বুদ্ধির ব্যায়ামের সমাধান ও বিজয়ী

১৫ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘বুদ্ধির ব্যায়াম: বাংলাদেশের জার্সি পরা ছেলেটি কোন বাড়িতে থাকে’। চলুন, এ বুদ্ধির ব্যায়ামের সমাধান ও বিজয়ী কে হলেন, তা জেনে নেওয়া যাক।

অনুষ্ঠিত হলো বুদ্ধির ব্যায়াম-এর বিজয়ী বাছাই লটারি। ১৮ ফেব্রুয়ারি, রোববার বিজ্ঞানচিন্তা কার্যালয়ে এ লটারির মাধ্যমে একজন বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। এতে বিজয়ী হয়েছেন মো. আবে কাউসার। বিজয়ীর ঠিকানায় শিগগিরই পৌঁছে যাবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। লটারির সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা, কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত ও পাভেল মহিতুল আলম, সহসম্পাদক আহমাদ মুদ্দাসসের, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার, সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ, সম্পাদনা দলের সদস্য কাজী আকাশসহ আরও অনেকে।

এর আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘বুদ্ধির ব্যায়াম: বাংলাদেশের জার্সি পরা ছেলেটি কোন বাড়িতে থাকে’। উত্তর পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি। প্রায় ৪৫০ পাঠক উত্তর পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানচিন্তার ই-মেইলে। বেশির ভাগ পাঠক সঠিক উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী বাছাই করা হয়েছে।

চলুন, এবার সমাধান দেখে নেওয়া যাক।

প্রশ্নটি ছিল এরকম: পলাশ, বিশ্বজিৎ, সোহাগ ও সানি চার বন্ধু। একই গ্রামে তাদের বাস। বাড়িগুলোও পাশাপাশি। শিশুকাল থেকেই এই চার বন্ধুর গলায় গলায় ভাব। মাঝেমধ্যেই দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় ঘুরতে। এখন চলছে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য মেলা। প্রচলিত আছে, এই মেলা ২২০ বছর ধরে চলছে।

চার বন্ধু মেলায় ঘুরতে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সন্ধ্যায় বাজারের স্ট্যান্ডে তারা মিলিত হলো। প্রত্যেকে টি-শার্ট পরেছে। কারো টি-শার্টে আছে পাখির ছবি, কারোটায় মাছের। কেউ পরেছে বাংলাদেশের জার্সি। আবার একজনের টি-শার্টে আছে একটি ব্যান্ডের ছবি। তাদের জুতার রংও ভিন্ন। সাদা, কালো, লাল ও নীল। মেলায় গিয়ে প্রত্যেকে কিছু না কিছু কিনেছে। যেমন একজন কিনেছে রুবিকস কিউব, একজন হাতের ব্যাজ। বাকি দুজন কিনেছে ব্যাট ও গিটার। এখন এই চার বন্ধু সম্পর্কে ১১টি তথ্য দেওয়া হবে আপনাকে সমস্যাটি সমাধানের জন্য। নিচের এই তথ্যগুলো পড়ে আপনাকে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। চলুন, প্রথমে তথ্যগুলো জেনে নিই।

১. যে গিটার কিনেছে, সে দ্বিতীয় বাড়িতে থাকে।

২. লাল জুতা পরা ছেলেটি থাকে প্রথম বাড়িতে।

৩. রুবিকস কিউব কেনা ছেলেটি শুরু বা শেষের কোনো বাড়িতে থাকে।

৪. যার টি-শার্টে ব্যান্ডের ছবি, সে থাকে রুবিকস কিউব কেনা ছেলেটির পাশের বাড়িতে।

৫. সোহাগের বাসা সানির বাসার ঠিক বাঁয়ে।

৬. নীল জুতা পরা ছেলেটি শুরু বা শেষের কোনো একটি বাড়িতে থাকে।

৭. লাল জুতা পরা ছেলেটি ভালো ক্রিকেট খেলে।

৮. পাখি এবং মাছের ছবি সংবলিত ছেলে দুটি পাশাপাশি বাড়িতে থাকে।

৯. তৃতীয় বাড়িটি বিশ্বজিতের। 

১০. যার টি-শার্টে পাখি আছে, তার পরের বাসায় থাকে ব্যাজ কেনা ছেলেটি।

১১. সাদা জুতা পরা ছেলেটির গানের গলা দুর্দান্ত।

এখন বলুন তো, বাংলাদেশের জার্সি পরা ছেলেটি কোন বাড়িতে থাকে?

সমাধান 

এখন তথ্যগুলো যাচাই করে উত্তর খোঁজা যাক। শুরুতে ৯ নং শর্ত দেখি। বিশ্বজিৎ তৃতীয় ঘরে বাস করে। তাহলে তৃতীয় ঘরের নামের জায়গায় লিখব বিশ্বজিৎ। এবার ২ নং তথ্য খেয়াল করুন। লাল জুতা পরা ছেলেটি থাকে প্রথম বাড়িতে। ছকে এই তথ্যটা বসাই। এবার ৬ নং সূত্রে বলা আছে, নীল জুতা পরা ছেলেটি শুরু বা শেষের কোনো বাড়িতে থাকে। আমরা আগেই দেখেছি, লাল জুতা পরা ছেলেটি প্রথম বাড়িতে থাকে। সুতরাং, নীল জুতা পরা ছেলেটি কোনোভাবেই প্রথম বাড়িতে থাকতে পারে না। অর্থাৎ সে থাকে শেষ বাড়িতে। এবার ৭নং তথ্যে দেখুন, লাল জুতা পরা ছেলেটি ভালো ক্রিকেট খেলে। সুতরাং, সেই নিশ্চয় ব্যাট কিনেছে। এবার সবগুলো তথ্য ছকে বসিয়ে নিই। 

এবার ১ নং তথ্য দেখুন। গিটার কেনা ছেলেটি দ্বিতীয় বাড়িতে থাকে। আবার ৩ নং তথ্যমতে, রুবিকস কিউব কেনা ছেলেটি শুরু বা শেষের কোনো বাড়িতে থাকে। যেহেতু প্রথম বাড়িতে থাকা ছেলেটি ব্যাট কিনেছে, সেহেতু রুবিকস কিউব কেনা ছেলেটি অবশ্যই শেষ বাড়ি, অর্থাৎ চতুর্থ বাড়িতে থাকে। ১১ নং তথ্য দেখুন। সাদা জুতা পরা ছেলেটির গানের গলা ভালো। তাই সে নিশ্চয়ই গিটার কিনবে। আর ৫ নং তথ্যানুসারে, সোহাগের বাসা সানির বাসার ঠিক বাঁয়ে। দেখুন, তৃতীয় বাড়িতে বিশ্বজিৎ থাকে, তা আমরা আগেই দেখেছি। সুতরাং, সোহাগ কোনোভাবে তৃতীয় বা চতুর্থ বাড়িতে থাকতে পারে না। কারণ চতুর্থ বাড়িতে সোহাগ থাকলে, তার ঠিক বাঁয়ে থাকে বিশ্বজিৎ। সেটা শর্তবিরুদ্ধ। তাই সানি যদি দ্বিতীয় বাড়িতে থাকে, তাহলে তার বাঁয়ে, অর্থাৎ প্রথম বাড়িতে থাকতে পারে সোহাগ। এবার এই তথ্যগুলো ছকে বসাই।

এবার ছকটা ভালো করে খেয়াল করুন। ‘নাম’, ‘জুতার রং’ এবং ‘মেলায় কিনেছে’ ঘরগুলোতে শুধু একটি করে ঘর ফাঁকা আছে। যেমন নামের ক্ষেত্রে সোহাগ, সানি ও বিশ্বজিতের নাম আছে। সুতরাং চতুর্থ ঘরে অবশ্যই পলাশ বাস করে। জুতার রঙের ক্ষেত্রে লাল, সাদা ও নীল আছে। বাকি রইল কালো রং। সুতরাং, তৃতীয় ঘরে কালো রং বসবে। আবার মেলায় কেনা বস্তুগুলোর মধ্যে হাতের ব্যাজ ছাড়া বাকি সবগুলো ছকে বসানো হয়েছে। সুতরাং ছকের বাকি ঘরটিতে বসবে ব্যাজ। 

এখন শুধু বাকি আছে, কার টি-শার্টে কোন ছবি আছে, তা খুঁজে বের করা। ৪ নং তথ্য দেখুন। যার টি-শার্টে ব্যান্ডের ছবি, সে থাকে রুবিকস কিউব কেনা ছেলেটির পাশের বাড়িতে। ছক খেয়াল করলে দেখবেন, ৪ নং বাড়ির ছেলেটি রুবিকস কিউব কিনেছে। তার পাশের বাড়ি, মানে বিশ্বজিতের টি-শার্টে ব্যান্ডের ছবি আছে। আবার ১০ নং তথ্য দেখুন। পাখি আছে এমন টি-শার্ট পরেছে যে, তার পরের বাসায় থাকে ব্যাজ কেনা ছেলেটি। ছকে দেখা যাচ্ছে, ব্যাজ কিনেছে বিশ্বজিৎ। অর্থাৎ তার ঠিক আগের বাসায় থাকবে পাখি সংবলিত টি-শার্ট পরা ছেলেটি। এবার ৮নং তথ্য দেখুন। পাখি এবং মাছের ছবি সংবলিত ছেলে দুটি পাশাপাশি থাকে। প্রথম এবং চতুর্থ বাড়ি ফাঁকা আছে। পাখি সংবলিত টি-শার্ট পরেছে সানি। তার ডানে আছে বিশ্বজিৎ। সুতরাং চতুর্থ বাড়িতে থাকা পলাশ ও সানি পাশিপাশি বাড়িতে থাকতে পারে না। অর্থাৎ সোহাগ থাকবে প্রথম বাড়িতে। এবার ছকে তথ্যগুলো বসাই। 

এখন একটাই ঘর ফাঁকা আছে। সুতরাং, পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, বাংলাদেশের জার্সি পরা ছেলেটি চতুর্থ বাড়িতে বাস করে।