পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখিগুলোর কয়েকটি প্রজাতি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের চেয়েও লম্বা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এদের ডানা হতে পারে কিং সাইজ বিছানার চেয়েও চওড়া। পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি আছে। এসব প্রজাতির মধ্যে আছে ছোট মৌমাছির আকারের হামিংবার্ড থেকে বিশালাকার উটপাখি। আজ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০টি পাখি সম্পর্কে জানব। এগুলোর মধ্যে আছে সবচেয়ে লম্বা, ভারী এবং চওড়া ডানাওয়ালা পাখি।
১. হারপে ঈগল
হারপে ঈগল নামটি প্রাচীন গ্রিকের একটি পৌরাণিক কাহিনী থেকে নেওয়া হয়েছে। এই গাঢ় ধূসর পাখিটি ঈগল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। শুধু লম্বায় নয় বরং ওজনের দিক থেকেও এটি বৃহত্তম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ঈগলের ওজন প্রায় ৯ কেজি এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ঈগলের ওজন প্রায় ৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। পাখিগুলো দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। এরা সাড়ে ৬ ফুট লম্বা ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ায় শিকারকে নজরে রাখার জন্য। শিকার দেখলেই ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে এরা নেমে এসে শিকারকে আক্রমণ করে। এদের পায়ে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা নখর আছে। শিকারকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে কাবু করে এই নখর দিয়েই। এরা সাধারণত শজারু ও হরিণ শিকার করে। হারপে ঈগলের বৈজ্ঞানিক নাম Harpia harpyja।
২. ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস
ডানার কথা বিবেচনা করলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস। এই সামুদ্রিক পাখির ডানা প্রায় ১১ ফুট লম্বা। এই পাখি অনেক লম্বা সময় আকাশে উড়তে পারে। যেমন, একটি অ্যালবাট্রস মাত্র ১২ দিনে ৬ হাজার কিলোমিটার ঘুরে বেড়ানোর রেকর্ড করেছিল। অ্যালবাট্রসের ২৩টি প্রজাতি আছে। তবে একটি প্রজাতি ছাড়া বাকি সবগুলোই আছে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। সাধারণত মাছধরা জাহাজ বা ট্রলার থেকে ছোঁ মেরে মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় জেলেদের জালে এরা আটকে পড়ে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচারের তথ্য মতে, জেলেদের জালে আটকে পড়ার কারণেই বিলুপ্তির হুমকিতে আছে ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস। এদের ওজন প্রায় ৬-১২ কেজি হতে পারে। এরা লম্বায় প্রায় ৩-৬ ফুট পর্যন্ত হয়। ওয়ান্ডেরিং অ্যালবাট্রসের বৈজ্ঞানিক নাম Diomedea exulans।
৩. উঠপাখি
আকার এবং ওজনের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি অস্ট্রিস বা উঠপাখি। উঠপাখি প্রায় ৯ ফুট লম্বা হতে পারে এবং ওজন প্রায় ১৩০ কেজি। এদের ডানা প্রায় ৭ ফুট লম্বা হলেও উঠপাখি উড়তে পারে না। উঠপাখি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। এরা ডানা মেলে দৌড়ায় এবং হঠাৎ থামার জন্য ডানা ব্যবহার করে। উঠপাখির এই আচরণ সিংহ বা শেয়ালের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। অনেক সময় উঠপাখি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এরা এদের শক্তিশালী নখযুক্ত পায়ের আঘাতে সিংহকেও কাবু করে ফেলতে পারে। উঠপাখির বৈজ্ঞানিক নাম Struthio camelus।
৪. বড় রিয়া
এই পাখিগুলো দেখতে উঠপাখির মতো হলেও এদের ওজন উঠপাখির পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এদের ওজন ৩০ কেজি এবং প্রায় ৫ ফুট লম্বা হতে পারে। এরাও উঠপাখির মতো উড়তে পারে না এবং দৌড়ানোর সময় নিজেদের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে ডানা ব্যবহার করে। রিয়া ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। স্ত্রী রিয়া প্রতি প্রজনন ঋতুতে চল্লিশটি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। পুরুষ রিয়া ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার ৩০ দিন আগেই বুঝতে পারে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Rhea americana।
৫. ক্যাসোওয়ারি
ডাইনোসরের মতো দেখতে এই ক্যাসোওয়ারি পাখিকে নিউ গিনি এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিনা ডগলাসের বলেছেন, জীবাশ্ম থেকে প্রমাণ মিলেছে যে মানুষ ১৮ হাজার বছর আগেও ক্যাসোওয়ারি পালন করতো। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা পাখিদের মধ্যে অন্যতম এই ক্যাসোওয়ারি। এরা প্রায় ৬ ফুট লম্বা হয়। পৃথিবীতে মানুষ হত্যাকারী পাখিদের মধ্যে ক্যাসোওয়ারি একটি। এদের প্রতি পায়ে ৪ ইঞ্চি ধারালো ৩টি করে নখ থাকে। এই নখের সাহয্যেই এরা শিকারের ওপর আক্রমণ করে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Casuarius casuarius।