স্বীকৃতি পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী তিনি। এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানীদেরও একজন। দেশে কলেরা মহামারি নির্মূলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। করোনা মোকাবিলাতেও তিনি অগ্রণী সৈনিক। চলতি বছর এশিয়ান সায়েন্টিস্টে সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় নাম এসেছে তাঁর। সম্প্রতি পেয়েছেন এশিয়ার নোবেলখ্যাত র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার। কিছুদিন আগে বিজ্ঞানচিন্তা টিম তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল। গবেষণা, ব্যক্তিজীবন ও তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে নিজের ভাবনার কথা বলেছিলেন আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ ছাপা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার। ছবি তুলেছেন খালেদ সরকার।

বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী
খালেদ সরকার
প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি তো আইসিডিডিআর,বিতে বহুদিন ধরে আছেন। এ দেশের ডায়রিয়াল ডিজিজের সঙ্গে আপনার নাম যুক্ত হয়ে গেছে। তো আপনি ডায়রিয়াল ডিজিজের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কেন এবং আপনার এই পথচলা কেমন ছিল?

ফিরদৌসী কাদরী: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। জৈব রসায়নে। লেখাপড়া শেষে কী করব, তা নিয়ে ভাবছিলাম। শিক্ষকতা করার ইচ্ছে ছিল, আবার গবেষণা করার ইচ্ছাও ছিল। দ্বিতীয় ইচ্ছেটাই ছিল বেশি প্রবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ এল। সেটা কাজে লাগালাম। কিন্তু গবেষণার সুযোগ তেমন ছিল না বললেই চলে। এরই মধ্যে পিএইচডির সুযোগ এলো যুক্তরাজ্যের লিভারপুল থেকে। সেটা ছিল আমার জন্য দারুণ সুযোগ। চারটা-পাঁচটা পেপার প্রকাশ হলো ৫/৬ বছরের মধ্যে। আমি দেশে ফিরেছি ১৯৮০ সালে। ১৯৮৬ সালে আইসিডিডিআর,বিতে পোষ্ট ডক করার জন্য ভর্তি হই। প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগে। পরে এই বিভাগে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে নিয়োগ পাই। ১৯৮৮ সালে আমাকে বিভাগের প্রধান করা হয়। আমি বেসিক জৈব রসায়নসহ আরও কিছু বিষয়ে কাজ করেছি। সবই হলো অ্যাপ্লিকেশন টাইপের কাজ।

এক সময় পরিস্থিতি এমন হলো, যদি গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়, আইসিডিডিআর,বিতে তাহলে ডায়রিয়া নিয়েই কাজ করতে হবে। সেই সময় এটা তখন মারাত্মক রোগ ছিল। এখন তো অনেক ভ্যাকসিন আছে। তারপরেও প্রতি বছর অনেকে আক্রান্ত হন, মারাও যান কেউ কেউ। যাইহোক আমি শুরু করেছিলাম করলাম শিগেলা দিয়ে। এরপর মুভ করলাম কলেরায়। সে সময় বড় একটা সংক্রমণ হয়েছিল। তখন কলেরা নিয়ে কাজ করার সুযোগ এল। সারাজীবন কলেরা নিয়েই আছি।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি গবেষক হতে চাইতেন বললেন। ঠিক কোন বয়সে ভাবলেন গবেষক হবেন? গবেষক হওয়ার পেছনে উৎসাহ পেলেন কীভাবে?

ফিরদৌসী কাদরী: আমার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। আমার নানীর চিন্তাধারাও ছিল খুব আধুনিক। তিনি মনে করতেন, মেয়েদেরও পড়াশোনা করা উচিৎ। তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। নানা-নানী দুজনেই ভূমিকা রেখেছেন আমার গবেষক হওয়ার পেছনে। সত্যি বলতে কি, নানীই আমাকে লালন করেছেন। তিনি আমাদের বাড়ির কাজের পাশাপাশি বাইরের কাজও শেখাতেন। তখন আমার বোনেদের বিয়ের প্রস্তাব আসত। নানি এগুলোর প্রশ্রয় দিতেন না। বরং বিয়ের প্রস্তাব এলে তিনি রেগে যেতেন। পড়তে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে; এটাই আমাদের বলতেন সব সময়। নানাও ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। অর্থাৎ বাড়িতে একটা পরিবেশ ছিল পড়াশোনার।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার লেখাপড়া এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।

ফিরদৌসী কাদরী: আমার জন্ম ঢাকায়। প্রথমে ভিকারুননিসা নুন স্কুলে, এরপর হলিক্রস কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করে পিএইচডি করতে বাইরে যাই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি নিজে একটা গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন করেছেন আইদেশি। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আপনার আছে। এসব সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?

ফিরদৌসী কাদরী: আমার কাছে মনে হয়, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার মধ্যে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। আমি সব সময় সুবিধাটা দেখি। আমাদের সরকারি সংস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমি সরকারি সংস্থার সাথে কাজ না করলে অন্য কোনো সংস্থার সাথে কাজ করতে পারতাম না। আমি এখনো অনেক কাজ করি। ব্র্যাকের সাথে কাজ করি। সেখানে লেকচার দিই। বেশ কিছু সংস্থার সাথে কাজ করি। আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করে সাফল্য কী? আমি আইসিডিডিআর,বিতে আছি। কিন্তু এখানে অনেক লোক কাজ করে। এদের যে কাজের যে ধরন, সেভাবে কাজ না করতে পারলে আমি কখনো কাজ করতে পারব না। আমি আসলে অন্যান্য ডিভিশনের সঙ্গেও কাজ করি। এবং এটা করতে হবে। কারণ আমি একা সব কাজ করতে পারব না। আর এটা এখন এমন হয়েছে যে, সবার সঙ্গে কাজ না করতে পারলে আমার ভালোও লাগে না। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন, আইদেশি কেন করেছেন? করেছি কারণ, আমি মনে করে আমি বাংলাদেশের কাছ থেকে, আমার ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। আমাকেও তো কিছু দিতে হবে ছেলেমেয়েদের। আইদেশি তো আমি সাথে করে নিয়ে যাব না। থেকে যাবে সবার জন্য। এই ব্যাপারটা সবাই বুঝতে পারলে এটার মর্যাদা আরও বাড়বে।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বে দেখা যায় বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণেরর হার কম। নারী বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আপনাকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে?

ফিরদৌসী কাদরী: আমি কয়েকজন মেয়েকে গড়ে তুলেছি। তাঁদের আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের আমি কী শিখালাম? কী শিখতে পেরেছ তোমরা? যেটা বললাম, সব মেয়েকে আমি শক্তভাবে ট্রেইন করি। কারণ ছেলেদের এভাবে ট্রেইন করার দরকার পড়ে না। তারা জানে, তাদের কাজ করতে হবে, বাইরে আসতে হবে। মেয়েদের কিন্তু অনেক বাধ্য-বাধকতা থাকে। পারিবারিক বাধা থাকে, অনেক মেয়ে গবেষণা বা কঠিন কোনো কাজে যেতেই চায় না। নারীদের সফল হতে হলে কঠিন বাধা পাড়ি দিতেই হবে। কোনো নারী ভালোভাবে কাজ করতে না পারলে, তাকে তো কেউ চাকরি দেবে না। মেয়ে হিসাবে যেহেতু জন্মেছি, আমাদের স্বীকৃতি পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি মেয়েদের শেখাই, আমরা যখন কাজ করব, তখন শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব। তুমি কম সময় থাক, কিন্তু পুরো সময়টা তোমাকে কাজ করতে হবে। এই মেয়েদের অনেক কাজ করতে হয়, লিখতে হয়, ল্যাবে কাজ করতে হয়। এদের অনেকের সাথে কাজ করা শিখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, স্বীকৃতি পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

আমি বাসায় চলে যেতাম সময়মতো। বাসায় বাচ্চাদের অনেক সময় দিতাম। রাতে আমরা একসাথে খেতাম। এরপর ওদের নিয়ে পড়তে বসতাম। রাত সাড়ে নটার মধ্যে ওদের সঙ্গেই আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। বাচ্চাদের শতভাগ অ্যাটেনশন দিতে হবে। কাজ করেও বাচ্চাদের এই সময়টা দিতে হবে। এছাড়া শতভাগ ডেডিকেশন থাকতে হবে। আজ একটু করলাম, আগামীকাল ভাবলাম, থাক আজ অনেক কাজ হয়েছে। আবার দুদিন পরে কাজ শুরু করলাম। এভাবে করলে হবে না। ডেডিকেশন থাকতে হবে। আমার সাথে যারা কাজ করে তাঁদের আমি সব সময় এটা শেখাই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: গবেষণার করা এমনিতেই কঠিন। নারীদের জন্য সেটা আরও কঠিন। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বেই একই অবস্থা। সে ক্ষেত্রে মেয়েদের গবেষণায় নিয়ে আসতে মোটিভেশনাল ফ্যাক্টর হিসাবে কী করা যায়?

ফিরদৌসী কাদরী: আমাদের এখানে একটা বাচ্চা রাখার নার্সারির মতো আছে। অবশ্য এখন কোভিডের কারণে বন্ধ রয়েছে সেটা। আইসিডিডিআর,বির মেয়েরা বাচ্চাদের এখানেই রাখে। লাঞ্চের সময় তারা একটু দেখে আসে বাচ্চাদের। এটাতে কিন্তু অনেক লাভ। বাচ্চা এবং মা দুজনেই প্রফুল্ল থাকতে পারে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আইসিডিডিআর,বি মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টা অনেক ভালোভাবে দেখে। তাঁদের যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে দিকে লক্ষ রাখে। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের ব্যাপারে আইসিডিডিআর,বি কিন্তু খুবই কড়া। একটা মেয়ে রাত দশটা পর্যন্ত থাকলেও সে নিরাপদে কাজ করতে পারে। এটা যেমন আমি জানি, তেমনি এখানকার মেয়েরাও জানে। যখন একটা মেয়ে কাজ করে, তাকে আমরা গাড়ি দেই। গাড়ি ছাড়া কখনো তাকে একা ছাড়ি না। মেয়েদের আসলে কষ্ট করতে হয়। বিদেশেও অনেক ক্ষেত্রে গবেষণা কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণের হার কিন্তু বেশি নয়। কারও মা, কারও শাশুড়ি এরকম সাপোর্ট দিতে পারে না। বিদেশে তাই মেয়েরা খুব বেশি কাজ করতে পারে না। আমাদের কিন্তু অনেক সাপোর্ট আছে। পরিবারের সাপোর্ট আমাদের অনেক বেশি। আমরা রান্না করার জন্য, ঘর পরিষ্কার করার জন্য লোক পাই। অর্থাৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে অনেক বেশি সহাযোগিতা পাই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের একটা বড় অংশ তরুণ। এবং বিজ্ঞানে আগ্রহী তরুণ পাঠকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। যদি তরুণরা কেউ আপনার সঙ্গে গবেষণা করতে চায়, তাহলে কী করতে হবে, বা কীভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে।

ফিরদৌসী কাদরী: ইচ্ছা করে সবাইকে আমার কাছে নিয়ে আসতে। আমাদের ল্যাব কত বড় আপনারা তো দেখেছেন। আমরা মাঠেও কাজ করছি। আমি কিন্তু মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও অনেক উৎসাহ দিই। তাঁরাও অনেক ডেডিকেটেড হবে। এটা সব সময় যেন থাকে। কোভিড চলে গেলে যেন এটা চলে না যায়। কারণ আমি সবাইকে জায়গা দিতে পারব না। আরও জায়গা তৈরি করতে হবে। এবং সরকার এবার গবেষণার জন্য টাকা বাড়িয়েছে। আমি চাই এটা যেন না কমে। আরও বাড়তে থাকে যেন। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে টাকাটা যেন অনেক বেশি থাকে, তাহলে আমার মতো আরো অনেকে উঠে আসবে। আমরা আসলে অনেক জায়গায় টাকা দিই। আমি যখন আইদেশি করলাম আমাকে কয়েকজন বলল, এটা করতে, ওটা করতে। ভারতে টাটা আছে, বিদেশে আছে গেটস ফাউন্ডেশন, আমাদের অনেক বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি আছে, কিন্তু তাঁরা এভাবে সহায়তা করতে নামে না। তাঁরা তো চাইলেই ল্যাব তৈরি করতে পারে। কিন্তু সে কালচার এখনো গড়ে ওঠেনি এদেশে। আমরা চেষ্টা যে করিনি, তা নয়। কিন্তু হয়নি। এখন ছোট্ট পরিসরে হলেও যদি কিছু উদাহরণ রেখে যেতে পারি, তাহলে অনেক কাজ হবে।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার পরিবার সম্পর্কে একটু কিছু বলুন।

ফিরদৌসী কাদরী: আমি বেশি ব্যাক্তিগত কথা বলতে চাই না। নানা-নানী আমার পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁদের যে ডেডিকেশন ছিল, সেটা না থাকলে আজকে আমি এখানে থাকতাম না। নানী আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। এরপর আমার নিজের একটা পরিবার হলো। আমার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। আমি যেমন দেশে ফেরত এসেছিলাম, আমি চাইছিলাম আমার বাচ্চারাও দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু বাচ্চারা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করলো, ওদের সহপাঠিরা সব বিদেশ যেতে শুরু করল। আমি ওদের বললাম, আমরা দেশে ফিরে এসেছি, তোমরা কোথায় যাবে? তোমরাও দেশে থাকো।

আমার স্বামী বললেন, এটা ঠিক নয়। বড় ছেলেকে ডেকে বললেন, তুমি বাইরে যেতে চাইলে অ্যাপ্লাই করতে পার। কিন্তু মনে রাখবে, তোমাদের সম্পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে যেতে হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। আমি মন খারাপ করলাম। কিন্ত ছেলে ঠিকই অ্যাপ্লাই করল এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল। চলে গেল সে। বড় ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মেজ জনও চলে গেল কানাডায়। মেয়েকে আমরা আরো বেশি উৎসাহ দিলাম। মেয়ে বলে যেতে পারবে না, তা হতে পারে না। সেও চলে গেল।

এখন আমরা বাংলাদেশে আমার ছেলে মেয়েদের কেউ নেই। শুধু দুজন থাকি। প্রায়ই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমার বাসায় যে মেয়েটা কাজ করে, ওকে আমি পড়িয়েছি। ও এখন মেসেজ পড়তে পারে। আমার নোটগুলোও লিখে নিতে পারে।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: এত কাজের ফাঁকে আপনি অবসর সময় কীভাবে বের করেন? অবসরে আপনি কী করেন?

ফিরদৌসী কাদরী: আমি হাঁটতে পছন্দ করি। প্রতিদিন ১০ হাজার স্টেপ হাঁটি। কয়েক মাসে থেকে আমি আরও বেশি হাঁটছি। এখন আমি ২০ হাজার স্টেপ হাঁটি। ভোরে ৬/৭ হাজার স্টেপ হেঁটে আসি। এটা আমার খুব প্রিয় জিনিস। গাছপালা আমার খুব প্রিয়। হাঁটতে হাঁটতে আমি রাস্তার পাশ থেকে ফুল সংগ্রহ করি। ফুলগুলো বাসাই নিয়ে আবার সাজাই। সময় পেলেই ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলি।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: এমন কোন বই আছে যেটা আপনার ভালো লেগেছিল এবং সেটা সবার পড়া উচিৎ?

ফিরদৌসী কাদরী: শরৎচন্দ্রের বই অনেক পড়তাম। সেখান থেকে অনেক শিখেছি। ইংরেজি বই পড়া হত। আমার পছন্দের একটা বই ছিল। লিটল উইম্যান। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাই, তাই এখন রাত জেগে বই পড়া হয় না। তাড়াতাড়ি ঘুমাই এবং সকালে উঠলে আমি খুব ফ্রেশ থাকি।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: শেষ প্রশ্ন। বিজ্ঞানচিন্তার বেশির ভাগ পাঠকই তরুণ। এই পাঠকদের জন্য কিছু একটা বলুন।

ফিরদৌসী কাদরী: সবার গবেষণা করা উচিৎ বলেই আমি মনে করি। বাংলাদেশে ফেসবুক অনেক প্রচলিত এবং সবাই পছন্দ করে। ফেসবুকে বেশি সময় নষ্ট না করে গবেষণা করা উচিৎ। গবেষণা না করলেও গবেষণাবিষয়ক বই পড়া উচিৎ। কোভিডের সময় সবাই এখন ভ্যাকসিন, ইমুনিটি, ভাইরাস সম্বন্ধে জানে। এটা যেন চলতে থাকে। এরকম আমাদের সব বিষয়ে জানা উচিৎ। এবং সবার পড়াশুনা করা উচিৎ। এবং চাহিদা বুঝতে হবে। তরুণরা কি চায়? তরুণদেরও বলতে হবে, হ্যাঁ আমরা এটা চাই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: ধন্যবাদ ম্যাম, আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।

ফেরদৌসী কাদরী: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

অনুলিখন: মিজান স্বপন

*লেখাটি ২০২১ সালে বিজ্ঞানচিন্তার সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত