অতীতে কি ফেরা সম্ভব?

২০০৯ সালের ২৮ জুন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পার্টির আয়োজন করেছেন স্টিফেন হকিং। সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই পার্টিতে কেউই আসেননি। হকিং অবশ্য সেটাই আশা করেছিলেন। কারণ, তিনি আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলেন পার্টি শেষ হওয়ার পর। আজব ব্যাপার, তাই না! হকিংয়ের ভাষায়, পার্টিটি ছিল ভবিষ্যতের টাইম ট্রাভেলারদের জন্য একটা ওয়েলকাম রিসেপশন। এই মজার পরীক্ষাটি তিনি করেছিলেন তাঁর ১৯৯২ সালের একটি কনজেকচারকে আরও শক্ত করার জন্য। ধারণাটা ছিল, টাইম ট্রাভেল করে আসলে অতীতে যাওয়া বাস্তবে অসম্ভব।

স্টিফেন হকিং যেটা বলেছেন, সেটা পুরোপুরি সত্য না-ও হতে পারে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে, গাণিতিকভাবে চিন্তা করলে টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। ফোটন ব্যবহার করে তৈরি একটি মডেল দেখিয়েছে, কোয়ান্টাম মেকানিকস এই ধাঁধার সমাধান দিতে পারে। এই গবেষণা টাইম ট্রাভেলের সম্ভাবনা ও মহাবিশ্ব বিষয়ে আমাদের বর্তমান ধারণা নিয়ে আলোকপাত করা ছাড়াও একে বিজ্ঞান কল্পকাহিনির পাতা ও সিনেমার পর্দা থেকে বাস্তবেও তুলে এনেছে। আবার কোয়ান্টাম ক্রিপটোগ্রাফি ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়েও এই গবেষণা প্রভাব ফেলেছে।

ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ

পদার্থবিজ্ঞানে বর্তমান যে তত্ত্বগুলো আছে, সেখানে টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে যাওয়া নিয়ে তেমন বাধানিষেধ নেই। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব ব্যবহার করে এ কাজটা করা সম্ভব। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলা হয়েছে, মহাকর্ষ স্থানকালকে বাঁকিয়ে ফেলতে পারে। খুব শক্তিশালী একটা মহাকর্ষক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হলে (একটা ঘূর্ণমান কৃষ্ণগহ্বর যেমনটা করতে পারে) সেটা স্থানকাল বা স্পেসটাইমকে এমনভাবে বাঁকাতে পারবে যে, সেটা বেঁকে এসে নিজের সঙ্গেই যুক্ত হবে। ফলে একটা ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ (সিটিসি) তৈরি হবে। আর এটা ব্যবহার করে অতীতে যাওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারটা কিন্তু গালগল্প নয়, সাধারণ আপেক্ষিকতার সমীকরণগুলোর সমাধান থেকে এটি পাওয়া গেছে। ১৯৪৯ সালে কার্ট গোডেল এ সমাধানটি বের করেছিলেন।

একটি শক্তিশালী মহাকর্ষ ক্ষেত্র স্থানকালকে ভীষণভাবে বাঁকাতে পারে। এর ফলে ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ বা সিটিসি তৈরি হওয়া সম্ভব
বিজ্ঞানচিন্তা

স্টিফেন হকিং ও তাঁর মতো আরও অনেক পদার্থবিজ্ঞানী এই ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভকে ঠিক মানতে চান না। তার পেছনেও যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সে রকম একটা কারণ হচ্ছে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স। এই প্যারাডক্সে বলা হয়, আপনি যদি সিটিসি ব্যবহার করে অতীতে যান এবং আপনার দাদাকে খুন করেন, তাহলে আপনার জন্ম হবে কীভাবে! গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের ব্যাপারটা শুধু এই একটা ক্ষেত্রে যে প্রযোজ্য, তা কিন্তু নয়। ‘কজ’ ও ‘ইফেক্ট’ বা কার্যকারণ আছে, এমন যেকোনো কিছুর জন্যই এই প্যারাডক্স খাটে। কোয়ান্টাম পার্টিকেল নয়, বড় আকারের এমন যেকোনো বস্তুই যদি সিটিসি ব্যবহার করে অতীতে ফেরত চলে যায়, তাহলে এমন সব প্যারাডক্স তৈরি করতে পারে, যাতে এই কজ-ইফেক্টের ব্যাপারটার বারোটা বেজে যেতে পারে। ১৯৯১ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড ডয়চ একটা মডেল প্রস্তাব করেছিলেন। সেখানে সিটিসি ব্যবহার করে অতীতে যাওয়ার কারণে যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে, সেসবকে কোয়ান্টাম স্কেলে এড়ানো সম্ভব। কারণ মৌলিক কণিকাগুলোর ক্ষেত্রে নিউটনিয়ান বলবিদ্যা খাটে না, যেখানে একটা বস্তুর গতিবেগ ও অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়। এসব কণার ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ব্যবহার করা হয়। ফলে এদের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না, বরং সম্ভাবনা বা প্রোবাবিলিটি ব্যবহার করা হয়। একদিক থেকে চিন্তা করলে ব্যাপারটা বেশ মজার। প্রকৃতিতে যে চারটি মৌলিক বল রয়েছে, সেগুলোর তিনটিকে ব্যাখ্যা করা হয় কোয়ান্টাম মেকানিকস বা বলবিদ্যা দিয়ে। এ তিনটি বল হলো দুর্বল নিউক্লীয় বল, সবল নিউক্লীয় বল ও বিদ্যুত্চুম্বকীয় বল। শুধু মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করতে আমাদের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রয়োজন হয়। এ চারটি বলকে যে একটা সাধারণ তত্ত্ব দিয়ে আমরা ব্যাখ্যা করতে চাই, সেটা তখনি সম্ভব, যখন সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে আমরা একীভূত করতে পারব। সিটিসি ব্যবহার করে যখন কোনো অতিপারমাণবিক (সাবঅ্যাটমিক) কণা অতীতে ফিরে আসবে, তখন সাধারণ আপেক্ষিকতা থেকে আমরা গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স পাচ্ছি। একই সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আমাদের সেই ধাঁধা থেকে মুক্তি দিচ্ছে। আমরা একই সঙ্গে যে আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ব্যবহার করছি, এটাকে কি এই তত্ত্ব দুটোকে একীভূত করার পথে অগ্রগতি বলা চলে না!

সিটিসি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা

২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী টিম রালফ এবং তাঁর ছাত্র মার্টিন রিংবাওয়ারের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রথমবারের মতো ডেভিড ডয়চের ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভের মডেলকে সিমুলেশনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেন। এতে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের ব্যাপারটা ভালোভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা হয়। সে জন্য রালফ ও তাঁর দল একজোড়া পোলারাইজড ফোটন ব্যবহার করেছিলেন।

পরীক্ষাটি নিয়ে জানার আগে ডয়চ গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের যে কোয়ান্টাম সমাধানটা দিয়েছিলেন, তা জানা যাক। ধরা যাক, একজন মানুষ সিটিসি ব্যবহার করে অতীতে গিয়ে তার দাদাকে খুন করার পরিবর্তে একটা মৌলিক কণা অতীতে ফিরে গিয়েছে। যে যন্ত্রটি কণাটিকে তৈরি করেছে, এ কণাটি সেই যন্ত্রটির সুইচকে অন-অফ করবে। কণাটি যদি যন্ত্রটির সুইচ অন করে, তাহলে যন্ত্রটি সিটিসিতে ‘একটি কণা’ নিঃসরণ করে। এই ঘটনাটি ঘটছে অতীতে, আর সেই ‘একটি কণা’ হচ্ছে সেটা, যে কণাটি বর্তমান থেকে অতীতে গিয়েছে। আর কণাটি যদি সুইচ অন না করে, তাহলে যন্ত্রটি কোনো কণা নিঃসরণ করবে না এবং সিটিসি দিয়ে অতীত থেকে কোনো কণাই বর্তমানে ফিরে আসবে না। পুরো ব্যাপারটাকে যদি একসঙ্গে চিন্তা করা হয়, তাহলে কণা তৈরির যন্ত্রটি থেকে কণাটি নিঃসরণের কোনো নিশ্চয়তা আসলে নেই, সম্ভাবনা রয়েছে; অর্ধেক অর্ধেক। ঠিকভাবে বললে সম্ভাবনা বিন্যাস বা প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন রয়েছে। ডয়চ যেটা তাঁর মডেলে বলেছিলেন, কোয়ান্টাম জগতে সিটিসির এক প্রান্ত দিয়ে যদি একটি কণা প্রবেশ করে, তাহলে অপর প্রান্ত দিয়ে অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি কণা বের হবে। এখন যন্ত্রটি থেকে যদি ০.৫ বা অর্ধেক প্রোবাবিলিটির একটি কণা বের হয়ে সিটিসিতে ঢোকে এবং অপর প্রান্ত দিয়ে অর্ধেক সম্ভাবনা নিয়ে বের হয় (যন্ত্রটির সুইচ ফ্লিপ করার জন্য), তাহলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে কণাটি তার জন্মের সময়েই যন্ত্রটির সুইচ অন-অফ করার অর্ধেক সম্ভাবনাটির বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মেছে। এ কণাটি যদি একজন ব্যক্তি হতো, তাহলে তিনি তাঁর দাদাকে খুন করার অর্ধেক সম্ভাবনা নিয়ে জন্মাতেন। অর্থাত্, তাঁর দাদা তাঁর হাতে খুন হওয়া থেকে বেঁচে যাওয়ার অর্ধেক বা ০.৫ সম্ভাবনা থাকত। সম্ভাবনার হিসাবে চিন্তা করলে ব্যাপারটা খারাপ নয়—এই প্যারাডক্স থেকে বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিয়মকানুনের সঙ্গেও পুরো ব্যাপারটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ (সিটিসি)-এর এক প্রান্ত দিয়ে একটি কণা প্রবেশ করলে অপর প্রান্ত দিয়ে অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি কণা বের হওয়ার কথা
বিজ্ঞানচিন্তা

আগেই বলেছিলাম, এই পুরো ব্যাপারটা হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখার জন্য রালফ, রিংবাওয়ার ও তাঁদের সহকর্মীরা একজোড়া পোলারাইজড ফোটন ব্যবহার করেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, একটি কোয়ান্টাম সিস্টেমে সিটিসির মধ্য দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে এই পোলারাইজড ফোটনের জোড়া গাণিতিকভাবে একটি ফোটনের সমতুল্য। এই ফোটন দুটির পোলারাইজেশন এমনভাবে এনকোড করা হয়েছিল, যাতে দ্বিতীয় ফোটনটিকে প্রথমটির অতীতের ভার্সন হিসেবে ধরা যায়। মানুষের হিসাবে চিন্তা করলে বলা যায়, সিটিসি (অর্থাত্ টাইম লুপ) দিয়ে একজন মানুষকে পাঠানোর পরিবর্তে তার স্টান্ট-ডাবলকে পাঠানো হয়েছে। আর লুপ ঘুরে সিটিসি থেকে যে মানুষটা (স্টান্ট-ডাবল) বের হয়েছে, সে অতীতের ঠিক সেই আসল মানুষটার মতোই কি না, সেটা দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। ফোটনের কথায় ফেরত আসি। প্রথম ফোটনের সঙ্গে দ্বিতীয় ফোটনের মিথস্ক্রিয়ার পর দ্বিতীয় ফোটনটির পোলারাইজেশন স্টেট পরিমাপ করে, বেশ কয়েকবার পরীক্ষাটি চালিয়ে গবেষক দলটি ডয়চের মডেলের সত্যতার প্রমাণ পায়। সিটিসির এক প্রান্ত দিয়ে একটি কণা প্রবেশ করলে অপর প্রান্ত দিয়ে অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি কণা বের হওয়ার কথা। হয়েছেও সেটা। আউটপুটে, সিটিসির বের হওয়ার প্রান্তে দ্বিতীয় ফোটনটির যে স্টেট ছিল, সিটিসিতে ঢোকার প্রান্তে অর্থাত্ ইনপুটে প্রথম এনকোডেড ফোটনটির স্টেট একই ছিল। মনে রাখতে হবে, পুরো ব্যাপারটাই কিন্তু সিমুলেশন ছিল, অর্থাত্ বাস্তবে সময়ের বিপরীত দিকে কিছু পাঠানো হয়নি। কিন্তু এই সিমুলেশন থেকে এমন কিছু অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার জানা গেছে, যা শুধু টাইম ট্রাভেল নিয়ে প্যারাডক্সের সমাধান দিয়েছে তা-ই নয়, বরং বাস্তব জীবনে কাজে আসতে পারে, এমন সব বিষয় নিয়েও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

