গণিতের আরও ৫টি মজার কৌশল

গণিত আর মজা অনেকের কাছে বিপরীত শব্দ। যেন পাশাপাশি মানায় না। দা-কুমড়ার সম্পর্কের মতো। কিন্তু আসলে এটা ঠিক নয়। গণিতেও আছে মজা। একটু কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হবে, এই যা। অবশ্য আজ আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। আমিই খুঁজে বের করেছি গণিতের আরও পাঁচটি মজার কৌশল। এর আগের পর্বে পাঁচটি কৌশল দেখিয়েছিলাম। এ লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন।

কিন্তু কী হবে এ কৌশল শিখলে? আসলে আপনার কাছে গণিতকে খটমটে কঠিন বিষয়টি মনে হলে, তা কিছুটা দূর হবে। কাটতে পারে গণিতভীতিও। পাশাপাশি এ কৌশলগুলো আপনাকে আরও দ্রুত ও সহজে গণনা করতে সাহায্য করবে। নিজের গাণিতিক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি আপনি এ কৌশলের সাহায্যে শিক্ষক, পিতা-মাতা ও বন্ধুদের প্রভাবিত করতে পারেন।

আরও পড়ুন

১. পাইয়ের মান মনে রাখার কৌশল

পাই কী, তা মোটামুটি সবাই জানেন। এটাও নিশ্চয়ই জানেন যে পাইয়ের মানগুলোর মধ্যে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। মানে কোনো সূত্রের ছাঁচে ফেলে আপনি পাইয়ের মান মুখস্ত করতে পারবেন না। তবে এ পদ্ধতিতে অন্তত পাইয়ের প্রথম ৭টি মান মনে রাখতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে মনে রাখতে একটি ইংরেজি বাক্য—How I wish I could calculate pi। সহজেই মনে থাকার কথা। কঠিন মনে হলে আপনি নিজেই এমন একটি বাক্য বানিয়ে নিতে পারেন। খেয়াল করুন, How শব্দটিতে ৩টি বর্ণ আছে। সুতরাং, পাইয়ের মানের ক্ষেত্রে প্রথমে বসবে ৩। এরপর I মাত্র এক শব্দের। অর্থাৎ ৩-এর পরে বসবে ১। এভাবে ক্রমান্বয়ে মান বসালে দেখবেন ওই বাক্যটি থেকে পাইয়ের মান পেয়েছি ৩.১৪১৫৯২। আর বাস্তবে অঙ্ক কষতে আমাদের এর চেয়ে বেশি পাইয়ের মান না জানলেও চলে।

২. ১২৪৫৭৮-এর জাদু

নিচের শর্তানুসারে আপনি যদি গুণ ও ভাগ করেন, তাহলে উত্তর পাবেন সবসময় ওপরের সংখ্যাটির মধ্যে কিছু একটা। মানে আপনার উত্তরে ওই অঙ্কগুলোর বাইরে আর কোনো অঙ্ক আসবে না। প্রথমে শর্তগুলো জানা যাক। সম্ভব হলে একটি ক্যালকুলেটর কাছে রাখুন। হিসাব দ্রুত করা যাবে। 

ক) ১-৬ এর মধ্যে যেকোনো একটি সংখ্যা নিন

খ) সংখ্যাটিকে গুণ করুন ৯ দিয়ে

গ) এবার গুণফলকে আবার ১১১ দিয়ে গুণ করুন 

ঘ) গুণফলকে আরও একবার গুণ করুন ১০০১ দিয়ে

ঙ) আবার ভাগফলকে ভাগ করুন ৭ দিয়ে

ব্যস, আপনার কাজ শেষ। এবার মিলিয়ে দেখুন, উত্তর নিশ্চয়ই ওপরের জাদুর সংখ্যাটি দিয়ে হয়েছে। 

একটু মিলিয়ে দেখা যাক। প্রথম সংখ্যাটি নিলাম ৬। একে ৯ দিয়ে গুণ করলে পাব ৫৪। আর ৫৪-কে ১১১ দিয়ে গুণ করলে হবে ৫,৯৯৪। এবার ৫,৯৯৪ × ১০০১ = ৫৯,৯৯,৯৯৪। এই গুণফলকে ৭ দিয়ে ভাগ করলে পাব ৮,৫৭,১৪২। এখন ওপরের সংখ্যাটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন, ঘুরেফিরে ওই সংখ্যার অঙ্কগুলোই আছে এখানে। আবার প্রথমে ২ ধরে এ সমাধানটি করলে উত্তর আসবে ২,৮৫,৭১৪। অর্থাৎ ঘুরেফিরে উত্তর ওপরের ওই সংখ্যার অঙ্কগুলো দিয়েই হবে।

আরও পড়ুন

৩. গুণের সহজ কৌশল 

যে দুটি সংখ্যা গুণ করবেন, তার মধ্যে একটি যদি হয় জোড় সংখ্যা, তাহলেই এই নিয়ম খাটবে। নিয়মটাও বেশ সহজ। ধরুন, আমরা ১২০ ও ২০ গুণ করব। প্রথমে ২০-কে ২ দিয়ে ভাগ করে ১২০-কে ২ দিয়ে গুণ করবেন। আরও স্পষ্ট করে বললে, একটি জোড় সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করে অপর সংখ্যাটিকে ২ দিয়ে গুণ করতে হবে। নিচের গুণের প্রক্রিয়াটি খেয়াল করুন। 

= ১২০ × ২০ 

= ২৪০ × ১০ (১২০-কে ২ দিয়ে গুণ দিয়ে ২০-কে ২ দিয়ে ভাগ)

= ২৪০০

আরও একটি গুণ দেখা যাক। 

= ২৩ × ১৬

= ৪৬ × ৮

= ৯২ × ৪

= ১৮৪ × ২ 

= ৩৬৮  

আরও পড়ুন

৪. বর্গের কৌশল 

কোনো অঙ্ক বা সংখ্যাকে বর্গ করা মানে ওই সংখ্যাটিকে ওই সংখ্যা দিয়েই গুণ করা। যেমন ৫-এর বর্গ করলে হবে ২৫। অর্থাৎ, ৫ × ৫ = ২৫। এবার আপনি যদি ৩৫-এর বর্গ নির্ণয় করতে চান, তাহলে নিশ্চয় ৩৫-কে ৩৫ দিয়ে গুণ করতে হবে। এ গুণটা তো করতে সময় লাগবে। কিন্তু আপনি যদি এ কৌশলটি মাথায় রাখেন, তাহলে আর সময় লাগবে না। কৌশলটি হলো, সংখ্যাটির প্রথম অঙ্কের সঙ্গে ১ যোগ করে প্রথম অঙ্কটির সঙ্গে গুণ করতে হবে। মানে ৩৫-এর প্রথম অঙ্ক ৩। তাহলে, ৩-এর সঙ্গে ১ যোগ করলে হবে ৪। এবার ৩ ও ৪ গুণ করতে হবে। অর্থাৎ, ১২। এর সঙ্গে সব সময় বসিয়ে দেবেন ২৫। অর্থাৎ, উত্তর ১২২৫।

আবার ধরুন, ৬৫-এর বর্গ করতে চান। তাহলে ৬-এর সঙ্গে ১ যোগ করে হবে ৭। তারপর ৬ × ৭ = ৪২। অর্থাৎ, উত্তর ৪২২৫। তবে এ বর্গটি করা যাবে শুধু যেসব সংখ্যার শেষে ৫ আছে, সেগুলো নিয়ে।

৫. আঙুলের সাহায্যে গুণ

মোটামুটি সবাই জানেন, আঙুল ব্যবহার করে গোনা যায়। কিন্তু আঙুল ব্যবহার করে যে গুণ করা যায়, তা কি জানেন? চলুন দেখা যাক, আঙুল ব্যবহার করে কীভাবে গুণ করা যায়। এ পদ্ধতির চেয়ে নামতা মুখস্ত করে গুণ করা সহজ। কিন্তু নতুন একটি পদ্ধতি শিখে রাখতে ক্ষতি তো কিছু নেই। 

ধরুন, আপনি ৯ কে ৫ দিয়ে গুণ করবেন। মনে রাখতে হবে শুধু এ গুণ শুধু ৯-এর ঘরের নামতার জন্য খাটবে। যেহেতু আপনি ৯-কে ৫ দিয়ে গুণ করবেন, তাই হাতের ৫ম আঙুলটি ভাঁজ করে রাখুন। অবশ্যই বাঁ থেকে পঞ্চম আঙুল, মানে বুড়ো আঙুল। এবার গুনে দেখুন, ভাঁজ করা আঙুলের বাঁ পাশে আর কয়টি আঙুল আছে। চারটা নিশ্চয়। তাহলে উত্তরের প্রথম অংশ হবে ৪। আর ভাঁজ করা আঙুলের ডান পাশে কয়টি আঙুল আছে? ডান হাতও এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। মানে বিবেচনায় রাখতে হবে ১০ আঙুলই। তাহলে ভাঁজ করা আঙুলের ডান পাশে আছে আর ৫টি আঙুল। এটা উত্তরের দ্বিতীয় অংশ। তাহলে উত্তর হলো, ৫৪। 

যদি ৯-কে ৬ দিয়ে গুণ করতে চান, তাহলে হাতের ৬ নম্বর আঙুলটি ভাজ করে রাখবেন। এবার খেয়াল করুন, ভাঁজ করা আঙুলের বাঁ পাশে ৫টি আঙুল এবং ডান পাশে ৪টি আঙুল আছে। সুতরাং, উত্তর ৫৪। 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা