ধারার নাম ফিবোনাচ্চি

গণিতের সবচেয়ে মজার ধারা কোনটি? এ প্রশ্নের জবাবে নিশ্চয়ই ফিবোনাচ্চি ধারার নাম নেবেন সবাই। কেননা এটি এক শ ভাগ সত্যি যে গণিতের সবচেয়ে মজার ও বিচিত্র ধারা হলো এই ফিবোনাচ্চি ধারা। ফিবোনাচ্চি ধারার আবিষ্কারক হলেন ইতালিয়ান গণিতবিদ লিওনার্দো ফিবোনাচ্চি (১১৭০-১২৫০)। এটা অত্যন্ত সহজ ধারা। এই ধারার যেকোনো একটি পদ আগের দুটি পদের যোগফল। অর্থাৎ প্রথম দুটি পদ জানা থাকলেই বাকি পদগুলো জানা সম্ভব। কাজেই ফিবোনাচ্চি পদগুলো Fn হিসেবে দেখিয়ে আমরা লিখতে পারি:

Fo = 0

F1 = 1

F2 = F1+F0= 1+0 = 1

F3= F2+F1 = 1+1 = 2

F4 = F3+F2 = 2+1 = 3

F5 = F4+F3 = 3+2 = 5

এভাবে আমরা অসীম পর্যন্ত যেতে পারি। আপাতত প্রথম ১৫টি পদ দিয়ে শুরু করা যাক। সেগুলো হলো: Fn = 0,1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21, 34, 55, 89, 144, 233, 377...

প্রথমেই বলেছি এই ধারা বিচিত্র ও মজার। তাই এর মজার কিছু নমুনা দেওয়া যাক। ফিবোনাচ্চি ধারার যেকোনো ১০টি পদ পরপর যোগ করলে তা ১১ দিয়ে বিভাজ্য। যেমন প্রথম 10টি সংখ্যার যোগফল, 0+1+1+2+3+5+8+13+21+34 = 88|

88 সংখ্যাটি 11 দিয়ে বিভাজ্য। ভাগফল হবে 8, যা এই ধারার 7 নম্বর পদ। এটি আসলে সব সময় সত্যি—ফিবোনাচ্চি ধারার পরপর যেকোনো ১০টি পদের যোগফল শুরু থেকে 7 নম্বর পদের 11 গুণ। যেমন আমরা যদি F10 থেকে শুরু করি তা হলে: 55+89+144+233+377+610+987+1597+2584+4181=10,857। একে ১১ দিয়ে ভাগ করলে এর ৭ নম্বর পদ ৯৮৭ হয়! আসলে এটি কোনো ম্যাজিক নয়, Fn+Fn+1 = Fn+2 এই সূত্রটি ব্যবহার করে খুব সহজেই দেখানো যায় Fn+Fn+1+ Fn+2 +...Fn+8+Fn+9 =11Fn+6.

এবার আরেকটা নমুনা দেওয়া যাক। ফিবোনাচ্চি ধারার যেকোনো চারটি পদ নিয়ে তার প্রথম ও চতুর্থ পদের যোগফলের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদের যোগফল বিয়োগ করলে সেই চারটি পদের প্রথমটি হয়। যেমন: 2, 3, 5, 8 এখানে 2 ও 8-এর যোগফল 10 এবং 3 ও 5-এর যোগফল 8।

অতএব 10-8 = 2; যা উপরিউক্ত পদগুলোর মধ্যে প্রথমটি। একইভাবে আমরা যদি 13, 21, 34, 55 নিই, তাহলেও একই ব্যাপার; অর্থাৎ 55+13 = 68 এবং 34+21 = 55। সুতরাং 68-55 = 13। বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা কত মজার।

এবার আসা যাক এর বিচিত্রতার দিকে। শুনলে অবাক হবেন, ফিবোনাচ্চি ধারা শুধু বই বা খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃতিতে এই ধারা দেখা যায়। গাছের পাতায়, আনারসের ফুলে, এমনকি মৌমাছি ও খরগোশের বংশবিস্তারেও রয়েছে এই ধারা। এবার মৌমাছির বংশবিস্তার দিয়ে শুরু করা যাক। পুরুষ মৌমাছিকে জন্ম দেওয়ার জন্য শুধু স্ত্রী মৌমাছি যথেষ্ট। কিন্তু স্ত্রী মৌমাছিকে জন্ম দেওয়ার জন্য বাবা-মা উভয়েরই দরকার। এখন আমরা যদি একটি পুরুষ মৌমাছির বংশতালিকা তৈরি করি তাহলে কী পাব? এটা দেখানোর জন্য আমরা পুরুষ ♂ স্ত্রী ♀ এই চিহ্ন ব্যবহার করব। তো এবার দেখা যাক:

মৌমাছির বংশতালিকা

আমরা যদি প্রত্যেক প্রজন্মে মৌমাছির বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানির সংখ্যা দেখি তাহলে দেখব: 1, 1, 2, 3, 5, 8

এটি ফিবোনাচ্চি ধারা ছাড়া কিছু নয়। এবার আসা যাক খরগোশের ব্যাপারে। এক জোড়া খরগোশ বড় হতে সময় নেয় এক মাস এবং পরবর্তী মাসে তারা এক জোড়া বাচ্চা দেয়। জন্ম নেওয়া খরগোশও দ্বিতীয় মাসে এক জোড়া খরগোশ জন্ম দেয়। তাহলে এভাবে চলতে থাকলে: 1 মাসে ছোট খারগোশ 1 জোড়া।

2 মাসে বড় খারগোশ 2 জোড়া।

3 মাসে বাচ্চা দেওয়ার কারণে বড় ও ছোট মিলিয়ে 2 জোড়া

4 মাসে বড় জোড়া বাচ্চা দিল, ছোটগুলো বড় হলো সব মিলিয়ে 3 জোড়া 5 মাসে ছোটগুলো বড় হলো, বড়গুলো বাচ্চা দিল, সব মিলিয়ে 5 জোড়া।

এভাবে হিসাব করতে থাকলে আমরা দেখতে পাব প্রতি মাসে খারগোশের জোড়া সংখ্যা হবে—1, 1, 2, 3, 5, 8, 13...; অর্থাৎ আবারও ফিবোনাচ্চি ধারা। এই হলো ফিবোনাচ্চি ধারার বিচিত্র ও মজার গল্প।

লেখক: শিক্ষার্থী, বগুড়া জিলা স্কুল

সূত্র: লাইভ সায়েন্স