কোয়ান্টাম ক্রিপটোগ্রাফিতে যেমন কোয়ান্টাম অবস্থার ক্লোনিং একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। মৌলিক কণিকাগুলোর ক্ষেত্রে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব কাজ করে, এই ব্যাপারটা আমরা জানি। একটা কণার অবস্থান যদি আমরা ঠিকভাবে বের করতে পারি, তাহলে সেটার ভরবেগ ঠিকভাবে জানার ব্যাপারটা অনিশ্চিত হয়ে যায়। যদি কোনো কণার কোয়ান্টাম অবস্থা ক্লোন করা যায়, তাহলে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখানো সম্ভব। সিটিসির দুই মাথায় একটা কণার অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আরেকটি কণা পেলে, একটা কণা থেকে যদি অবস্থান জানা যায়, অপরটি থেকে ভরবেগ বের করা যাবে। সে ক্ষেত্রে এনকোডেড মেসেজ থেকে তথ্য উদ্ধার করা যাবে।

বিকল্প সমাধান

গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের সমাধান হিসেবে ডেভিড ডয়চের মডেলই একমাত্র মডেল নয়। ২০০৯ সালে এমআইটির পদার্থবিজ্ঞানী সেথ লয়েড সিটিসির একটি বিকল্প মডেল প্রস্তাব করেন। সেখানে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন এবং পোস্ট-সিলেকশন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ধাঁধাটির সমাধান প্রস্তাব করা হয়। ২০১১ সালে লয়েড কানাডার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর মডেলের ওপর সিমুলেশন পরিচালনা করেন। লয়েডের মতে, ডয়চের মডেলে একজন টাইম ট্রাভেলার সিটিসি দিয়ে অতীতের যে মহাবিশ্বে যায়, তার সঙ্গে সে যে ভবিষ্যত্ থেকে এসেছে, সেই ভবিষ্যতের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু লয়েডের মডেল অনুযায়ী পোস্ট-সিলেকটেড সিটিসি ব্যবহার করে টাইম ট্রাভেল করলে একজন ব্যক্তি ঠিক সে মহাবিশ্বেই ফিরে যাবে, যে মহাবিশ্বের কথা তার মনে আছে।

আমরা আসলে এখনো জানি না যে কার মডেলটি সঠিক। কিংবা দুটো মডেলের একটিও সঠিক কি না। কারণ, যে পরীক্ষাগুলো করা হয়েছে, সেখানে বাস্তবে কোনো ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ ব্যবহার করা হয়নি, কেবল সিমুলেশন চালানো হয়েছে। যদি দুটো মডেলের একটিও সঠিক না হয়, তাহলে স্টিফেন হকিং নিশ্চয়ই সঠিক হবেন! সে ক্ষেত্রে ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ বা সিটিসির অস্তিত্ব থাকা আসলেই সম্ভব নয়। ১৯৯২ সালে হকিং যে ক্রোনলজি প্রটেকশন কনজেকচার প্রস্তাব করেছিলেন, সেই কনজেকচার অনুযায়ী সাধারণ আপেক্ষিকতার যে সমাধান থেকে সিটিসির ধারণা এসেছে, তার আর প্রয়োজন পড়বে না, কারণ ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির কোনো পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব দিয়ে হয়তো সাধারণ আপেক্ষিকতাকে প্রতিস্থাপন করা যাবে।

শুরুতে স্টিফেন হকিংয়ের যে পার্টির কথা বলেছিলাম, সেই পার্টিতে অর ডার্ব, বরফে রাখা শ্যাম্পেন তো ছিলই, বেলুন দিয়ে পুরো পার্টি সাজানো হয়েছিল। ওপর থেকে ঝোলানো পর্দায় লেখা ছিল, ডবষপড়সব Welcome time travelers। স্টিফেন হকিংও তাঁর হুইলচেয়ারে বসে অপেক্ষা করছিলেন অতিথিদের জন্য। পার্টির আমন্ত্রণপত্র যে পার্টি শেষ হওয়ার পরে পাঠানো হয়েছিল, সেটা তো আগেই বলেছি। যদি ভবিষ্যত্ থেকে অতীতে আসলেই ফিরে আসা যেত, স্টিফেন হকিংয়ের মতে, তাহলে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ঠিক ওই সময়ে ফিরে এসে পার্টিতে অংশ নিত! যৌক্তিক কথা, কিন্তু তারপরও অতীতে কখনো ফিরে যাওয়া যাবে না, সেটা মেনে নিলে অ্যাডভেঞ্চারই যে আর থাকে না!

লেখক: শিক্ষার্থী, ইইই,গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ঢাকা