জানা অজানা
ক্রিকেট বলের বিজ্ঞান
টান টান উত্তেজনায় ভরপুর খেলার মাঠে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম–কানুনই বদলে দিতে পারে সবকিছু।
খেলাধুলার দুনিয়াতে ক্রিকেট বলের গতিবিধি সবচেয়ে আশ্চর্যজনক। বোলারের হাত থেকে বল ছুটে বেরোতেই ‘বাউন্ডারি লেয়ার’ নামের বাতাসের এক বিশেষ আবরণ তৈরি হয়। বলের চারপাশ ঘিরে তৈরি হওয়া এই আবরণ থেকেই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞানের কারিকুরি। বাতাসের স্তরে চাপের তারতম্য ঘটিয়ে বোলার করতে পারেন বলের দিক নিয়ন্ত্রণ। বলের গতির ওপর নির্ভর করে বাতাসের চাপ মিলিয়ে ঠিক করা যায় যে বলটি কোথায় বাউন্স করবে। পাশাপাশি বাউন্সের পর বল কোন দিকে ঘুরতে শুরু করবে, সেটাও সামলে নেওয়া যায় বাতাসের সঙ্গে। এ ধরনের বলকে বলা হয় ‘কাটার’। বলের ঘূর্ণন মানে স্পিন বোলারের জন্য আরেকটি চমৎকার অস্ত্র। বোলার তার কবজি কিংবা আঙুল ঘুরিয়ে বলের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করে যেন বল মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্রভাবে ঘুরতে শুরু করে। শুকনো ধুলোময় পিচে স্লো স্পিন বেশি কার্যকর।
সুইয়িং বলের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী বাতাসের চাপও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন বলের এক পাশ অন্য পাশের তুলনায় বেশি গতিলাভ করে, তখন পুরো বল সমান গতিতে এগোতে পারে না। বলটি সে ক্ষেত্রে একটু বেঁকে গতি কমিয়ে এগোয়। বোলাররা মাঝেমধ্যেই এ ধরনের বোলিং টেকনিক ব্যবহার করেন, যেন ব্যাটসম্যান কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল দিক বদলে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে পারে। বলের যেকোনো পাশে আরও বেশি চাপ বাড়িয়ে বল সুইংয়ের প্রভাব বাড়ানো সম্ভব। ক্রিকেটের দুনিয়াতে এসব নিয়মকানুনের বাইরে যদিও অন্য কোনো উপায়ে ব্যাটসমানের জন্য কঠিন বল করার কোনো নিয়ম নেই।
রিভার্স সুইংয়ের রহস্য
স্বাভাবিক নিয়মে সুইং বল খেলা প্রত্যেক ব্যাটসমানের জন্য বেশ কঠিন। উল্টোভাবে ঘোরানো সুইং বল খেলতে গিয়ে উইকেট হারিয়েছেন অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও। ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা এই উল্টো ঘূর্ণনের বলগুলোকে সামলানো বেশ মুশকিল। পুরানো খসখসে বলে এ ধরনের সুইং বল করা সহজ। বলের বাইরে থাকা বাতাসের আবরণ বলকে আরও ক্ষিপ্রভাবে ছুটতে সাহায্য করে। অনেক সময় বোলার কবজির দিক বদলেও শুধু আঙুলের সাহায্যে বল ঘুরিয়ে ফেলতে পারেন। ফলে ব্যাটসম্যান সহজে বলের গতিবিধি বুঝতে পারেন না। খেলার মাঠের আবহাওয়া আর পিচের সার্বিক অবস্থা বুঝে বোলার বোলিংয়ের নানা রকম কৌশল প্রয়োগ করেন। বলের উল্টো ঘূর্ণনে যদি কোনো বোলার দক্ষ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাকে সামলানো যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বেশ মুশকিল।