প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা

প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যাগুলো কিন্তু বেশ মজার। যেমন, Madam শব্দটি আমরা যেদিক থেকেই পড়ি না কেন, তা Madam-ই হবে। আবার বাংলায় আছে ‘রমাকান্তকামার’। এমন কিছু শব্দ আছে, যাদের সোজা বা উল্টো যেভাবেই পড়া হোক না, উচ্চারণ বা অর্থের কোনো নড়চড় হয় না। গণিতেও কিছু সংখ্যাকে এভাবে উল্টো করে লেখা যায়, কিন্তু সংখ্যাটির মানের কোনো বদল ঘটে না। এ ধরনের সংখ্যাকে প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা বলে। যেমন ৬০৬।

Palindrome শব্দটি গ্রিক Palindromos থেকে এসেছে। এর অর্থ ‌‘আবার ফিরে আসা।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা কীভাবে তৈরি হয়? আমরা চাইলেই কি একটি প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা বানাতে পারি? হ্যাঁ, বানাতে পারি। গণিতবিদেরা আমাদের সে রকম একটি ধারণা দিয়েছেন, যাতে সহজেই আমরা প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা পেতে পারি।

প্রথমে আমাদের যেকোনো একটি পূর্ণসংখ্যা নিতে হবে। এবার সংখ্যাটিকে উল্টিয়ে আবার ওই আগের সংখ্যার সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে। যদি যোগফল কোনো প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা পাওয়া যায়, তাহলে কাজ শেষ। কিন্তু যদি প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা না পাওয়া যায়, তাহলে ওই যোগফলকে আবার উল্টিয়ে যোগ করে দিতে হবে, যতক্ষণ না প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা পাওয়া যায়। একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

যেমন ৬৭+৭৬=১৪৩

১৪৩+৩৪১=৪৮৪

একটা প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা (৪৮৪) পাওয়া যাচ্ছে এখানে।

গণিতবিদেরা দেখেছেন, ১০০০০-এর চেয়ে ছোট সংখ্যাগুলো আশি ভাগই ৪ বা তার চেয়ে কমসংখ্যক ধাপ উল্টিয়ে প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু বড় সংখ্যার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। তবে কখনো কখনো ছোট সংখ্যার জন্যও পেরুতে হতে পারে অনেকগুলো ধাপ। যেমন ৫৮০–এর জন্য ৪ ধাপে প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা পাওয়া গেলেও তার চেয়ে অনেক ছোট ৮৯–এর জন্য লাগে ২৪ ধাপ।

কিন্তু এমন একটি সংখ্যা আছে, যার প্যালিন্ড্রমিক সংখ্যা এখনো বের করা যায়নি। সংখ্যাটি ১৯৬। ২০০১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯৬-কে গণিতবিদেরা বহু ধাপে উল্টিয়ে ১ কোটি ৩০ লাখ অঙ্কের একটি সংখ্যা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও প্যালিন্ড্রমিক নয়। তাই গণিতবিদেরা এই ধাঁধার নাম দিয়েছেন ১৯৬ সমস্যা। ১৯৬–এর সমাধান হবে কি না, তা সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। কিন্তু গণিতপ্রেমীরা নিশ্চয়ই চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ম্যাথ ওয়ার্ল্ড ডট কম