সংখ্যা পদ্ধতিতে একধরনের সংখ্যা আছে যাদের বলা হয় জটিল সংখ্যা। এদের আবার দুটো অংশ। একটি অংশের নাম বাস্তব অংশ, অপরটিকে বলা হয় কাল্পনিক অংশ। বাস্তব দুনিয়ায় নাকি এই কাল্পনিক অংশের কোনো ভূমিকা নেই। এর কারণটাকে প্রথম দৃষ্টিতে খুব যৌক্তিক বলেই মনে হয়। কিন্তু এই মত কতটা সঠিক, আমরা একটু যাচাই করতে চাই। তার আগে দেখে নিই একে অবাস্তব কেন বলা হয়।
আমরা জানি, ৩×৩ = ৯, আবার (-৩) × (-৩)= ৯। তার মানে ৯ কে বর্গমূল করলে আমরা ৩ এবং (-৩) দুটোই পাচ্ছি। (-৩) ও যদি ৯ থেকেই পেয়ে যাই, তাহলে (-৯) থেকে কী পাব? সাধারণ অবস্থায় কিছুই পাব না, কারণ কোনো সংখ্যাকে বর্গমূল করলে আমরা পাই সেই সংখ্যা, যাকে নিজের সঙ্গে গুণ করলে আগের সংখ্যাটি পাব। এখন এমন কোনো সংখ্যা কি বাস্তব জগতে আছে, যাকে নিজের সঙ্গে গুণ করলে মাইনাস কোনো সংখ্যা পাওয়া যাবে? ঋণাত্মক সংখ্যারাও নিজের সঙ্গে গুণ হয়ে ধনাত্মক হয়ে যায় বলেই যত সমস্যা। অতএব যেকোনো ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল অবাস্তব সংখ্যা!
এখন দেখা যাক এই অবাস্তবরা আসলে কতটা অবাস্তব। বাস্তব সংখ্যা বলতে আমরা স্বাভাবিক সংখ্যা (১, ২... অসীম পর্যন্ত), পূর্ণসংখ্যা (ঋণাত্মক অসীম,.., -২, -১, ০, ১, ২,.., ধনাত্মক অসীম) এবং সব রকম মূলদ (পূর্ণসংখ্যার অনুপাত যেমন ৩/৪) ও অমূলদ সংখ্যাকে (যেমন পাই (π), যার মান ৩.১৪১৫৯...) বুঝি। এদের আমরা এই সংখ্যারেখার মাধ্যমে প্রকাশ করি।
একসময় কিন্তু ঋণাত্মক সংখ্যাকেও এলিয়েন ভাবা হতো। একসময় মনে করা হতো, বাস্তত জগতে এদের কোনো কাজ নেই। যেমন কারও কাছে ৫ টাকা আছে। সে কি এখান থেকে কাউকে ৮ টাকা দিতে পারে? ৫ থেকে কি ৮ বিয়োগ করা যায়? প্রথমে অসম্ভব মনে হলেও পরে দেখা গেল যে হ্যাঁ, যায়। সে কারও কাছ থেকে ৩ টাকা ধার নিয়ে আরেকজনকে পুরো ৮ টাকা দিতে পারে। তবে, সে ৩ টাকা দেনা থাকল। তার মানে -৩ হলো ৩-এর বিপরীত। ধরা যাক, আমি ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা ঋণী। এর মানে ব্যাংকে আমার মাইনাস ১০ লাখ টাকা আছে। এভাবে চিন্তা করতে গিয়েই ঋণাত্মক সংখ্যাকে নিয়ে আসা হয় বাস্তব জগতে।
এরপর ভগ্নাংশের সঙ্গেও একই আচরণ করা হয়েছিল। পরে খুঁজে পাওয়া যায় তাদেরও যৌক্তিকতা। এখন আমরা দেখতে চাই অবাস্তব বা জটিল সংখ্যাকেও বাস্তব জগতে নিয়ে আসা যায় কি না। ওপরের ছবিতে দেখুন, ঋণাত্মক সংখ্যারা থাকে ধনাত্মক সংখ্যার উল্টো দিকে। গণিতের ভাষায় যাকে বলে ১৮০ ডিগ্রি বা সরল কোণের অবস্থানে। -১ এর কথাই ধরা যাক। -১ এর বর্গ করার (-১×-১) মানে হলো ১-কে দুবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেওয়া (বিপরীত অবস্থানে আনা)। ফলে একবার ঘুরিয়ে পাব -১, আবার ঘুরে হয়ে যাব ১। ফলে ঋণাত্মক সংখ্যা -১ এর বর্গ ধনাত্মক ১ হয়ে যাচ্ছে। এই গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়া দরকার। ভালো করে খেয়াল করুন। মাইনাস দিয়ে গুণ দিলেই একসঙ্গে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাচ্ছে। অন্যদিকে, -১ (বা -৯ ইত্যাদি)-এর বর্গমূল নিতে হলে এমন একটি সংখ্যা দরকার, যেটি একবার ঘুরেই নয়, বরং দুবার ঘুরে -১ হবে। তাহলে সেটিকে একবারে ১৮০-এর অর্ধেক, মানে ৯০ ডিগ্রি ঘুরতে হবে। আমরা নতুন একটি সংখ্যা কল্পনা করি। একে নাম দেই i। ধরি, ।i। = -৯। এই i (একে আমরা ১i ও বলতে পারি) ১-কে প্রথমে ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দ্বিমাত্রিক বানিয়ে দেবে। আরেকটি i গুণ হয়ে সেটি পৌঁছাবে -১ এ (১ নং ছবি দেখুন)।
তার মানে, তথাকথিত জটিল সংখ্যা আসলে দ্বিমাত্রিক সংখ্যা, যেখানে আমাদের পরিচিত বাস্তব সংখ্যা হলো এক মাত্রার সংখ্যা। জটিল সংখ্যায় দুটি অংশ থাকে। একটি হলো বাস্তব অংশ, অপরটি কাল্পনিক।
বাস্তব জগতেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বহু বৈজ্ঞানিক সূত্রে এই অবাস্তব সংখ্যাদের উপস্থিতি রয়েছে, যা এদের অবাস্তব না বলার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমরা এর উদাহরণ দেখার চেষ্টা করব।
সূত্র: বেটার এক্সপ্লেইনড ডট কম
*লেখাটি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত