ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করে কে: সমাধান ও বিজয়ী

গত ১০ এপ্রিল, বুধবার বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘বুদ্ধির ব্যায়াম: ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করে কে’। চলুন, এ বুদ্ধির ব্যায়ামের সমাধান ও বিজয়ী কে হলেন, তা জেনে নেওয়া যাক।

অনুষ্ঠিত হলো ‘বুদ্ধির ব্যায়াম’-এর বিজয়ী বাছাই লটারি। ২৩ এপ্রিল, মঙ্গলবার বিজ্ঞানচিন্তা কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে একজন বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। এতে বিজয়ী হয়েছেন ফাহিমা আক্তার তারিন। বিজয়ীর ঠিকানায় শিগগিরই পৌঁছে যাবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। লটারির সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী, কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত, সহসম্পাদক আহমাদ মুদ্দাসসের, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার, সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ ও সম্পাদনা দলের সদস্য কাজী আকাশসহ আরও অনেকে।

এর আগে, ১০ এপ্রিল বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘বুদ্ধির ব্যায়াম: ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করে কে’। উত্তর পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ১৫ এপ্রিল। কিন্তু পাঠকদের কথা বিবেচনা করে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। প্রায় ৫০০ পাঠক উত্তর পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানচিন্তার ই-মেইলে। বেশির ভাগ পাঠক সঠিক উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী বাছাই করা হয়েছে।

চলুন, এবার সমাধান দেখে নেওয়া যাক।

 

প্রশ্নটি ছিল এরকম: আজ বাদে কাল ঈদ। এ উপলক্ষ্য সামনে রেখে সব আত্মীয়স্বজন এক হয়। সারা বছর যে যেখানেই থাকুক, ঈদে এক ছাদের নিচে আসা চাই। স্নেহা, তমা, রেজিনা, রকি ও রবিন—পাঁচ ভাইবোন। কেউ কারো মামাতো ভাই, কেউ-বা আবার ফুফাতো ভাই বা বোন। এদের মধ্যে তমা গ্রামেই থাকে। আর অন্যদের কেউ থাকে ঢাকা, কেউ চট্টগ্রাম।

এরা পাঁচ ভাইবোন হলেও কারো সঙ্গে কোনো মিল নেই। যেমন তাদের পছন্দের রং নীল, সবুজ, লাল, গোলাপি ও হলুদ। আবার তাদের পছন্দের প্রাণী হলো বিড়াল, ঘোড়া, পাখি, কুকুর ও খরগোশ। শখও ভিন্ন। কারো পছন্দ ঘোড়ায় চড়া, কারো সাতার কাঁটা। কেউ আবার পাহাড়ে উঠতে পছন্দ করে। একজনের শখ ক্রিকেট খেলা, তো অন্যজনের সিনেমা দেখা। পছন্দের খাবারেও আছে ভিন্নতা। চকলেট, পিজ্জা, বার্গার, চিকেন ফ্রাই ও কাচ্চি তাদের পছন্দের খাবার।

সবাই একসঙ্গে বসে একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। এক সারিতে বসেছে, যাতে সবার মতামত নেওয়া যায়। সবাই মিলে ঘুরতে যেতে চায় দেশের কোনো দর্শনীয় স্থানে। কিন্তু এখানেও রয়েছে মতের ভিন্নতা। একজন যেতে চায় সুন্দরবন। একজনের পছন্দ সাজেক। অন্যজন জাফলং। বাকি দুজনের পছন্দ কক্সবাজার ও কুয়াকাটা। এরকম একেকজন একেক মতের হলে কীভাবে ঘুরতে যাবে! সে যেতে পারুক বা না পারুক, আমরা বরং এদের নিয়ে একটা ধাঁধা দেখে নিই চট করে।

এই পাঁচ ভাইবোনের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে ২২টি তথ্য দিচ্ছি আপনাকে। সেই তথ্যগুলো পড়ে আপনাকে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। চলুন, প্রথমে তথ্যগুলো জেনে নিই।

১. রেজিনার পছন্দের খাবার কাচ্চি।

২. যে পাখি পোষে, তার শখ সাঁতার কাটা।

৩. রকির পছন্দের খাবার পিজ্জা।

৪. তমা বসেছে স্নেহার বাঁয়ে।

৫. বাঁ থেকে সবার প্রথমে রবিন।

৬. সবার ডানের জন সাঁতার কাটতে পছন্দ করে।

৭. যে চিকেন ফ্রাই খেতে পছন্দ করে, তার ঘোড়া আছে।

৮. মাঝের জনের পছন্দের খাবার পিজ্জা।

৯. তমার পছন্দ সবুজ রং।

১০. মাঝের থেকে বাঁয়ের জন সাজেক যেতে চায়।

১১. যে কুয়াকাটা যেতে চায়, তার পছন্দের রং লাল।

১২. যে কক্সবাজার যেতে চায়, তার আগের জনের পছন্দ কাচ্চি।

১৩. যার গোলাপি রং পছন্দ, সে যেতে চায় কক্সবাজার।

১৪. যে লাল রং পছন্দ করে, সে বাঁ দিক থেকে প্রথমে বসেছে।

১৫. যার নীল রং পছন্দ, তার একটি কুকুর আছে।

১৬. যে পাহাড়ে উঠতে পছন্দ করে, সে বসেছে যে পাখি পোষে, তার বাঁয়ে।

১৭. যে ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করে, তার ডানের জনের শখ ঘোড়ায় চড়া।

১৮. যার চিকেন ফ্রাই পছন্দ, তার পাশের জনের পছন্দ চকলেট।

১৯. যে হলুদ রং পছন্দ করে, সে যেতে চায় জাফলং।

২০. যে বার্গার পছন্দ করে, তার একটি খরগোশ আছে।

২১. যে পাহাড়ে চড়তে পছন্দ করে, তার ডানের জনের পছন্দ সাঁতার কাটা।

২২. তমা সুন্দরবন যেতে চায়। 

এখন বলুন তো, ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করে কে?

সমাধান

এখন তথ্যগুলো যাচাই করে উত্তর খোঁজা যাক। ৫নং শর্তে বলা আছে, বাঁ থেকে সবার প্রথমে রবিন। তাহলে ছকে প্রথম স্থানে রবিনের নাম লিখি। তার ঠিক পরের শর্তে বলা আছে, সবার ডানের জন সাঁতার কাটতে পছন্দ করে। তাহলে পঞ্চম স্থানে শখের ঘরে লিখি সাঁতার। এবার ৮নং শর্ত খেয়াল করুন। মাঝের জনের পছন্দের খাবার পিজ্জা। তাহলে তৃতীয় স্থানে প্রিয় খাবারের জায়াগায় লিখি পিজ্জা। ১০নং শর্তে আছে, মাঝের থেকে বাঁয়ের জন সাজেক যেতে চায়। তাহলে মাঝ থেকে বাঁয়ের জন মানে দ্বিতীয় স্থানের জন। তার পছন্দের স্থানের জায়গায় লিখি সাজেক। ১৪ নং শর্তে বলা আছে, যে লাল রং পছন্দ করে, সে বাঁ দিক থেকে প্রথমে বসেছে। বাঁ দিক থেকে প্রথমে মানে প্রথম স্থানের মানুষটি। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি, তার নাম রবিন। অর্থাৎ রবিনের পছন্দের রং হলো লাল। এখন যেগুলো খুঁজে পেলাম, তা ছকে বসাই।

এবার ৩নং শর্ত দেখুন। রকির পছন্দের খাবার পিজ্জা। আমরা জানি, তৃতীয় স্থানের মানুষটির পছন্দের খাবার পিজ্জা। অর্থাৎ তৃতীয় মানুষটির নাম তাহলে রকি। ৪নং শর্তটি ভালো করে খেয়াল করুন। তমা বসেছে স্নেহার বাঁয়ে। স্নেহা কোথায় বসেছে তা আমরা এখনো জানি না। তাহলে কীভাবে বের করব তমা কোথায় বসেছে? একটা উপায় আছে। বাঁয়ে শব্দটা খেয়াল করুন। স্নেহার বাঁয়ে তমার বসতে হলে তমাকে অবশ্যই চতুর্থ স্থানে বসতে হবে। না হলে সে কোনোভাবেই স্নেহার বাঁয়ে বসতে পারবে না। দেখুন এখানে নামের জন্য তিনটা ঘর ফাঁকা আছে। দ্বিতীয় স্থানে স্নেহাকে বসাতে পারবেন না, কারণ তার বাঁয়ে রবিন আছে। তাহলে স্নেহা বসবে অবশ্যই পঞ্চম স্থানে, আর তমা চতুর্থ স্থানে। ছকে বসালাম দুইজনের নাম। এখন দেখুন, চার জনের নাম পেয়ে গেছি। তাহলে বাকি ঘরে, অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে অবশ্যই রেজিনাকে বসতে হবে। এখন ১নং শর্ত দেখুন। রেজিনার পছন্দের খাবার কাচ্চি। তাহলে দ্বিতীয় স্থানে প্রিয় খাবারের জায়গায় লিখি কাচ্চি। এবারে ১১নং শর্ত দেখুন। যে কুয়াকাটা যেতে চায়, তার পছন্দের রং লাল। লাল রং রবিনের পছন্দ, তা আমরা জানি। সুতরাং প্রথম জনের পছন্দের স্থানে লিখব লাল। এখন এগুলো আবার ছকে বসিয়ে নিই।

১২নং শর্তে আছে, যে কক্সবাজার যেতে চায়, তার আগের জনের পছন্দ কাচ্চি। ছক খেয়াল করুন। কাচ্চি পছন্দ রেজিনার। সে আছে রকির আগে। তাহলে রকির পছন্দের স্থান হলো কক্সবাজার। ৯নং তথ্যমতে, তমার পছন্দ সবুজ রং। অর্থাৎ চতুর্থ স্থানের পছন্দের রঙের জায়গায় লিখব সবুজ। ১৩নং তথ্যমতে, যার গোলাপি রং পছন্দ, সে যেতে চায় কক্সবাজার। আমরা জানি, কক্সবাজার যেতে চায় রকি। তাহলে তার পছন্দের রং গোলাপি। ১৯নং তথ্যে আছে, যে হলুদ রং পছন্দ করে, সে যেতে চায় জাফলং। এই শর্তটাও একটু ভালো করে খেয়াল করতে হবে। জাফলং যেতে পারে তমা ও স্নেহার মধ্যে যেকোনো একজন। কারণ অন্য তিনজনের পছন্দের স্থান কী, তা আমরা ইতিমধ্যে জানি। আবার তমার পছন্দের রং সবুজ, তাও জানি। তাই তমা কোনোভাবেই জাফলং যেতে পারে না। অর্থাৎ স্নেহা যেতে চায় জাফলং। আর তার পছন্দের রং হলুদ। এগুলো সব ছকে বসিয়ে ছকটা ভালো করে লক্ষ্য করুন। পছন্দের স্থান ও পছন্দের রং-এর স্থানে একটি করে ঘর ফাঁকা আছে। সুতরাং দ্বিতীয় স্থানে অবশ্যই বাকি রং, অর্থাৎ নীল বসবে। কারণ বাকি চারটি ঘরে অন্যান্য রং আছে। একইভাবে চতুর্থ জনের পছন্দের স্থানের জায়গায় বাকি ‘সুন্দরবন’ই বসবে। তা ছাড়া ২২নং শর্তে বলাও আছে, তমা যেতে চায় সুন্দরবন। এগুলো ছকে বসিয়ে ফেলি। একটা ব্যাপার এখানে বলে রাখা দরকার। এই সমস্যার সমাধান এখানে যেভাবে আছে, আপনারও যে এভাবেই করতে হবে, এমন নয়। আমি শুধু এখানে একটা পদ্ধতি দেখাচ্ছি। আপনি আপনার মতো করে শর্ত আগে পরে ধরেও সমাধান করতে পারেন। যেমন এখানে এসে আমরা ২২নং শর্ত ব্যবহার করলাম। আপনি আরও অনেক আগে, যখন তমার স্থান নির্ণয় করেছিলেন, তখন এই শর্ত ব্যবহার করতে পারতেন। ফলে আপনারা এটা কেবল একটা সমাধান হিসাবে দেখুন। কিন্তু চাইলে মাথা খাটিয়ে এর সমাধান অন্যভাবেও করতে পারেন।  

এবার ১৫নং শর্ত দেখুন। যার নীল রং পছন্দ, তার একটি কুকুর আছে। নীল রং পছন্দ রেজিনার। অর্থাৎ তার পছন্দের প্রাণী কুকুর। ১৮নং তথ্যে আছে, যার চিকেন ফ্রাই পছন্দ, তার পাশের জনের পছন্দ চকলেট। দেখুন এখানে ‘পাশের জন’ কথাটি আছে। ছক খেয়াল করলে দেখবেন, এই শর্ত পূরণ করতে পারে শুধু তমা ও স্নেহা। কারণ ইতিমধ্যে প্রিয় খাবারের দুটি ঘর পূরণ হয়েছে। প্রথম ঘর ব্যবহার করা যাবে না, কারণ পাশের জনের প্রিয় খাবার কাচ্চি দেওয়া আছে। অনেকে ভাবতে পারেন, পাশের জন মানে ডান ও বাঁ—দুটিই হতে পারে। কিন্তু এখানে তা হবে না, কারণ বাঁ পাশের জন বোঝাতে আমরা আগের জন ব্যবহার করেছি। অর্থাৎ পাশের জন মানে শুধু ডান পাশের জন বা পরের জন বোঝাবে। তাহলে তমার পছন্দের খাবার চিকেন ফ্রাই; আর পাশের জন্য, অর্থাৎ স্নেহার চকলেট। তাহলে পছন্দের খাবারের ঘর বাকি রইল আর একটা। অর্থাৎ প্রথম স্থানে অবশ্যই বার্গার হবে। এখন ২০নং তথ্য দেখুন। যে বার্গার পছন্দ করে, তার একটি খরগোশ আছে। বার্গার পছন্দ করে রবিন। তাহলে তার পছন্দের প্রাণী খরগোশ। ২ নং তথ্যে আছে, যে পাখি পোষে, তার শখ সাঁতার কাটা। আমরা জানি, সাঁতার কাটা পছন্দ স্নেহার। তাহলে তার পছন্দের প্রাণীর নাম পাখি। এবার এগুলো ছকে বসাই।

৭নং তথ্যে আছে, যে চিকেন ফ্রাই খেতে পছন্দ করে, তার ঘোড়া আছে। যেহেতু তমার চিকেন ফ্রাই পছন্দ, তাই তার পছন্দের প্রাণী নিশ্চয়ই ঘোড়া। তবে ভাববেন না যে ঘোড়া পছন্দের প্রাণী বলে তার শখ ঘোড়ায় চড়া। এবার দেখুন, পছন্দের প্রাণীর আর একটা ঘর ফাঁকা আছে। ওখানে বসবে বিড়াল। এবার ১৬নং তথ্য দেখুন। যে পাহাড়ে উঠতে পছন্দ করে, সে বসেছে যে পাখি পোষে, তার বাঁয়ে। পাখি পোষে স্নেহা। তার বাঁয়ে আছে তমা। তাহলে তার শখ পাহাড়ে ওঠা। এবার ২১নং তথ্য দেখুন। যে পাহাড়ে চড়তে পছন্দ করে, তার বাঁয়ের জনের পছন্দ সিনেমা দেখা। তথ্যগুলো ছকে বসাই। 

ওপরের ছকে দেখা যাচ্ছে দুটি ঘর ফাঁকা। এখন প্রথম জন, অর্থাৎ রবিনের শখ কোনোভাবে ঘোড়ায় চড়া হতে পারে না। কারণ সে সবার বাঁয়ে আছে। সুতরাং, রবিনের শখ ক্রিকেট খেলা আর রেজিনার শখ ঘোড়ায় চড়া।

উত্তর: ঘোড়ায় চড়ার শখ রেজিনার।