগ্রহের সম্মিলন ঘটেছে। কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও মৃত্তিকাবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যারল বাস্কিন এ মন্তব্য করেন। তাঁর কাজে তিনি এই পরীক্ষার ফল ব্যবহার করেছেন।

ড. বাস্কিন বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রফেসর বিল একটি অত্যন্ত উঁচু মানের গবেষণা করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি যদি আরও কিছু বোতল মাটিতে পুঁতে যেতেন!’

বাঁয়ের বোতলটির মতো এরকম আরও ১৯টি বোতল পুঁতে রাখেন অধ্যাপক বিল (ডানে দাঁড়ানো)
নিউইয়র্ক টাইমস
ড. টেলেভিস্ক বলেন, ‘যদি ভাগ্য সহায় হয়, পরেরবার আমার বয়স হবে ৮৫। আশা রাখি, নতুন সহকর্মীদের নিয়ে দলটি আরেকটি বোতল খুঁড়ে বের করছে, সেটা আমি স্বচক্ষে দেখতে পারব।’

বীজের ‘রক্ষকেরা’

এদিকে বিলের গবেষণার সদস্যরা বেলচা, গ্লাভস, হেডল্যাম্প নিয়ে মানচিত্র ধরে এগিয়ে খননের জায়গায় এসে পৌঁছালেন। ড. টেলেভিস্ক গর্ত খুঁড়তে লাগলেন, কিন্তু কোনো বোতল পাওয়া গেল না। ‘পাখির ডাক শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ছিলাম।’ ড. ওয়েবার বলেন। কারণ, দিনের আলো ফুটে গেলে তাঁরা আর সবার অগোচরে কাজটি করতে পারবেন না।

টেলেভিস্ক বলেন, বিল কিন্তু নাটকীয়তার জন্য প্রতিটা বোতল রাতের অন্ধকারের বের করতেন না। করতেন মূলত বীজগুলো সূর্যালোক থেকে রক্ষার জন্য, তা না হলে এগুলো সময়ের আগেই অঙ্কুরিত হয়ে যেতে পারে। একই কারণে টেলেভিস্করা এখন সবুজ হেডল্যাম্প ব্যবহার করেন।

বিল যখন প্রথম বীজসহ বোতলগুলো পুঁতে রেখেছিলেন, তখন পরিকল্পনা করেছিলেন, পাঁচ বছর পরপর একটা করে মাটি থেকে তুলবেন, যাতে এটা এক শতক ধরে চলতে পারে। কিন্তু পরে গবেষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা এ সময়ের ব্যবধান দশ এবং পরে বিশ বছর ঠিক করেন। এর মধ্যে দুবার তাঁদের বোতল তুলতে কিছুটা দেরি হয়। ১৯১৯ সালেরটা তাঁরা তোলেন ১৯২০ সালে। টেলেভিস্কের ধারণা, ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর কারণে, আর কোভিড-১৯–এর জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ২০২০ সালেরটি ২০২১ সালে এসে তুলতে হচ্ছে তাঁদের।

গবেষণার ধারাবাহিকতায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য মিশিগান স্টেটে দায়িত্বের হাতবদলের এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। প্রতি প্রজন্মের উদ্ভিদবিদেরাই নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যান।

টেলেভিস্ক উদ্ভিদবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক এবং এই পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সপ্তম ব্যক্তি। ২০০০ সালে তাঁর পূর্বসূরি ইয়ান জিভার্টের সঙ্গে তাঁর প্রথম বোতলটি খুঁড়ে বের করেছিলেন। ২০০৯ সালে ড. ইয়ান মারা যান। কয়েক বছর আগে নিজের মৃত্যুর কথা চিন্তা করে টেলেভিস্ক এক তরুণ সহকর্মী ডেভিড লাউরিকে মানচিত্রের একটি অনুলিপি দেন। তিনি আগেই এই গবেষণায় কাজ করার উৎসাহ দেখিয়েছিলেন।

এর কয়েক মাস পর, টেলেভিস্ক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন, কিন্তু বুঝতে পারেন, গোপন রেখে এ রকম একটি গবেষণা পরিচালনা করার বিষয়টি কতটা নাজুক হতে পারে। এরপর দ্রুত তিনি ওয়েবারকে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। ড. ব্রডভিগও পরে যোগ দেন।

ড. লাউরি স্মরণ করেন, তিনি ২০ বছর আগে যখন প্রথম এই বিখ্যাত গবেষণার কথা শোনেন, তখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন স্নাতক ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, ‘যে দীর্ঘ সময় এটি চলে আসছে, সেটি আমাকে সত্যিই অবাক করেছিল। আমি তখন কোনোভাবেই চিন্তা করিনি যে একদিন আমি এটাতে কাজ করতে পারব।’

খুঁড়ে বের করা হচ্ছে বোতলগুলো

পুরোনো বীজেই নতুন কৌশল

ছয়টা বাজার কিছুক্ষণ আগে, দিনের আলো যখন মাত্র ফুটতে শুরু করেছে, লাউরি বুঝতে পারেন, তাঁরা ভুলভাবে মানচিত্রটি পড়ছিলেন। আসল জায়গাটি ছিল আরও দুই ফুট পশ্চিমে। ওয়েবার এবার হাত দিয়েই মাটি খোঁড়া শুরু করলেন। গাছের মূল, একটা পাথরের পর মসৃণ কিছু একটা হাতে আসে তাঁর। যখন তিনি বোতলটা বের করলেন, সবাই উল্লসিত। ওয়েবার বলেন, ‘সবাই খুবই স্বস্তি অনুভব করছিলেন। আমার হাতে যে বোতল আছে, সেটা ১৪০ বছর আগে শেষ স্পর্শ করেছিলেন বিল, যিনি ডারউইনের কাছে চিঠি লিখতেন!’

এ বছর প্রথমবারের মতো খুঁড়ে বের করা বীজগুলো সরাসরি বৃদ্ধি–চেম্বারে পাঠানো হয়নি। বরং দলের আরেক সদস্য মার্গারেট ফ্লেমিং, একজন পোস্টডক্টরাল গবেষক সেগুলো একটি শীতল কক্ষে নিয়ে আসেন। সেখানে তিনি Setaria glauca-র কিছু বীজ তুলে রাখেন জেনেটিক বিশ্লেষণের জন্য। বীজগুলো ১৯১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অঙ্কুরিত হয়নি।

একটা বীজ রোপণ করা হচ্ছে অনেকটা একটা হ্যাঁ-না প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা। হয় বীজটা অঙ্কুরিত হবে বা হবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কোনো বীজ যদি বেড়ে না ওঠে, তাহলে সেটা নিশ্চিতভাবে মৃত। ড. ফ্লেমিং বলেন, এর ডিএনএ এবং আরএনএ পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ের আরও গভীরে যেতে পারেন। তাঁরা জানতে পারেন, এর ভেতরের কলকবজাগুলো টিকে আছে, নাকি নষ্ট হয়ে গেছে। অঙ্কুরোদ্‌গম সম্ভব না হলেও আর কী কী ঘটা সম্ভব।

গবেষণা দলে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার ফলে সম্ভাবনার নতুন নতুন সব দুয়ার খুলে যাচ্ছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন বীজগুলো পুঁতে রাখা হয়েছিল, ‘তখন আমরা ডিএনএ কী, সেটাই জানতাম না।’ টেলেভিস্ক বলেন। প্রজন্মের পালাবদলে, ‘এমন সব মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পারি, যা আমাদের বীজের কার্যকারিতা ও সুপ্তাবস্থা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে অনেক সাহায্য করবে।’ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওয়েবার ও ফ্লেমিং হলেন এই প্রকল্পের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রথম নারী সদস্য। অর্থাৎ শুধু প্রযুক্তির নয়, অন্যান্য দিকেও উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

এর পাশাপাশি এসব প্রশ্নের উত্তর জানার গুরুত্ব এখন বাড়ছে। গত কয়েক দশকে বেশ কয়েকটি বীজ সংরক্ষণ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কোন জিনিসটা আসলে নির্দিষ্ট একটি বীজকে সুপ্ত থাকাকালে কার্যকর রাখতে সহায়তা করে, সে সম্বন্ধে আরও ভালো ধারণা পেলে তা এসব প্রকল্পের কাজে সহায়ক হবে।

বাকি বীজগুলো বিজ্ঞানীরা রোপণ করে ও পানি দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখেন, আর মনে মনে আশা করেন যে সেই ১৪২ বছর বয়সী Verbascum বীজগুলো থেকে বেরিয়ে আসবে সবুজ ও সতেজ অঙ্কুর।

এরপর তাঁরা উদ্ভিদ বাস্তুবিদ্যার নতুন আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে আরও কিছু কৌশল প্রয়োগ করবেন। প্রথমত, তাঁরা একটি দ্বিতীয় শীতকাল অনুকরণ করতে বীজসহ সম্পূর্ণ মাটির বিছানাটিকে একটি শীতল ব্যবস্থার মধ্যে রাখবেন। একই কৌশল কাজে লাগিয়ে তাঁরা ২০০০ সালে তোলা একটি Malva pusilla বীজ থেকে চারা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন।

এবার তাঁরা আরেকটি নতুন কৌশল চেষ্টা করে দেখবেন, বীজগুলোকে ধোঁয়ার সংস্পর্শে রাখা। এটা এমন কোনো কোনো প্রজাতিতে অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটাতে পারে, যেগুলো দাবানলের পরবর্তী সময়ে বিকাশ লাভ করে। এ রকম একটি হলো Erechtites hieraciifolius বা fireweed; বোতলে থাকা এই বীজ গবেষণা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অঙ্কুরিত হয়নি।

দলের সদস্যরা অনেক উৎসাহ নিয়ে এই বৃদ্ধি পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করেন। ২৩ এপ্রিল বিকেলে ড. লাউরি দেখতে পান, একটি বীজ থেকে ছোট্ট সবুজ চারা বেরিয়েছে। যার অর্থ, অন্তত একটি বীজ যদি এখনো অঙ্কুরিত হতে পারে, তাহলে পরবর্তীকালে হয়তো এ রকম আরও পাওয়া যাবে।

দলের তরুণ সদস্যদের বয়স এখনো ৩০ থেকে ৪০–এর মধ্যে, কিন্তু তাঁদেরও একসময় উত্তরসূরি নির্বাচনের কাজ করতে হবে। টেলেভিস্ক মনে করেন, কাজটা তাঁদের ২০৪০ সালের আগেই সেরে ফেলা উচিত, যখন আরেকটা বোতল উত্তোলনের সময় আসবে।

টেলেভিস্ক বলেন, ‘যদি ভাগ্য সহায় হয়, পরেরবার আমার বয়স হবে ৮৫। আশা রাখি, নতুন সহকর্মীদের নিয়ে দলটি আরেকটি বোতল খুঁড়ে বের করছে, সেটা আমি স্বচক্ষে দেখতে পারব।’

লেখক: বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক জয়ী; শিক্ষার্থী, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এনপিআর