গণিত শিখব কিন্তু সূত্র শিখব না, এ কথা বলা চলে না। গণিতের জন্য সূত্র খুবই প্রয়োজনীয়। গণিত আর সূত্র যেন একে অপরের পরিপূরক। গণিতের প্রাণ বলা যায় সূত্রকে। আবার, ছোট ছোট এসব সূত্রের ক্ষমতাও কিন্তু কম নয়। মনে হতেই পারে, সূত্রের আবার ক্ষমতা আসে কোত্থেকে? এটার প্রমাণ মিলবে আলবার্ট আইনস্টাইনের সূত্রে। তাঁর ছোট্ট সূত্র, E=mc2 সবার জানার কথা। সূত্রটি যতটা ছোট, এর ক্ষমতা তারচেয়েও বেশি। এই সূত্র ব্যবহার করে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার আঘাতে মারা গিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ। যদিও আইনস্টাইন পারমাণবিক বোমা বানানোর জন্য এই সূত্রটি আবিষ্কার করেননি। কিন্তু আমরা কোনো জিনিস ভালো কাজে ব্যবহার করব, নাকি খারাপ কাজে—সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ওপর নির্ভর করে। সব জিনিসের ভালো ও মন্দ দিক থাকে। সেখান থেকে শুধু ভালোটুকুই আমাদের নিতে হবে। অর্থাৎ সূত্রেরও যে ব্যাপক ক্ষমতা আছে, সেটা বোঝা গেল। তবে এটি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, গণিতের নয়।
যাহোক, আজ আমরা সেদিকে যাব না। এখানে আমরা দেখব বীজগণিতের খুব সহজ ও পরিচিত একটি সূত্র—
(a + b)2 = a2 + 2ab + b2
সব জিনিসের ভালো ও মন্দ দিক থাকে। সেখান থেকে শুধু ভালোটুকুই আমাদের নিতে হবে। অর্থাৎ সূত্রেরও যে ব্যাপক ক্ষমতা আছে, সেটা বোঝা গেল। তবে এটি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, গণিতের নয়।
ষষ্ঠ শ্রেণি বা তার ওপরের শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এই সূত্রটির সঙ্গে পরিচিত থাকার কথা। অনেকেই হয়তো অঙ্ক করার খাতিরে সূত্রটি মুখস্ত করেছেন। কিন্তু সবাই কি জানেন, সূত্রটি কেন এমন হলো? অন্যরকমও তো হতে পারত। সূত্রের মাঝে 4ab না হয়ে কেন 2ab হলো? এই সব প্রশ্নের আমরা না বুঝেই মুখস্থ করি।
এখন এই সূত্রটির দুধরনের প্রমাণ দেখা যাক। প্রথমে সহজ ভাবে দেখি। শুরু করার আগে দেখি বর্গ (স্কয়ার) মানে কী? আমরা কোনো কিছুর ঘাত বা সূচক ২ হলে সেটাকে বলি বর্গ। অর্থাৎ, যে সংখ্যাটিকে বর্গ করব, সেই সংখ্যাকে দুবার গুণ করতে হবে। আবার ঘাত হিসেবে ৩ ব্যবহার করলে বলি ঘন। মানে ঘাত বা সূচক যত থাকবে, ওই সংখ্যা তত বার গুণ হবে। যেমন 22 = 4 অর্থাৎ (2×2 = 4)। আবার 32 = 9 মানে (3×3 = 9)। তাহলে (a + b)2 মানে নিশ্চয়ই (a+b) × (a+b)। এবার এই দুটি গুণ করলে কী হবে?
(a+b) × (a+b) = a(a+b)+b(a+b) = (a2+ab)+(ab+b2) = a2+ab+ab+b2 = a2+2ab+b2
গুণ করে সহজেই বোঝা যায়, সূত্রটির বিস্তৃতি কেন এমন হলো।তবে সূত্রটি মূলত যেখান থেকে এসেছে, এবারে আমরা যাব সেই জ্যামিতির কাছে। দেখব জ্যামিতিক পদ্ধতি। তাহলে স্পষ্ট বোঝা যাবে, a2 কথাটি র্যান্ডম কিছু নয়, এর একটা বাস্তব অর্থ আছে।সেই অর্থ মেনেই সূত্রটি এসেছে।
ওপরের চিত্রের মতো, a ও b দুইটি আলাদা রেখাংশ (বা রেখার অংশ) নিতে হবে। (বইয়ের ভাষায় এটাকে বলে রশ্মি, তবে আমরা এ আলোচনায় রেখা বলব।) ধরা যাক, a রেখাটা একটু বড়, আর b রেখাটা একটু ছোট। এবার, দুটোকে যোগ করলে হবে a+b। বলা বাহুল্য, এটাও হবে একটা রেখা (আসলে, রশ্মি)।
আমরা এখন এরকম ৪টি (a+b) রেখা নিয়ে একটি বর্গ আঁকব। আমরা জানি, বর্গের ক্ষেত্রফল = বাহু×বাহু। মানে, বাহু২। তারমানে, এই বর্গটির ক্ষেত্রফল হবে (a+b)2।
এবারে ওপরের চিত্রটি ভালো করে দেখলেই বুঝবেন, বর্গটির প্রতিটি বাহু a ও b-এর মিলিত রূপ। ভেতরের ক্ষেত্রফলটাকে এখন আমরা ভাগ করতে চাই। কীভাবে করা যায়? a ও b এর দৈর্ঘ্যের সাহায্য নেব। এই সাহায্য নিয়ে ওপরের (a+b) বাহুটির a অংশটির দৈর্ঘ্য ব্যবহার করে আমরা যদি একটা বর্গ আঁকি, তার ক্ষেত্রফল হবে a2। আবার নিচের বাহুতে আমরা যদি b অংশটির দৈর্ঘ্য ব্যবহার করে একটি বর্গ আঁকি, তাহলে সেটার ক্ষেত্রফল হবে b2। এই যে দুটো বর্গ আঁকলাম, এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুটো আয়তক্ষেত্রও কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে। এ আয়তক্ষেত্র দুটোর দৈর্ঘ্য a আর প্রস্থ b। আর আমরা জানি, আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = (দৈর্ঘ্য×প্রস্থ)। অর্থাৎ এ দুটি আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ab।
এবার সাজিয়ে লেখা যাক। (ওপরের বড় বর্গক্ষেত্র + ওপরের আয়তক্ষেত্র + নিচের আয়তক্ষেত্র + নিচের ছোট বর্গক্ষেত্র) = (a2+ab+ab+b2) = a2+2ab+b2।
কাজেই (a + b)2 = (a2+ab+ab+b2) = a2+2ab+b2।
হ্যাঁ, এভাবেই মূলত এই সূত্রটি তৈরি হয়েছে।
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা