নোবেল পুরস্কারে ক্রিসপার ও অপার সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ

আজ ৬ অক্টোবর, বুধবার বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে চলতি বছরের রসায়নে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। এ বছরের পুরষ্কার কে পাবেন সেটা জানার আগে জেনে নিন গতবছর কারা এবং কেন পেয়েছিলেন রসায়নের নোবেল।

ক্রিসপার-কাস পদ্ধতি ব্যবহার করে জীবের জিনোম তথ্য পরিবর্তন বা পরিমার্জন করার পদ্ধতি পৃথিবীবাসীর কাছে বিশদভাবে উন্মোচিত হয় ২০১২ সালে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের গবেষক জেনিফার ডডনা এবং তাঁর পোস্টডক্টরাল গবেষণা সহকর্মী ইমানুয়েল শারপঁতে নেতৃত্বে ওই বছর একটি গবেষণাপত্রে ব্যাকটেরিয়ার ক্রিসপার-কাস৯ ব্যবহার করে জিনোমে নির্দিষ্ট পরিবর্তন আনার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়। এরপর ২০১৩ ও ২০১৪ সালে জীববিজ্ঞানের জগতে বিপ্লব ঘটে যায়। ওই সময় এমআইটির ফেং জ্যাং এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ চার্চ ক্রিসপার নিয়ে গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখেন। পৃথিবীর অগ্রসর গবেষণাগার থেকে শত শত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। ক্রিসপার-কাস৯ আট বছর ধরে বিজ্ঞানজগতের অন্যতম আলোচ্য এবং সম্ভাবনায় প্রযুক্তি হিসেবে তার অবস্থান পাকাপোক্ত করে।

এই হিসাবে কয়েক বছর ধরেই প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, ক্রিসপার-কাস৯–এর উদ্ভাবকেরা নোবেল পুরস্কার পাবেন। ২০২০ সালে এসে তা বাস্তবায়িত হলো। জেনিফার ডডনা এবং ইমানুয়েল শারপঁতে তাঁদের অবদানের জন্য রসায়নে নোবেল পেয়েছেন। অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল ক্রিসপার-কাস৯ ফিজিওলজি ও মেডিসিন বিভাগে নোবেল পুরস্কার পাবে এবং রসায়নে এ পুরস্কার প্রদান অনেকখানি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ-ই দ্বিমত করছেন না যে ক্রিসপার-কাস প্রযুক্তি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য দাবিদার। জেনিফার ডডনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে এবং ইমানুয়েল শারপঁতে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটে কর্মরত। যে ক্রিসপার-কাস৯ প্রযুক্তির জন্য তাঁরা নোবেল পুরস্কার পেলেন, এবার সে সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাক।

একবিংশ শতাব্দী হবে জীববিজ্ঞানের উত্কর্ষের সময়—এমন আভাস পাওয়া গিয়েছিল শতকের শুরুতেই। মানবজিনোম তথ্য জানা হয়েছিল শতকের শুরুতেই। কিন্তু তারপর মাত্র এক দশকের মধ্যে জিনোম তথ্য উদ্‌ঘাটনের প্রযুক্তি অচিন্তনীয় গতিতে এগিয়েছে। নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি জিনোম তথ্য উদ্‌ঘাটনের বছরের কাজ নামিয়ে এনেছে দিন-সপ্তাহের গণ্ডিতে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তথ্য বিশ্লেষণের গতিও হয়েছে দ্রুততর—কম্পিউটারবিজ্ঞানের কল্যাণে।

জিনোম তথ্য উদ্‌ঘাটন ও বিশ্লেষণের এই অগ্রগতির সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করা যায় এ তথ্য, তা স্বাভাবিকভাবেই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেক বড় বড় আবিষ্কারে যে ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে এসেছে, সেখানেই পাওয়া গেল আরেকটি রত্নের সন্ধান—ক্রিসপার কাস।

‘ক্রিসপার’ (CRISPR) শব্দটি Clustered Regularly Interspaced Short Palindromic Repeats-এর সংক্ষিপ্ত প্রকাশ। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ব্যাকটেরিয়ায় এর উপস্থিতি গবেষণা করে নামটি দিয়েছিলেন স্প্যানিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিসকো মহিকা। বিশেষত ভাইরাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য ক্রিসপার কৌশল ব্যবহার করে আদিকোষী ব্যাকটেরিয়া। এর মাধ্যমে একটি আক্রান্ত ব্যাকটেরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস কিংবা প্রতিযোগী অন্য ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ–কে (তথা প্লাসমিড) কেটে অকার্যকর করে ফেলতে পারে।

প্রায় আড়াই দশক আগের ক্রিসপার–সম্পর্কিত এ আবিষ্কারকে সম্পূর্ণ নতুন অর্থ দিলেন সাম্প্রতিক কালের বিজ্ঞানীরা। ২০১২-১৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বার্কলে ক্যাম্পাস) এবং এমআইটির ব্রড ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নিয়ে এলেন ব্যাপক পরিবর্তন। ক্রিসপার পদ্ধতির মূলনীতি তথা ডিএনএকে কেটে দেওয়ার এই সামর্থ্যকে নিজেদের ইচ্ছেমতো যেকোনো জীবের ডিএনএ–কে কেটে অকার্যকর করে দেওয়ার কাজে লাগানোর পন্থায় উন্নীত করেন। বিশেষত জেনিফার ডডনা এবং তাঁর পোস্টডক্টরাল গবেষণা সহকর্মী ইমানুয়েল শারপঁতের নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্রিসপার কাস৯–কে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গাইড একক আরএনএ তৈরি করেন। তাঁদের এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ক্রিসপার-কাস গবেষণাগারে জিনোম তথ্য পরিমার্জনের জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠে।

তারপর থেকে খুব দ্রুত এ–সম্পর্কিত গবেষণা বিস্তৃত হয়ে যায় সারা পৃথিবীর সব শীর্ষ গবেষণাগারে। ক্রিসপার-কাস৯ এখন কেবল আর ডিএনএ–কে কাটার জন্যই নয়, বরং ডিএনএতে যেকোনো রকমের পরিবর্তন ও পরিমার্জনের জন্যও ব্যবহার করা হয়।

প্রকৃতিতে বিরাজমান কৌশলকে কীভাবে গবেষণা ও জীবন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যায়, তারও একটি উত্কৃষ্ট নিদর্শন ক্রিসপার–সম্পর্কিত এই নতুন উদ্ভাবন।

সংক্ষেপে শুধু ক্রিসপার হিসেবে পরিচিত হলেও এর পুরো নাম আসলে ‘ক্রিসপার-কাস৯ সিস্টেম’। কাস৯ (Cas9) হচ্ছে একধরনের এনডোনিউক্লিয়াস এনজাইম প্রোটিন। অন্য যেকোনো এনডোনিউক্লিয়াসের মতোই কাস৯ ডিএনএ–কে কেটে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। তবে ক্রিসপার-কাস৯ সিস্টেমের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সুনির্দিষ্টতা। অন্য সাধারণ এনডোনিউক্লিয়াস যেমন যেকোনো জায়গায় ডিএনএ–কে কেটে দেয়, ক্রিসপার-কাস৯ সেখানে খুবই স্থির উদ্দেশ্যমণ্ডিত। ক্রিসপার-কাস৯-এর যৌথ কর্মযজ্ঞে ক্রিসপার অংশটি মূলত কাজ করে কাস৯ এনজাইমটিকে নির্দিষ্ট জিনের কাছে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ক্রিসপার অংশটি গঠিত হয় দুই ধরনের আরএনএর সমন্বয়ে—প্রদর্শক (Guide) আরএনএ এবং নির্দেশক (Tracer) আরএনএ। প্রদর্শক আরএনএ কোনো জিনের নিউক্লিওটাইড অনুক্রমের (Nucleotide sequence) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরি করা হয়, যা ঠিক করে দেয় ডিএনএর কোন জায়গায় কাস৯ কাটবে। অপর দিকে নির্দেশক আরএনএ মূলত কাস৯ এনজাইমটিকে সংকেত দেয় প্রদর্শক আরএনএর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার।

আরও পড়ুন

ক্রিসপার-কাস৯ দুইভাবে ডিএনএ সিকোয়েন্সে পরিবর্তন আনতে পারে। একটিকে বলা হয় নন-হোমোলোগাস এন্ড জয়েনিং (NHEJ) পাথওয়ে। আরেকটি প্রক্রিয়া হচ্ছে হোমোলজি ডিরেক্টেড রিপেয়ার (HDR) পাথওয়ে।

NHEJ প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ডিএনএর সিকোয়েন্স ঠিক করার একটি তুলনামূলকভাবে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা কোষের ভেতর স্বাভাবিকভাবেই থাকে। ক্রিসপার প্রযুক্তি কোষের এই বিদ্যমান ব্যবস্থাকেই আসলে কাজে লাগায়।

এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে কাস৯-প্রদর্শক আরএনএ (gRNA) ডিএনএর নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান নেয়। কাস৯ তার কর্তনক্ষমতার প্রয়োগস্থল বোঝার জন্য সাধারণত ২-৬ নিউক্লিওটাইডের সমন্বয়ে গঠিত একটি Protospacer Adjacent Motif (PAM)-এর ওপর নির্ভরশীল। মনে রাখা দরকার, কাস৯ ছাড়াও আরও কয়েক রকমের কাস প্রোটিন আছে এবং এসব কাস প্রোটিনের জন্য PAM সিকোয়েন্সও আলাদা হয়। আবার বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ায় প্রাপ্ত কাস৯ প্রোটিনের জন্যও PAM আলাদা হতে পারে। যেমন: Streptococcus pyogenes থেকে পাওয়া কাস৯-এর জন্য PAM সিকোয়েন্স হচ্ছে 5′-NGG-3′। অপর দিকে Staphylococcus aureus থেকে পাওয়া কাস৯-এর জন্য PAM সিকোয়েন্স হচ্ছে 5′-NNGRR(N)-3′। উল্লেখ্য, N দ্বারা চারটি নিউক্লিওটাইডের (A, T, C বা G) যেকোনোটিকে বোঝানো হয়, অপর দিকে R দ্বারা যেকোনো পিউরিন (A বা G)-কে বোঝানো হয়।

কাস৯ প্রোটিন সাধারণত PAM সিকোয়েন্স থেকে ৩-৪ বেস আগের কোনো জায়গায় ডিএনএ–কে কেটে ফেলে। এই কাটা অংশকে কোষ তার ভেতরে বিদ্যমান NHEJ পদ্ধতিতে যখন জোড়া লাগাতে যায়, তখনই সে কিছু না কিছু ভুল করতে পারে। এ ভুলের কারণে কখনো ডিএনএর কোনো নিউক্লিওটাইড বাদ পড়ে যেতে পারে কিংবা নতুন কোনো নিউক্লিওটাইড যোগ হয়ে যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলোকে একসঙ্গে ইনডেল বলা হয়। ইনডেল (INDEL) হচ্ছে Insertion (সন্নিবেশন) এবং Deletion (অপসারণ)-এর যুক্ত রূপ। এই ইনডেল-এর ফলে ডিএনএ সিকোয়েন্সে যে পরিবর্তন হয়, তার কারণে ওই ডিএনএ অংশটুকু যে জিনটির অংশ তা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে আগে থেকে বিদ্যমান কোনো ভুল সংশোধনও হয়ে যেতে পারে। তবে এটা অনেকটাই এলোপাতাড়িভাবে ঘটতে পারে। অনেকগুলো কম্বিনেশনেই পরিবর্তন ঘটবে। যে পরিবর্তনটি আমাদের লক্ষ্য, সেটি খুঁজে নেওয়াটা হচ্ছে পরের ধাপের কাজ।

NHEJ পদ্ধতির এই আপাত–অনির্দিষ্ট পরিবর্তন না চেয়ে আমরা কোনো জিনের সিকোয়েন্সে যদি সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন চাই, তাহলে HDR প্রক্রিয়ার সহায়তা নিতে হবে।

HDR প্রক্রিয়ায় যে ডিএনএ অংশটুকুর সংশোধন করতে হবে, তার একটি সঠিক প্রতিরূপ (Template) কোষের ভেতরে সরবরাহ করা হয়। হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন প্রক্রিয়ায় এই টেমপ্লেটকে অনুসরণ করে ডিএনএর কর্তিত অংশ যখন জোড়া লাগে, তখন টেমপ্লেটে প্রদত্ত সিকোয়েন্স অনুসরণ করে নিউক্লিওটাইডগুলো সন্নিবেশিত হয়ে ডিএনএর নতুন অনুক্রম তৈরি হয়। এভাবে একটি জিনে বেশ বড় অংশ সুনির্দিষ্টভাবে সংশোধন করার সুযোগ থাকে।

