যে গণিত জানলে ডিকশনারির যেকোনো শব্দ বলে দেওয়া যাবে

মনে করো, তোমার হাতে একটা ডিকশনারি আছে। ওটা তোমার বন্ধুর হাতে দাও। এবার ওকে কিছু গাণিতিক নির্দেশনা দিতে হবে। আর তারপরই সে ডিকশনারির যে শব্দই মনে মনে পড়বে, তুমি তা বলে দিতে পারবে। যেন গাণিতিক টেলিপ্যাথি! কীভাবে জাদুটা দেখাবে, তা বলে দিচ্ছি। আর কেন তুমি ডিকশনারির যেকোনো শব্দই বলে দিতে পারবে, বলছি তাও।

প্রথমে তোমার একটা ডিকশনারি লাগবে। তারপর লাগবে একজন বন্ধু, যাকে জাদুটা দেখাবে। ডিকশনারি ও বন্ধু পেয়ে গেলে নিচের দিকনির্দেশনাগুলো অনুযায়ী শুরু করে দাও।

ধাপ ১: বন্ধুকে তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা বলতে বলো। প্রয়োজনে বন্ধুকে তা একটি কাগজে লিখে রাখতে বলতে পারো। কিন্তু শর্ত হলো, সংখ্যাটার তিনটা অঙ্কই আলাদা হতে হবে। মানে তিন সংখ্যার মধ্যে একই অঙ্ক দুইটা বা তিনটা থাকে যাবে না। অর্থাৎ, ২২২ বা ২২৫ লেখা যাবে না। ৭৮৯ বা ৫৬৯-এর মতো কোনো সংখ্যা লিখতে হবে।

 

ধাপ ২: এবার তোমার বন্ধুকে বলো, সংখ্যাটিকে উল্টিয়ে লিখতে। মানে সে যদি প্রথমে ৭৮৯ লেখে, তাহলে এখন উল্টিয়ে লিখবে ৯৮৭।

 

ধাপ ৩: এবার বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ করতে হবে। যেমন, ওপরে আমরা ধরেছিলাম ৭৮৯, তারপর উল্টিয়ে পেয়েছি ৯৮৭। তাহলে ৯৮৭ থেকে ৭৮৯ বিয়োগ করতে হবে।

ধাপ ৪: এখন আসল মজা! বিয়োগ করে যে সংখ্যা পাওয়া গেছে, বন্ধুকে ডিকশনারির সেই নম্বর পৃষ্ঠা খুলতে বলো। তারপর ওই পৃষ্ঠার পাঁচ নম্বর শব্দটা মনে মনে পড়তে বলো।

ধাপ ৫: এবার তাকে বলো, শুধু শব্দটার প্রথম অক্ষরটা তোমাকে বলতে।

ধাপ ৬: এখন তুমি বন্ধুর থেকে ডিকশনারিটা নিয়ে নাও। ওটা কানের কাছে ধরো, যেন মনে হয় ডিকশনারি তোমাকে বলে দেবে যে তোমার বন্ধু কোন শব্দটা মনে মনে পড়েছে। এরপর জাদু দেখানোর মতো করে পুরো শব্দটা বলে দাও বন্ধুকে! দেখবে সে অবাক হয়ে যাবে!

ওহ! শব্দটা কীভাবে বলবে তা বুঝতে পারছ না? বোঝার তো কথাই না। কারণ, তোমাকে তো ডিকশনারি আসলেই শব্দটা বলে দেবে না। এজন্য তোমাকে একটু বুদ্ধি খাঁটাতে হবে। চলো, সেটা শিখিয়ে দিই।

এই রহস্যটা কিন্তু লুকিয়ে আছে গণিতের মধ্যে। কারণ, যেকোনো তিন অঙ্কের সংখ্যা (যার অঙ্কগুলো আলাদা) এবং ওই সংখ্যা উল্টিয়ে যে বিয়োগফল পাওয়া যাবে, তা সবসময় নির্দিষ্ট। মানে এমন বিয়োগফল আছে মাত্র ৯টি। সেগুলো হলো ৯৯, ১৯৮, ২৯৭, ৩৯৬, ৪৯৫, ৫৯৪, ৬৯৩, ৭৯২ এবং ৮৯১।

বিশ্বাস না হলে কয়েকটা প্রমাণ দেখাই। ধরো, তুমি প্রথমে তিন অঙ্কের সংখ্যাটা ধরলে ৪৫৬। তাহলে উল্টিয়ে লিখলে হবে ৬৫৪। এবার বিয়োগফল ৬৫৪ – ৪৫৬ = ১৯৮। ওপরের নয়টি সংখ্যার মধ্যে দ্বিতীয় সংখ্যাটিই ১৯৮। এবার ধরো ৭৯২। তাহলে উল্টিয়ে লিখলে হবে ২৯৭। বিয়োগফল ৭৯২ – ২৯৭ = ৪৯৫। ওপরের নয়টি সংখ্যার মধ্যে পঞ্চম সংখ্যাটি ৪৯৫।

এভাবে তুমি যতবার তিন অঙ্কের সংখ্যা (প্রতেকটি অঙ্ক আলাদা) উল্টিয়ে বড় থেকে ছোট বিয়োগ করবে, প্রত্যেকবার ওই নয়টি সংখ্যা থেকেই একটা পাবে। এর বাইরে আর কোনো সংখ্যা হতেই পারবে না, কারণ ওই বিয়োগফল সবসময় ৯৯-এর গুণিতক হবে।

এখন তোমার কাজটা খুব সহজ! এই নয়টা পৃষ্ঠার পাঁচ নম্বর শব্দটা কি, তা তোমাকে কষ্ট করে মনে রাখতে হবে। যেহেতু ৯৯ পৃষ্ঠা পরপর একটা শব্দ, তাই প্রতিটা শব্দ হবে আলাদা। বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো ডিকশনারি ব্যবহার করতে পারো। যেমন, আমার কাছে এখন বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান আছে। এই ডিকশনারির ৯৯তম পৃষ্ঠার পঞ্চম শব্দটা হলো ‘অর্ধার্ধ’। আবার ১৯৮ পৃষ্ঠার পঞ্চম শব্দ ‘উত্তরাষাঢ়া’। একইভাবে ২৯৭ পৃষ্ঠার পঞ্চম শব্দ ‘কারকুন’। এখন যদি তোমার বন্ধু প্রথম শব্দ বলে ‘অ’, তাহলে তুমি বুঝবে শব্দটা হলো অর্ধার্ধ। আবার যদি সে বলে ‘উ’, তাহলে তুমি বুঝবে ‘উত্তরাষাঢ়া’। এ জন্য তোমাকে জাদু দেখানোর আগেই এই ৯টি শব্দ মুখস্ত করে রাখতে হবে।

তবে ইংরেজি ডিকশনারি ব্যবহার করাই ভালো। কারণ বাংলা শব্দে ‘কারকুন’ যেমন ‘কা’ দিয়ে শুরু হয়েছে। এখন তোমার বন্ধু যদি শুধু ‘ক’ বলে, তাহলে সবসময় নাও বুঝতে পারো। কিন্তু ইংরেজি ডিকশনারি ব্যবহার করলে সে তোমাকে শুধু ‘C’, ‘G’ বা ‘T’ বলবে। হয়তো ইংরেজি নয়টি শব্দ মুখস্ত করাও সহজ হবে।

আরেকটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিই। এই নয়টি সংখ্যা কীভাবে মুখস্ত রাখবে? যেহেতু সবগুলো ৯৯-এর গুণিতক, তাই প্রথমটা ৯৯, দ্বিতীয়টা ১৯৮ (৯৯ থেকে ১ কম), তৃতীয়টা ২৯৭ (৯৮ থেকে ১ কম)। এরপরেরটা হবে ৩৯৬, ৪৯৫, ৫৯৪…ইত্যাদি। অর্থাৎ সংখ্যাগুলো মুখস্ত করার জন্য আলাদা কষ্ট করতে হবে না। মুখস্ত করতে হবে শুধু ওই পৃষ্ঠার ৫ম শব্দটা।

তবে সবসময় যে ৫ম শব্দটাই মুখস্ত করতে হবে, এমন নয়। তুমি চালাকি করে ৩য় শব্দটাও মুখস্ত করতে পারো। সেক্ষেত্রে বন্ধুকে প্রথমেই মনে মনে তৃতীয় শব্দটা উচ্চারণ করতে বলতে হবে। মাঝেমধ্যে এভাবে সংখ্যা বদলালে তোমার বন্ধুরা চালিকাটা ধরতে পারবে না। নাহলে, তুমি যদি ৪/৫ বার শুধু উত্তর হিসেবে ‘অর্ধার্ধ’ বা ‘কারকুন’ বলতে থাকো, তাহলে বন্ধুরা চালাকিটা বুঝে যাবে।

তাহলে জাদু শিখে গেলে। এখন তোমার পছন্দ মতো ৯টা শব্দ মুখস্ত করে জাদু দেখাতে শুরু করো!

সূত্র: হাউ টু বিকাম আ ম্যাথ ম্যাজিশিয়ান অবলম্বনে