গণিতের কাজ ভ্রান্তি দূর করা। তবে সেই গণিতেই থাকতে পারে ভ্রান্তি। প্রথমে জানা দরকার ভ্রান্তি জিনিসটা আসলে কি? মানুষের যুক্তি প্রয়োগ করার সময় নানা রকমের ভুলই ভ্রান্তি। জীবনে চলার পথে নানা জায়গায় ভ্রান্তির সম্মুখীন হই। গণিতের আলোচনার সময় প্রায়ই কিছু ভুল ও অসংগত গাণিতিক প্রমাণ দেখা যায়। মাঝেমধ্যে সেই ভুলগুলো যত্ন করে সংগ্রহ করা হয়। একেই বলে গাণিতিক ভ্রান্তি বা Mathematical Fallacy।
ফ্রান্সিস বেকন ভ্রান্তিকে চারভাগে বিভক্ত করেন। কিন্তু তার শ্রেণীবিভাগটা মনস্তত্ত্ব-বিজ্ঞানে ভালো প্রভাব রাখলেও, গণিতে খুব একটা প্রভাব রাখে নি। ভ্রান্তির শ্রেণিবিভাগ সবচেয়ে ভালোভাবে করেছেন ই. এ. ম্যাক্সওয়েল। তিনি ভ্রান্তির ওপর ভিত্তি করে লেখেন 'ফ্যালাসিস ইন ম্যাথেমেটিকস'। বইটি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয়।
এই বইয়ে তিনি গাণিতিক প্রমাণের ক্ষেত্রে যুক্তি ও সিদ্ধান্তের সকল সম্ভাব্য সমাবেশ কে যেভাবে উপস্থাপন করেন তা নিচে উদাহরণের মাধ্যমে দেওয়া হল:
১) সঠিক যুক্তি এবং সঠিক সিদ্ধান্ত: দুটি মিলে গেলে হবে সঠিক গাণিতিক প্রমাণ।
২) সঠিক যুক্তি এবং ভুল সিদ্ধান্ত: দুটো মিলে হবে ভ্রান্তি। (যদিও এটাকে ভ্রান্তি বললে ভুল হবে, কারণ এটা তো পুরোটাই ভুল)
৩) ভুল যুক্তি কিন্তু, সঠিক সিদ্ধান্ত: এটাকে বলা হবে সাঙ্ঘাতিক ভুল।
৪) ভুল যুক্তি, ভুল সিদ্ধান্ত: সবই ভুল।
ভ্রান্তির শ্রেণীবিভাগ জানলাম। এখন আরও কিছু ভ্রান্তি দেখা যাক। নিচে বহুল প্রচলিত একটি ভ্রান্তিযুক্ত প্রমাণ দেওয়া হল।
প্রমাণ-১: 1 = 2
ধরি, a ও b সমান এবং উভয়ই অশূন্য সংখ্যা
a = b
বা, ab = b² [উভয় পক্ষেকে b দ্বারা গুণ করে পাই]
বা, ab – a² = b² – a² [উভয় পক্ষ থেকে a² বিয়োগ করে পাই]
বা, a( b – a ) = ( b + a )( b – a ) [উভয় পক্ষকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে পাই]
বা, a = a + b [উভয় পক্ষকে ( b – a ) দ্বারা ভাগ করে পাই]
বা, a = b হওয়ায়, b এর স্থানে a বসিয়ে পাই
বা, a = a + a
বা, a = 2a
বা, 1 = 2
কিন্তু বাস্তবে ১ ও ২ সমান হওয়া স্মভব নয়। তাহলে গোঁজামিলটা কোথায়? আসলে, ভুলটা হয়েছে(b - a) দিয়ে ভাগ করাটা। যেহেতু, a = b তাই, b – a = 0। আমরা জানি, গণিতে 0 দিয়ে ভাগ করা যায় না।
প্রমাণ-২: 1 = –1
1 = 1
বা, (1)² = (–1)²
বা, √(1)² = √(–1)²
বা, 1 = –1
এটাও কখনো সম্ভব নয়। এইখানেও একটা গোঁজামিল আছে। গোঁজামিলটা আসলে তৃতীয় লাইনে। যেখানে উভয়পক্ষের বর্গমূল করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে (+1)² = (–1)² এর অর্থ +1 = –1 নয়।
প্রমাণ-৩: 1 = 2
1 = 1
বা, 1 – 1 = 1² – 1²
বা, 1 – 1 = (1 + 1)(1 – 1)
বা, 1 = 1+1 [উভয়পক্ষে (1 – 1) দ্বারা ভাগ করে পাই]
1 = 2
এটাও সম্ভব নয়। তবে এবারের গোজামিলটা কোথায় তা আপনারাই বের করতে পারবেন।
লেখক: নবম শ্রেণি, রাজশাহী
সূত্র:
ফ্যালাসিস ইন ম্যাথেমেটিকস/ ই. এ. ম্যাক্সওয়েল উইকিপিডিয়া
গণিতের মজা মজার গণিত/মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ম্যাথোস্কোপ/অভীক রায় ও