গণিতের জন্ম গণনা থেকে। কোনো কিছু গোনার জন্যই প্রয়োজন সংখ্যা পদ্ধতি। প্রাচীকালে মানুষ একটু একটু করে গুনতে শিখেছে। হয়তো ভেড়ার পালে কয়টি ভেড়া আছে, তা গুনে রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে; কিংবা কৃষিজ এরকম অন্য কিছু গুনতে গিয়ে শিখেছে গণনা। শুরুতে তারা ১, ২, ৩… এভাবে গোনা শেখেনি। পাথর বা গাছের ডালের সাহায্যে গুনত। কীভাবে গুনত, সেটা একটু বলি।
ধরুন, প্রাচীন এক ব্যক্তির কাছে ১০০টি ভেড়া ছিল। সে সঙ্গে করে ১০০টি পাথর নিয়ে যেত। সারাদিন ভেড়াকে মাঠে চরিয়ে ফেরার পথে আবার ভেড়াগুলো গুনে দেখত, সবগুলো ভেড়া পালে আছে কি না। কীভাবে গুনত? একটা ভেড়ার সঙ্গে একটা পাথর মেলাত। যতগুলো ভেড়া, ততগুলো পাথর থাকলেই বুঝত ভেড়ার সংখ্যা ঠিক আছে। তারা বুঝত না, তাদের কাছে ১০০টি ভেড়া আছে। তবে যতগুলো ভেড়া মাঠে নিয়ে গেছে, ততগুলো গুণে নিয়ে আসতে পারত।
কিন্তু যার কাছে ২ হাজার ভেড়া আছে, তার পক্ষে ২ হাজার পাথর টেনে নিয়ে যাওয়া তো কঠিন। তখন তারা বাধ্য হয়ে গুনতে শুরু করে। প্রথমে হাত ও পায়ের ২০ আঙুল দিয়ে গুনত। এরপর হাতের প্রতিটি আঙুলের কর গুনত। এক হাতে যেহেতু ২০টি কর, তাই ফলে দুই হাত মিলিয়ে ৪০ পর্যন্ত গুনতে পারত। এভাবে ধীরে ধীরে গণনা শুরু হয়। তারপর মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে আবিষ্কার করে সংখ্যা পদ্ধতি।
তবে সংখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে আপনার কাছে এটা বেশ কঠিন মনে হবে। যেমন ধরুন, বাস্তব সংখ্যা। একে অনেক ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো নিয়ে আজ সংক্ষেপে আলোচনা করব।
প্রথমেই বোঝা দরকার বাস্তব সংখ্যা কী। আসলে, আপনি যে ধরনের সংখ্যা কল্পনা করতে পারেন, তার সবই বাস্তব সংখ্যা। একটি সংখ্যারেখা কল্পনা করতে পারেন। সংখ্যারেখার মাঝখানে আছে শূন্য (০)। এর ডানে ধনাত্মক সংখ্যা ও বাঁয়ে ঋণাত্মক সংখ্যা। সবই বাস্তব সংখ্যা। যেমন, ২৭, -১৯৮, ০ বা ৫০০ কোটি—সবই বাস্তব সংখ্যা।
বাস্তব সংখ্যা আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা। যেকোনো পূর্ণসংখ্যাই মূলদ সংখ্যা। তবে দশমিক সংখ্যাও মূলদ সংখ্যা হতে পারে। তাহলে, মূলদ সংখ্যা আসলে কী? এর জন্য দুটি শর্ত আছে। প্রথমত, দশমিক সংখ্যা যদি সসীম হয়, মানে দশমিকের যদি শেষ থাকে, তাহলে সেটা মূলদ সংখ্যা। যেমন ১.৫৪। দ্বিতীয়ত, দশমিক সংখ্যার মধ্যে যদি ধারাবাহিকতা থাকে, তাহলেও সেটি মূলদ সংখ্যা হবে। একে পৌনঃপৌনিক বলে। যেমন ১.৬৩৬৩৬৩৬৩৬৩৬৩ সংখ্যার মধ্যে ১-এর পরে সবগুলো ৬৩, ৬৩—এই আকারে আছে। তাই এটিও মূলদ সংখ্যা।
আর অমূলদ সংখ্যা হলো মূলদের বিপরীত। এ ক্ষেত্রে দশমিক সংখ্যার কোনো শেষ থাকবে না। অসীম হবে। যেমন পাই-এর মান। ৩.১৪১৫৯… এভাবে চলতেই থাকে। এটি একটি অমূলদ সংখ্যা।
আরও আছে প্রাকৃতিক সংখ্যা। ইংরেজিতে বলে ন্যাচারাল নাম্বার। N দিয়ে প্রকাশ করা হয় এগুলোকে। অর্থাৎ সংখ্যারেখার ০-এর ডানদিকের সব সংখ্যাকেই প্রাকৃতিক সংখ্যা বলে। যেমন, N = {১, ২, ৩, ৪, ৫…}। তবে ০ কিন্তু প্রাকৃতিক সংখ্যা নয়।
সব ধণাত্মক পূর্ণসংখ্যা ও ০-কে একত্রে বলে অঋণাত্মক সংখ্যা। একে ইংরেজি বলে হোল নাম্বার। প্রকাশ করা হয় W দিয়ে। যেমন, W = {০, ১, ২, ৩, ৪, ৫…}।
এগুলো সবই বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত। অর্থাৎ এই সংখ্যাগুলো বাস্তব, কাল্পনিক নয়। কাল্পনিক সংখ্যাও গণিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে সে বিষয়ে আজ আলোচনা করব না। পরের কোনো লেখায় এ নিয়ে আলোচনা থাকবে।
সূত্র: ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া