ক্রিসপার-কাস৯-এর মাধ্যমে ডিএনএ (বা জিনের) কোনো অংশে এভাবে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন করতে পারার বিষয়টি জীবের জিনোম তথ্য ব্যবহার করার পথে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক।

এ কথা বোধ হয় এ লেখার প্রায় সব পাঠকেরই জানা যে জীবের স্বকীয়তা ও জীবনসংক্রান্ত প্রায় সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে তাদের ডিএনএতে। ডিএনএর যে নিউক্লিওটাইড অনুক্রম তাতে যেকোনো রকমের অসংগতির উদ্ভব হলে তা ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে জীবনের জন্য; বিশেষত এই অসংগতি যদি হয় ডিএনএর কার্যিক একক (ফাংশনাল ইউনিট) তথা জিনের কোনো অংশে। ক্রিসপার-কাস৯ পদ্ধতির মাধ্যমে জিনের পরিবর্তন বা অনুক্রম সুনির্দিষ্টভাবে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করার বিষয়টি অত্যন্ত আশাপ্রদ বিষয়। বিশেষত জিনের অনুক্রম পরিবর্তনের কারণে যেসব রোগ হয় আমাদের, তার স্থায়ী এবং নিশ্চিত চিকিত্সায় এ পদ্ধতির ব্যবহার খুবই সম্ভাবনাময়। বংশগত নানা রোগ থেকে ক্যানসারের মতো জটিল রোগের চিকিত্সায় বড় ধরনের অগ্রগতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে ক্রিসপার।

জীবের বৈশিষ্ট্যসংক্রান্ত সব তথ্য তার ডিএনএতে সংরক্ষিত। কম্পিউটারের সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, জীবের জীবন পরিচালনার সফটওয়্যার হচ্ছে তার ডিএনএ। এই ডিএনএতে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করে জীবের উন্নয়ন এবং নতুন ব্যবহার উদ্ভাবন বিজ্ঞানজগতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ক্রিসপার-কাস। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীব, উদ্ভিদ এবং প্রাণী—সবার জিনোম তথ্যেই এখন পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা বাস্তবে ধরা দিচ্ছে। মানুষের রোগব্যাধির প্রতিকার, ফসলের ফলন বৃদ্ধি কিংবা ব্যাকটেরিয়াকে ওষুধ উত্পাদনের কারখানা হিসেবে ব্যবহার সবকিছুই এখন বাস্তবতার দিকে ধাবিত হচ্ছে ক্রিসপারের ওপর ভর করে।

ক্রিসপার পদ্ধতিতে কোনো জিনকে সংশোধন করে লাভ হবে কি না, সেটা নির্ভর করে জিনটির গুরুত্ব বা ভূমিকার ওপর। ক্রিসপার একটি হাতিয়ারমাত্র। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার, ক্রিসপার-কাস৯-এর আগেও বিজ্ঞানীরা নিউক্লিয়াস ব্যবহার করে ডিএনএ অনুক্রম পরিবর্তন করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা ব্যবহারও হয়েছে বহুভাবে। টালেন (Transcription Activator-Like Effector Nucleases-TALENs) এবং জিঙ্ক ফিঙ্গার নিউক্লিয়াস (Zinc-Finger Nucleases-ZFNs) এ রকম দুটো জনপ্রিয় পদ্ধতি, যা ক্রিসপারের আগে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এই কৌশলগুলোর তুলনায় ক্রিসপারের খরচ অনেক কম, ব্যবহার করা সহজ এবং যেমনটি আগে বলা হলো—অনেক সুনির্দিষ্ট।

জিনোম তথ্য পরিমার্জনের বিষয়টি আগে যেমনটি ছিল কেবলই বনেদি গবেষণাগারগুলোর ব্যয়সাপেক্ষ গবেষণার বিষয়, ক্রিসপার তা এখন সাধারণ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। ক্রিসপার নিয়ে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানসচেতন মানুষের সম্ভাবনা ও শঙ্কার জায়গাটিও ওখানেই। জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতির পাশাপাশি জিনোম পরিমার্জনের এই সহজলভ্যতা এখন আমরা কীভাবে ব্যবহার করি, সেটাই নির্ধারণ করবে জিনোম তথ্যের খোলা পটে অঙ্কিত ভবিষ্যৎ।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়