এআই কি বদলে দেবে গণিতের সৌন্দর্য

গণিত মানেই সংখ্যা আর আকারের খেলা। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে গণিতের প্রাণ হিসেবে ধরা হয় একটা শব্দকে—’প্রমাণ’। কোনো বক্তব্য সত্য না মিথ্যা, তা নিশ্চিত করতে দরকার যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যা। একজন গণিতবিদের সাফল্য বিচার করা হয় তাঁর উপপাদ্য প্রমাণের ধরণ দিয়ে—কে কতটা নতুন ধাঁচে উপপাদ্য প্রমাণ করতে পারছেন এবং একজীবনে একজন গণিতবিদ কতগুলো উপপাদ্য প্রমাণ করতে পারলেন, তার ওপর নির্ভর করে। গণিতবিদেরা জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন নতুন কোনো গাণিতিক ধারণা খুঁজতে, যাতে তাঁর প্রমাণটা সেই ধারণা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এরপর সেই ধারণাগুলোকে ধাপে ধাপে যুক্তি দিয়ে সাজিয়ে তুলে ধরেন আমাদের সামনে। যেন একেকটা যুক্তি একেকটা শুধু কঠিন যুক্তি দিয়েই নয়, এর ভেতরে থাকে সৌন্দর্য, সৃজনশীলতা ও আর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। যুক্তির গাঁথুনি দিয়ে বানানো এই নির্মাণগুলো অনেকটা শিল্পকর্মের মতো। কিছু দুর্দান্ত প্রমাণ দেখে যেমন মুগ্ধ হতে হয়, তেমনি সেটাকে বোঝা, নতুনভাবে ভাবা বা রচনা করাও অনেকটা সৃষ্টিশীলতার পরীক্ষা। গণিতবিদেরা বরাবরই বিশ্বাস করেন, এই প্রমাণ তৈরির কাজটা একান্তভাবেই মানুষের। এ যেন আমাদের চিন্তার সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে পৌঁছানোর একটা উপায়।

কিন্তু প্রমাণ তো আসলে যুক্তির খেলা। তাই বিজ্ঞানীরা যখন ১৯৫০-এর দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই তৈরি করতে শুরু করলেন, তখন তাঁদের মনে আশা জেগেছিল, হয়তো কম্পিউটারও নিজ থেকে প্রমাণ তৈরি করতে পারবে! সেই আশা একেবারে ভিত্তিহীন ছিল না। কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রগুলো সফলও হয়েছিলেন। প্রথম দিকের একটা এআই প্রোগ্রাম তো অনেক গাণিতিক যুক্তির প্রমাণও বের করে দেখিয়েছিল। এরপর আরও অনেক প্রোগ্রাম এসেছে। সেগুলো জ্যামিতি থেকে শুরু করে ক্যালকুলাসের মতো কঠিন বিষয়ের প্রমাণ খুঁজতেও সাহায্য করেছে।

কিন্তু এসবই ছিল সীমিত পর্যায়ে। এআই জটিল আর সৃজনশীল প্রমাণ তৈরি করতে পারত না। ফলে গণিতবিদেরা আগের মতো নিজেরাই গবেষণা চালিয়ে যান। সেসময় গণিতবিদের কাজে এআই তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। একসময় মনে করা হচ্ছিল, গণিতের মতো বিমূর্ত ও সূক্ষ্ম বিষয়ের ওপর এআইয়ের কোনো দখল তৈরি হবে না।

কিন্তু দৃশ্যপট এখন বদলাতে শুরু করেছে! গত কয়েক বছরে গণিতবিদরা মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এমন কিছু গাণিতিক নকশা আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন ধারণা। এমনকি পুরোনো ভুল ধারণার উদাহরণও বের করছেন। তবে তাঁরা এমন কোনো এআই তৈরি করতে পারেননি, যেটি একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জটিল প্রমাণ নিজে তৈরি করতে পারবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেই দিন হয়তো আর বেশি দূরে নেই। কারণ, ২০২৪ সালে গুগলের ডিপমাইন্ড ঘোষণা করে, তাঁদের তৈরি একটা এআই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (স্কুলপড়ুয়াদের জন্য সবচেয়ে বড় গাণিতিক প্রতিযোগিতা) রৌপ্যপদক জিতেছে! এখন তো চ্যাটজিপিটিও অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করতে পারে। 

তাই প্রশ্ন উঠছে, গণিতের ভবিষ্যৎ কী? সারাজীবন ধরে গণিতবিদেরা যেভাবে প্রমাণ তৈরি করেছেন, গবেষণার ভেতর দিয়ে এগিয়েছেন, সেই ঐতিহ্য কি এক নিমেষে বদলে যাবে? চোখের নিমেষেই কি এআই তৈরি করে ফেলবে দুরূহ সব উপপাদ্য?

এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গ্র্যানভিল। তিনি কিছুদিন আগেও বিশ্বাস করতেন না, এআই কোনোদিন গাণিতিক প্রমাণে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, ‘এরা যা উন্নতি করছে তা দেখে আমি অবাক! আমি ভেবেছিলাম যন্ত্র কখনো সৃজনশীল গণিত সমাধান করতে পারবে না। কিন্তু এআই আমার ভাবনার চেয়েও দ্রুত এগোচ্ছে।’

মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গ্র্যানভি
কোয়ান্টা ম্যাগাজিন

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো গণিতবিদরা তাদের একঘেয়ে আর পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের কিছুটা এআইকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারবেন। তবে এআই সে কাজে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে এখনো অনেকের মধ্যে দ্বিধা আছে। কেউ কেউ মনে করেন, এ কাজে এখনো অনেক বাঁধা রয়েছে। তবে এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, ভবিষ্যতে গণিতের সৃজনশীল দিকগুলোও হয়তো এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারবে। 

মজার ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ গণিতবিদ এখনও এই নতুন অগ্রগতিগুলোকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। তাঁরা তাঁদের চিরাচরিত কাজের মধ্যেই ডুবে আছেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির গণিতবিদ অক্ষয় ভেঙ্কটেশ মনে করেন, এআইকে পাত্তা না দেওয়া ভুল হবে। এআই যদি শুধু প্রমাণের বিরক্তিকর অংশগুলোও করে দিতে পারে, তাতেও আমাদের অনেক সময় বাঁচবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গণিত করার ও ভাবার ধরনও বদলে যেতে পারে। 

এআই কীভাবে গণিতকে বদলে দেবে, তা নিয়ে শুধু ভাবলেই যথেষ্ট হবে না। এটা গণিতবিদদের বাধ্য করছে গভীরভাবে চিন্তা করতে—গণিতের আসল ভিত্তি কী এবং এর উদ্দেশ্যই বা কী।

আসলে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের একটু পেছনে ফিরতে হবে। মনে করতে হবে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রযুক্তি চিন্তার অন্তরায়। তাঁর মতে, যারা সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় অভ্যস্ত, তাঁদের চিন্তাশক্তি প্রযুক্তির কারণে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তখন অবশ্য তেমন উন্নত কোনো প্রযুক্তিও ছিল না। তিনি প্রযুক্তি বলতে লিখে রাখার পদ্ধতিকে বুঝিয়েছেন। তাঁর ভয় ছিল, লিখে রাখার কারণে মানুষের স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। 

সক্রেটিসের আবক্ষ মূর্তি
উইকিপিডিয়া

কিন্তু আজ আমরা লেখা ছাড়া গণিত কল্পনাই করতে পারি না। কাগজ এমন এক আবিষ্কার যা মানুষ জ্ঞান সঞ্চয় করে রেখেছে, রাখছে। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সে জ্ঞান পৌঁছে দিচ্ছে। এমনকি গাণিতিক ধারণাগুলো বোঝানোর জন্য কোন প্রতীক ব্যবহার করা হবে, তাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। 

সক্রেটিসের সময় থেকে আরও অন্তত দুই হাজার বছর পর্যন্ত গণিত মানেই ছিল জ্যামিতি। এরপর ধীরে ধীরে গণিত একটু একটু করে এগিয়েছে। ১৬৩৭ সালে ফরাসি গণিতবিদ রেনে দেকার্তে তাঁর বিখ্যাত বই ডিসকোর্স অন দ্য মেথড-এর পরিশিষ্টে কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক নামে একটি পদ্ধতি চালু করেন। এর মাধ্যমে জ্যামিতিক রেখা ও আকারকে বীজগাণিতিক সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব হলো। তখন বীজগণিত কিছু সমস্যা সমাধানের উপায় হয়ে উঠল। সেসব সমস্যা আবার জ্যামিতিকভাবে সমাধান করা যেত না। 

দেকার্তের বিখ্যাত ডিসকোর্স অন দ্য মেথড বইয়ের প্রকাশিত একটি সংক্ষিপ্ত পরিশিষ্ট
কোয়ান্টা ম্যাগাজিন

তবে অনেকেই তখন এই পদ্ধতিতে ভরসা রাখতে পারেননি। তাঁদের মনে হতো, বীজগণিত মানেই অন্ধের মতো হিসাব কষা। কারণ, বীজগণিত ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির মতো দৃশ্যমান ছিল না। অনেক গণিতবিদ মনে করতেন, বীজগাণিতিক পদ্ধতি গণিতকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আইজ্যাক নিউটন। তিনি লিখেছিলেন, ‘এই পদ্ধতিগুলো এতই ক্লান্তিকর আর জটিল যে বিতৃষ্ণা তৈরি করে।’ 

নিউটনের কাছে জ্যামিতিক ধারণা ছিল গাণিতিকভাবে কোনো কিছু বোঝার মূল চাবিকাঠি। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘যারা বীজগণিতিক প্রতীক আর বিমূর্ত ধারণা নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা নিজেরাও বোঝেন না যে কি করছেন। এমনকি তাঁরা যদি দাবিও করে যে তাঁরা বুঝতে পারছে, তবুও তাঁরা আসলেও কিছু বুঝতে পারছে না।’

আইজ্যাক নিউটন

নিউটনের মতো প্রভাবশালী বিজ্ঞানীর এমন কথা স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে বীজগণিতের প্রতি ভুলভাবে প্রভাবিত করেছিল। যদিও প্রথম দিকে বীজগণিতের কৌশলগুলো ছিল শুধু একটা লক্ষ্য অর্জনের উপায়। হয়তো যেসব বিষয় জ্যামিতিকভাবে প্রমাণ করা যায় না, শুধু সেই বিষয়টা প্রমাণের জন্য বীজগণিত ব্যবহৃত হতো। কিন্তু শিগগিরই গণিতবিদরা এই কৌশলগুলো নিজেদের জন্যই অধ্যয়ন করতে শুরু করলেন। ফলে জন্ম নিল গণিতের আরও একটা শাখা। এই বীজগণিত ছাড়া কিন্তু ক্যালকুলাস ভাবাই যেত না। এই ক্যালকুলাস কিন্তু আবার আবিষ্কার করেছেন নিউটন ও লিবনিজ যৌথভাবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে নিউটন বীজগণিত ছাড়া কীভাবে ক্যালকুলাস করলেন? আসলে তিনি বীজগণিত ছাড়া ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেননি। বরং প্রথমে নিউটন ক্যালকুলাসের জন্য একটা বীজগণিতিক কাঠামোই তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দার্শনিক চিন্তাভাবনার কারণে জ্যামিতিকভাবে উপস্থাপন করার উপায় না পাওয়া পর্যন্ত তা তিনি গোপন রাখেন। ততদিনে লিবনিজও ক্যালকুলাস নিয়ে কাজ করেছেন। তখন প্রশ্ন উঠল, কে আসলে ক্যালকুলাসের আবিষ্কারক? নিউটনের প্রভাবের কারণে তখন তাঁকেই মানুষ ক্যালকুলাসের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এখন অবশ্য লিবনিজকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সে আবার আরেক লম্বা গল্প। অন্য দিনের জন্য সে গল্প তোলা থাক। প্রসঙ্গে ফিরি। ধীরে ধীরে  বীজগণিতের গুরুত্ব মানুষ বুঝতে শিখল। বীজগণিতের জন্যই পরে সেট থিওরির মতো আধুনিক গণিতের ভিত্তি তৈরি হয়। গণিত ধীরে ধীরে জ্যামিতিক ভিত্তি থেকে সরে এসে আরও বেশি বিমূর্ততার দিকে এগিয়েছে।

একটা প্রমাণ তৈরির জন্য গণিতবিদরা কিছু মৌলিক ধারণা বা স্বতঃসিদ্ধের ওপর শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেন। তারপর এই ভিত্তির ওপর একটা একটা করে ইট গাঁথেন। এই ইট হলো ছোট ছোট সত্য উক্তি যাকে লেমা (Lemmas) বলে। শেষ পর্যন্ত একটা সম্পূর্ণ যৌক্তিক কাঠামো তৈরি করতে এই লেমা বা ছোট ছোট উক্তিই সাহায্য করে।

আসলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই পুরো কাঠামোটা তৈরি করা। একে একে দেওয়াল, সিঁড়ি আর স্তম্ভগুলো সাঁজাতে হয়। কোনো প্রমাণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটা হয়তো তার নকশা, কিন্তু ইটগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সম্পূর্ণ কাঠামো দাঁড় করানোর আগে লেমা বা ছোট ছোট উক্তিগুলোকে সত্যি প্রমাণ করতে হয়। তারপর সেগুলোকে বুদ্ধিমানের মতো সাজিয়ে তৈরি করা হয় সম্পূর্ণ প্রমাণ।

গণিতবিদদের ধারণা, কয়েক বছরের মধ্যে এআই এই লেমাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রমাণ করতে পারবে। এমনটা যদি সত্যিই সম্ভব হয়, তাহলে গবেষণাপত্র লেখা অনেক সহজ হবে। গণিত এগিয়ে যাবে আরও দ্রুত গতিতে। অনেক দ্রুত খুলে খুলে যাবে গণিতের নতুন নতুন ক্ষেত্র। এতে ভবিষ্যতে বদলে যেতে পারে গণিত শিক্ষাও। 

তবে এতে গণিতবিদদের কোনো ভয় নেই। এআই অন্তত গণিতের সবকিছু দখল করতে পারবে না। গণিতবিদরা থাকবেন নতুন গাণিতিক ইমারতের স্থপতি হিসেবে। আর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করবে এআই। 

তবে এআইয়ের এই ব্যবহার মানে এখন মানুষ যা ব্যবহার করছে, তাও গণিতকে অনেক বদলে দিতে পারে। যেমনটা ১৭ শতকে বীজগণিতিক এসে বদলে দিয়েছিল। এই পরিবর্তন কেমন হতে পারে তা বোঝার জন্য একটা পরীক্ষা করেছেন যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের হিদার ম্যাকবেথ। তিনি ঐতিহ্যবাহী প্রমাণ মানে এতদিন গণিতবিদেরা যেভাবে ধাপে ধাপে প্রমাণ করেছেন এবং লীন নামে একটা এআই মডেল দিয়ে একই উপপাদ্যের প্রমাণ করে তুলনা করছেন। দেখা গেছে, এআই মডেল আরও বেশি তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এসব অতিরিক্ত তথ্য গণিতবিদদের আরও বেশি সাহায্য করতে পারে। 

গণিতবিদদের জন্য এই অনুভূতি শুধু অস্বস্তি নয়, বরং তাঁরা সক্রেটিসের মতোই উদ্বিগ্ন। তাঁরা মনে করছেন, এভাবে এআই দিয়ে গবেষণা করলে তাঁদের চিন্তাভাবনার ক্ষমতার ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

তবে এআই ব্যবহারের কিছু সুবিধাও আছে। যেমন হিগস বোসন আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়ার সময় যেসব গবেষণাপত্র লেখা হয়েছে, তার পেছনে ছিল ৩ হাজারের বেশি লেখক শ্রম। সঙ্গে ছিল কয়েক দশকের প্রচেষ্টা এবং বিলিয়ন ডলার অর্থ। এমনকি গণিতেও একটা প্রমাণের জন্য অন্তত ১০০ জনেরও বেশি গবেষক অবদান রেখেছেন। তাঁরা ১০ হাজারের বেশি পৃষ্ঠায় সেই ফাইনিট সিম্পল গ্রুপ নামে গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করে রেখেছেন। এআই এই ধরনের গাণিতিক প্রকল্পে পরিবর্তন আনতে পারে। এতে সময় এবং অর্থ দুটিই বাঁচবে। 

বর্তমানে একজন গণিতবিদ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব গাণিতিক কাজ করেন। যেমন, নতুন ধারণা তৈরি করা, লেমা এবং উপপাদ্য প্রমাণ করা, প্রমাণ লেখা এবং সেগুলো অন্যদের জানানো। এআই এসব জায়গায় পরিবর্তন এনে দিতে পারে। যেখানে এআই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, সেখানে হয়তো গণিতবিদরা হাতে-কলমে তা সমাধান করবেন। 

সবশেষে ছোট্ট একটা আশঙ্কার কথা বলে শেষ করি। কোনো জিনিস যত কম পাওয়া যায় সেই জিনিসের দাম বিশ্বের মানুষের কাছে তত বেশি। আবার যে জিনিস তৈরি করতে সময় বেশি লাগে, সেই জিনিসের প্রতিও মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। সহজে পাওয়া জিনিসে মানুষের আগ্রহ থাকে না। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা সবার কাছে সমাদৃত, কারণ ওরকম জিনিস পৃথিবীতে একটাই আছে। কিন্তু ভিঞ্চি যদি একাধিক মোনালিসার ছবি এঁকে যেতেন, তাহলে হয়তো ওটা এত সমাদৃত হতো না। ভবিষ্যতে গণিতের প্রমাণভিত্তিক ও সৃজনশীল কাজ যদি এআই করে দেয়, তাহলে এসব উপপাদ্য প্রমাণ বা আবিষ্কারের জন্য গণিতবিদদের মূল্য থাকবে তো? 

সূত্র: স্যালি কলওয়েল, ম্যাথম্যাটিক্যাল বিউটি, ট্রুথ অ্যান্ড প্রুফ ইন দ্য এজ অব এআই, কোয়ান্টা ম্যাগাজিন