বড় পর্দায় ডাইনোসর

প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে মহাপ্রতাপশালী এক প্রাণী। মানুষ পৃথিবীতে এসেছে মাত্র দুই লাখ বছর হলো। তাই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন ডাইনোসরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারা গেল, তখন থেকেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই প্রাণীকে ঘিরে মানুষের মনে অনেক কৌতূহল।

হলিউডের চলচ্চিত্রকারেরা মানুষের এই আগ্রহের ব্যাপারটা ভালোই বুঝেছিলেন। তাই তো অনেক ছবিতে ডাইনোসরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, এমনকি সেটা একটি দৃশ্যের জন্য হলেও। ডাইনোসর নিয়ে হয়েছে অনেক অ্যানিমেশন ছবিও। হলিউডের কাছে ছবি বানানোর প্রযুক্তি ও পুঁজি দুটোই ছিল। যখনই ডাইনোসর নিয়ে কোনো সিনেমা হয়েছে, বক্স অফিস ফুলেফেঁপে উঠেছে। এ রকম পাঁচটি হলিউড ছবির খবর নিয়ে আজকের আয়োজন।

জুরাসিক পার্ক

জুরাসিক পার্ক সিনেমার পোস্টার

১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি এখনো ডাইনোসর নিয়ে নির্মিত ছবির তালিকায় সেরা। হবে নাই-বা কেন, ছবির নির্মাতা যে স্বয়ং স্টিভেন স্পিলবার্গ! বক্স অফিসে সাফল্য তো আছেই, সমালোচকেরাও বারবার প্রশংসা করেছেন ছবিটির। ছবিতে স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহার দেখলে এখনো প্রশংসা করতে হয়। এটি তৈরি হয়েছিল মাইকেল ক্রাইটনের সর্বাধিক বিক্রীত উপন্যাস অবলম্বনে।

ছবিতে দেখা গেছে, জিনপ্রযুক্তির অনেক উন্নতির পর একসময় আবার বানানো হলো ডাইনোসর। উদ্দেশ্য, একটি দ্বীপে জুরাসিক পার্ক নামে একটি থিমপার্ক বানিয়ে সেখানে ডাইনোসরগুলোকে রেখে অর্থ কামানো। এসব ডাইনোসর অহিংস হবে, এটাই পরিকল্পনা। কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবের ফারাক বোঝা গেল তখনই, যখন ডাইনোসর মানুষকে মেরে ফেলতে লাগল।

জুরাসিক ওয়ার্ল্ড

জুরাসিক ওয়ার্ল্ড সিনেমার পোস্টার

২০১৫ সালে বলতে গেলে সারা বিশ্বের বক্স অফিসগুলোতে ডাইনোসরের তাণ্ডব চালিয়েছে এই ছবি। হলিউডের সর্বকালের সেরা আয়ের চতুর্থ স্থান এখন এই ছবির দখলে। ভাবা যায়, ডাইনোসর নিয়ে একটি ছবি এত আয় করতে পারে!

ছবির শুরু আবার জুরাসিক পার্ক থেকেই। ২২ বছর আগে যে প্রকল্পটি ভেস্তে গিয়েছিল, সেটি আবার চালু করতে চাইছে একদল লোক। এবারের প্রকল্প জুরাসিক ওয়ার্ল্ড নামের একটি জায়গা তৈরি করা। তারা চাইছে একটি মৃতপ্রায় পার্কে আবারও দর্শনার্থী ফিরিয়ে আনতে। বিজ্ঞান ও নীতির সব বাঁধ ভেঙে এখানেও হাজির হয় ডাইনোসর নামের প্রাণীটির নতুন সংস্করণ।

দ্য ল্যান্ড বিফোর টাইম

দ্য ল্যান্ড বিফোর টাইম সিনেমার পোস্টার

দ্য ল্যান্ড বিফোর টাইমস ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রথম ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। নির্মাতা ডন ব্লুথের ছবিটি এতই জনপ্রিয় হয় যে এরপর আরও ১৩টি ছবি বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ২০১৬ সালে। প্রথম ছবিটির ডাইনোসর চরিত্র লিটলহুড ছিল অ্যাপাটোসরাস গোত্রের ডাইনোসর। এখনো চরিত্রটি অনেক জনপ্রিয়।

লিটলহুডকে বাঁচাতে প্রাণ গিয়েছিল তার মায়ের। কোনো এক কারণে ডাইনোসর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তারা। মৃত্যুর আগে মা বলেছিল, গ্রেট ভ্যালিতে গেলেই লিটলহুড তার জ্ঞাতি ভাইদের দেখা পাবে। লিটলহুড তার বন্ধু অন্য প্রাণীদের দিয়ে রওনা হলো। পথে তার দেখা হলো এক ভয়ংকর ডাইনোসরের সঙ্গে। পরে জানা গেল, এই ডাইনোসরই মেরেছিল লিটলহুডের মাকে। তারপর?

দ্য গুড ডাইনোসর

দ্য গুড ডাইনোসর সিনেমার পোস্টার

পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওর ছবিটি ডিজনি মুক্তি দেয় ২০১৫ সালে। যেকোনো বিবেচনাতেই পিটার শন নির্মিত ডাইনোসরবিষয়ক ছবিটি সেরা একটি ছবি। ২০১৬ সালের গোল্ডেন গ্লোবে এটি সেরা অ্যানিমেশন ছবি হিসেবে পুরস্কার পায়। মনে করা হয়, ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে কোনো এক বিশালাকার গ্রহাণু পড়ার পর তার বিস্ফোরণে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়। যদি তা না হতো, তাহলে কী হতো? এ ছবি শুরু এখান থেকেই। কয়েক মিলিয়ন বছর পর ডাইনোসররা কি চাষাবাদ শিখত? আর মানুষ যদি হতো প্রভুভক্ত কুকুর? তাহলে সেই ডাইনোসর আর মানুষের বন্ধুত্ব হতো?

শিন গডজিলা

শিন গডজিলা সিনেমার পোস্টার

২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছে জাপানি এই ছবি। দর্শক ও সমালোচকদের রেটিংয়ের ওয়েবসাইট আইএমডিবি ও রটেন টমাটোজে এই ছবি বেশ প্রশংসিত। মুক্তি পাওয়ার প্রথম দিনে এটি পেছনে ফেলে দিয়েছিল ফাইন্ডিং ডোরির মতো ছবিকেও। কাহিনি টোকিও শহরের। হঠাৎ একদিন নদী থেকে উঠে আসে গডজিলা। আস্তে আস্তে এগোতে থাকে টোকিও শহরের মাঝপথ দিয়ে। ধ্বংস করতে থাকে রাস্তাঘাট, সুউচ্চ দালানকোঠা। গডজিলাকে থামাতে জাপানি সরকার ব্যতিব্যস্ত হতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে গডজিলা আকারে আরও বাড়তে থাকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই টোকিও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত