পাইয়ের মান গণনায় বিশ্ব রেকর্ড

পাই গণনায় আবারও বিশ্ব রেকর্ড করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার স্টোরেজ কোম্পানি সলিডিগম। সম্প্রতি পাইয়ের ১০৫ ট্রিলিয়ন ডিজিট পর্যন্ত মান গণনা করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। কয়েক হাজার স্মার্টফোনের সমান কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করে এই মান নির্ণয় করা হয়েছে। ডাটা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ১ পেটাবাইট (১০ লাখ গিগাবাইট) স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নতুন ল্যাপটপ। এই মান বের করতে সময় লেগেছে টানা ৭৫ দিন।

পাই অত্যন্ত রহস্যময় একটি সংখ্যা। কারণ এর মানের কোনো শেষ নেই। মানে, অসীম। সুতরাং, দশমিকের পরে এর মান লিখে কোনোদিন শেষ করা যাবে না। তাই পাইয়ের সবচেয়ে বড় মান নিয়ে সব সময়ই মানুষের মধ্যে একধরনের উত্তেজনা কাজ করে। আর গণিতপ্রেমী হলে তো কথাই নেই। যদিও গণিত বা কোনো সমীকরণে এই মান কাজে লাগে না। তবু মানুষ চেষ্টা করে পাইয়ের আরও বড় মান নির্ণয় করতে।

মহাবিশ্বের জন্য সর্বোচ্চ পাইয়ের ৪০ ঘর পর্যন্ত মান-ই যথেষ্ট। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এখন পর্যন্ত পাইয়ের ১৫ ঘর পর্যন্ত মান ব্যবহার করেছে।
পাই একটি রহস্যময় সংখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

হয়তো ভাবতে পারেন, মহাবিশ্ব বা মহাজাগতিক জটিল কোনো হিসেব নিকেশ করতে পাইয়ের এরকম বড় মান দরকার পড়ে। কিন্তু না। মহাবিশ্বের জন্য সর্বোচ্চ পাইয়ের ৪০ ঘর পর্যন্ত মান-ই যথেষ্ট। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এখন পর্যন্ত পাইয়ের ১৫ ঘর পর্যন্ত মান ব্যবহার করেছে। 

তাহলে মানুষ কি শুধু নাম কামাতে বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পাইয়ের এত ঘর পর্যন্ত নির্ণয় করে? জোর দিয়ে এই উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ এই মানের তেমন মূখ্য ভূমিকা না থাকলেও কিছু গৌণ ভূমিকা রয়েছে। কম্পিউটারের প্রোগ্রাম, প্রসেসিং ক্ষমতা ও ডেটা স্টোরেজ সিস্টেম পরীক্ষার বেঞ্চমার্ক হিসেবে দেখতে পারেন এ মানকে।

সাধারণত পাইয়ের মান নির্ণয় করা হয় কম্পিউটারের সাহায্যে। সব কম্পিউটারের স্টোরেজ ও প্রসেসিং ক্ষমতা সমান হয় না। যেমন আমরা সাধারণত ১ টেরাবাইট স্টোরেজের কম্পিউটার ব্যবহার করি। ১০ লাখ গিগাবাইটের কম্পিউটার আমাদের চেয়ে কত গুণ বেশি স্টোরেজ সম্পন্ন, একবার ভাবুন! এর ভূমিকা আছে প্রসেসিং ক্ষমতাতে। স্টোরেজ বেশি হলে দ্রুত ও সহজে কাজ করতে পারে কম্পিউটার। আর উন্নতমানের ও ভারী প্রোগ্রাম চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি তো রয়েছেই! 

১৯৮৯ সালে ১০০ কোটি ঘরের পাইয়ের মান নির্ণয় সম্ভব হয়েছে। কোটি থেকে এখন ট্রিলিয়নে পৌঁছে গেছে পাইয়ের মান।
সুপার কম্পিউটার
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর প্রথম অ্যানালগ কম্পিউটার এনিয়াকের সাহায্যে ১৯৪৯ সালে ৭০ ঘণ্টার চেষ্টায় পাইয়ের মান পাওয়া গিয়েছিল ২ হাজার ৩৭ ঘর পর্যন্ত। এরপর হাজার থেকে লাখে যেতে সময় লেগেছে ১৩ বছর। ততদিনে কম্পিউটার আরও উন্নত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে ১০০ কোটি ঘরের পাইয়ের মান নির্ণয় সম্ভব হয়েছে। কোটি থেকে এখন ট্রিলিয়নে পৌঁছে গেছে পাইয়ের মান। বুঝতেই পারছেন কম্পিউটারের অগ্রগতির চিত্রটা কেমন উর্ধ্বমুখী। কম্পিউটার আসলে কতটা উন্নতি করল, তা বোঝা যায় পাইয়ের মান দেখে। 

আবার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। নতুন আবিষ্কৃত ১০৫ ট্রিলিয়ন সংখ্যাটা আসলে কত বড়? ১ হাজার বিলিয়নে হয় এক ট্রিলিয়ন। এক বিলিয়ন মানে ১০০ কোটি। সুতরাং ১ ট্রিলিয়ন মানে ১ লাখ কোটি। আপনি যদি ১০ আকারের ফন্ট ব্যবহার করে ১০৫ ট্রিলিয়ন টাইপ করেন, তাহলে ৩৭০ কোটি কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এ লাইন। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে লাইন শুরু হলে ইউরেনাস এবং নেপচুনের মাঝামাঝি কোথাও গিয়ে থামবে। নতুন আবিষ্কৃত মানের শেষ সংখ্যাটি হলো ৬। 

আরেকটা মজার তথ্য দিয়ে শেষ করা যাক। কম্পিউটারে তো ট্রিলিয়ন ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান বের করা গেছে। কিন্তু মানুষ সর্বোচ্চ কত ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান মুখস্ত করতে পারে? গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে, ভারতের ভেলোর ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (ভিআইটি) রাজবীর মিনা সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান মুখস্ত বলতে পারেন।

ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী কম্পিউটার আবিষ্কার হলে হয়তো পাইয়ের আরও বড় মান পাওয়া যাবে। সে জন্য হয়তো ব্যবহার করতে হবে সুপার কম্পিউটার বা কোয়ান্টাম কম্পিউটার। পাইয়ের মান লিখে যেহেতু শেষ করা যাবে না, তাই সবচেয়ে বড় মান নির্ণয় করার লড়াইটা চলবে সম্ভবত আজীবন। 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, গুগল ক্লাউড, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড