বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি

বিজ্ঞানচিন্তার বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পাঠকের অনুভূতি, মতামত বা অভিজ্ঞতা লিখে পাঠাতে বলেছিলাম আমরা। অনেক পাঠক লেখা পাঠিয়েছেন, জানিয়েছেন মতামত। অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ। এসব লেখা থেকে বাছাইকৃত সেরা তিনটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানচিন্তার অক্টোবর ২০২৩ সংখ্যায়। এ ছাড়াও আরও সাতটি, অর্থাৎ সেরা ১০টি লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে বিজ্ঞানচিন্তা অনলাইনে।

পঞ্চম সেরা লেখাটি আজ প্রকাশিত হলো।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। এক বন্ধু বলেছিল, গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির জন্য কিছু সমস্যা এই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এ জন্য জানুয়ারির শেষের দিকে বিজ্ঞানচিন্তা কিনি। সত্যি বলতে, গণিত অলিম্পিয়াডের ওই সমস্যাগুলো ছাড়া আমার কোনো উৎসাহ ছিল না বিজ্ঞানচিন্তা পড়ার। যাহোক, গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করা আর হয়ে ওঠেনি। তবে বিজ্ঞানচিন্তা সঙ্গে থেকে যায়। জানুয়ারির সেই সংখ্যা ছিল ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে। তখন সবে নবম শ্রেণিতে উঠেছি। ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে লেখা সব ফিচার সেভাবে বুঝতে পারিনি। অন্য ফিচারগুলোও তেমন বুঝিনি। শেষ পৃষ্ঠায় কুইজ দেখেছিলাম, কিন্তু জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল ততদিনে। তাই ভাবলাম, পরের মাসে অন্তত কুইজের উত্তর পাঠাতে বিজ্ঞানচিন্তা কিনব। এবার একেবারে ১৫ ফেব্রুয়ারিতেই বিজ্ঞানচিন্তা কিনি। এ সংখ্যাটা ছিল জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে—মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি। সেই সংখ্যাটাও পুরো বুঝিনি। তবে আমাদের দেশে যে এত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন আর তিনি যে আড়ালেই রয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর সম্পর্কে পড়ে অনেক ভালো লেগেছিল। এ সংখ্যায় জামাল নজরুল ইসলামের ব‌ই দি আল্টিমেইট ফেইট অব দি ইউনিভার্স-এর অনুদিত অংশবিশেষ আমার অনেক ভালো লাগে। তখন প্রথম আমি আবিষ্কার করি যে পাঠ্যব‌ইয়ের বাইরে আমি বিজ্ঞানের কিছু আগ্রহ নিয়ে বুঝতে শুরু করেছি।

এ সংখ্যার কুইজটাও পাঠিয়েছিলাম। পরের সংখ্যায় পুরষ্কারও পেয়েছিলাম‌ (যদিও নাম ভুল ছাপা হয়েছিল!)। পরের সংখ্যা ছিল পর্যায় সারণি নিয়ে। আমিও তখন সবে রসায়নের চতুর্থ অধ্যায়ে পর্যায় সারণির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তাই সংখ্যাটা শতভাগ উপভোগ করেছিলাম। এরপর চলতে থাকে বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে আমার পথচলা। ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হ‌ওয়া থেকে স্বপ্নটা যে কখন বিজ্ঞান নিয়ে কিছু করার দিকে চলে গেল, বুঝতেই পারিনি। সেই ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩—প্রায় ৫ বছরের একটি সংখ্যাও সংগ্রহ করা বাদ দিইনি। এইচএসসি ও ভর্তি পরীক্ষার জন্য কয়েক মাস থেকে অবশ্য পড়া হয় না, তবে সব জমিয়ে রেখেছি। সব শেষ করে আবার সময় করে পড়া শুরু করব বিজ্ঞানচিন্তা।

পাঠ্যব‌ইয়ের বাইরে বিজ্ঞানের বিশাল জগতের প্রতি আগ্রহ জন্মানো, ছাপার অক্ষরে আমার প্রথম লেখা (ডাকবাক্স), প্রতিমাসে ডাকঘরে গিয়ে কুইজের চিঠি দেওয়া, গণিতের সমস্যা সমাধানের চেষ্টাসহ আরও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে। সাত বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা। আশা করি, আগামীতেও এক‌ইভাবে বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গঠনে ভূমিকা রেখে যাবে আর আমার মতো অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর মনে বিজ্ঞানের চিন্তা সৃষ্টি করে চলবে।

আলী রাইহান স্বপ্ন, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর