শৈশবে আমরা গণিত বলতে শুধু সংখ্যা বুঝি। যখন একটু একটু করে কথা বলতে শিখি, তখন থেকেই আমাদের শেখানো হয় ১, ২, ৩…। তারপর আরেকটু বড় হলে শিখি যোগ-বিয়োগ। ধীরে ধীরে গুণ, ভাগ, ভগ্নাংশ, দশমিক আর ঋণাত্মক সংখ্যাও শিখতে থাকি। তারপর প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে এলেই সংখ্যার সঙ্গে অক্ষরও থাকে। x, y, z, a, b, c, n সবচেয়ে পরিচিত অক্ষর। এগুলো গণিতে কেন ব্যবহার করা হয়? বুঝতেই পারছ, আমরা গণিতের অ্যালজেব্রা বা বীজগণিতের কথা বলছি। বীজগণিতে অঙ্কগুলোকে বলে সমীকরণ। আর সমীকরণ সমাধান করতে গেলে x, y, z ধরে করতে হয়। এই সমীকরণে যে অজানা সংখ্যা থাকে, সেটাই বের করতে হয় এই অক্ষরগুলোর সাহায্যে। এই অক্ষরগুলোর একটা বিশেষ নামও আছে—চলক।
একটা সহজ উদাহরণ দেখা যাক: 7 + n = 15। এখানে ‘n’ হচ্ছে চলক। মানে, আমরা n-এর মান জানি না। এই মান খুঁজে বের করাই হলো বীজগণিতের কাজ। এই অঙ্কটা ঠিকঠাক করতে হলে একটা নিয়ম মনে রাখতে হবে, সমান চিহ্নের দুই পাশে যা-ই করো না কেন, সেটা একই রকম করতে হবে। যেমন যোগ করলে উভয় পাশে যোগ করতে হবে, আবার বিয়োগ করলেও তাই।
7 + n = 15 এই সমীকরণে n-এর মান বের করার জন্য আমরা n-কে একপাশে (বাঁ পাশে) রাখতে চাই। তাই উভয় পাশ থেকে ৭ বিয়োগ করি। তাহলে:
7 + n - 7 = 15 – 7
বা, n = 8
ব্যস, পাওয়া গেল উত্তর! n-এর মান হলো ৮। খেয়াল করো, সমান চিহ্নের একদিকে কি শুধু চলক n আছে? উত্তর, হ্যাঁ। আর কোনো যোগ, বিয়োগ, গুণ বা ভাগের কাজ কি বাকি আছে? উত্তর, না। তার মানে, আমরা সমীকরণটা সমাধান করে ফেলেছি! এই অঙ্কে n-এর মান হলো ৮।
এবার একটু মিলিয়ে দেখি। 7 + 8 = 15, অর্থাৎ, বাঁ পাশ ও ডান পাশের মান সমান। এভাবে বীজগণিতের সাহায্যে অজানা সংখ্যার মান বের করতে হয়।
গণিতের অন্যান্য শাখা, যেমন পাটিগণিত বা জ্যামিতির মতো বীজগণিতও আমাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। টাকা-পয়সার হিসাব রাখা, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, এমনকি মহাকাশ মিশনেও আছে বীজগণিতের ব্যবহার।
গণিতে কেন অক্ষর ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে হয়তো কিছুটা ধারণা পেয়েছ। এবার আরও একটা উদাহরণ দিই। ধরো, 3 + __= 10। এই সমস্যাটাকে তুমি কীভাবে পড়বে? ‘থ্রি প্লাস সামথিং ইকুয়ালস টেন’? বা পড়তে পারো, ৩ যোগ ড্যাশ সমান ১০। এই যে সামথিং বা ড্যাশ বলছি, এই জায়গাটা পূরণের জন্যই ব্যবহার করা হয় অক্ষর। যদি আমরা ফাঁকা জায়গার পরিবর্তে ওখানে x ব্যবহার করতাম, তাহলে কিন্তু সহজে বলা যেত, থ্রি প্লাস এক্স একুয়ালস টেন বা ৩ যোগ এক্স সমান ১০। গাণিতিক রূপটা হবে এমন, 3 + x = 10। এবার মান বের করাও সহজ হবে। x = 10 - 3 = 7। অর্থাৎ x-এর মান ৭।
আজ তোমরা যত সূত্র দেখছ, সবই সম্ভব হয়েছে এসব অক্ষরের জন্য। অক্ষর দিয়ে গণিত লেখার কারণে বদলে গেছে গণিতের পুরো কাঠামো।
বীজগণিতে এই অক্ষর ব্যবহারের গুরুত্বটা কি বুঝতে পারছ? বুঝিয়ে বলছি। আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছ। তাঁর বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমীকরণ E = mc2। এটাকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় সমীকরণ। এই সমীকরণে E মানে শক্তি, m মানে ভর এবং c হলো আলোর গতি। যদি গণিতে অক্ষরের ব্যবহার না হতো, তাহলে কি এই সমীকরণ বানানো সম্ভব হতো? গাণিতিক সমীকরণ সাধারণ বা জেনারেলভাবে প্রকাশ করা তখন অসম্ভব না হলেও অনেক কঠিন হয়ে পড়ত।
আজ তোমরা যত সূত্র দেখছ, সবই সম্ভব হয়েছে এসব অক্ষরের জন্য। অক্ষর দিয়ে গণিত লেখার কারণে বদলে গেছে গণিতের পুরো কাঠামো। কীভাবে শুরু হয়েছিল গণিতে এই অক্ষরের ব্যবহার? সে গল্প তোলা রইল আরেকদিনের জন্য।