ব্যবসায় বাজিমাত!

শারাফাত কবির একজন ফল ব্যবসায়ী। নিজের একটা মোটামুটি বড় ব্যবসা আছে। তাঁর তিন ছেলে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে বড় হয়েছেন তাঁরা।

শারাফাত কবির ভাবলেন, ছেলেদের বুদ্ধির একটা পরীক্ষা নেওয়া যাক। তিনি তাঁদের ডাকলেন। শফিক, শাফায়েত ও সাব্বির এলেন। শারাফাত কবির বললেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। ধীরে ধীরে ব্যবসার হাল তোমাদের কাউকেই নিতে হবে। অথবা তোমরা চাইলে তিনজন মিলেই এ ব্যবসা দেখতে পারো। তবে তার আগে আমি তোমাদের একটা ছোট্ট পরীক্ষা নিতে চাই।’

তিনি ছেলেদের উদ্দেশে আরও বললেন, ‘এখানে ৯০টি আপেল আছে। এগুলো তোমরা বাজারে বিক্রি করবে। সবার বড় শফিক পাবে ৫০টি আপেল। শাফায়েত ৩০টি এবং সাব্বির ১০টি আপেল পাবে। শর্ত হলো, তোমাদের সবার একই দামে আপেলগুলো বিক্রি করতে হবে। যেমন শফিক যদি প্রতিটি আপেল ৩০ টাকা করে বিক্রি করে, তাহলে তোমাদের প্রত্যেককে ৩০ টাকা করেই আপেল বিক্রি করতে হবে। তবে সব কটি আপেল বিক্রি করে তোমরা মোট কত টাকা নিয়ে আসবে, তা আমার দেখার বিষয় নয়। কিন্তু দিন শেষে তোমাদের প্রত্যেকের কাছে সমপরিমাণ টাকা থাকতে হবে।’

আরও পড়ুন
ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছেন শারাফাত কবির

শারাফাত কবির একটু থামলেন। একনজর দেখলেন ছেলেদের। তারপর আবার শুরু করলেন, ‘আমার আরও একটা শর্ত আছে। তোমরা কেউ একজন অন্যজনের সঙ্গে আপেল ভাগাভাগি করতে পারবে না। আমি যেভাবে ভাগ করে দিয়েছি, সেভাবেই থাকবে। শফিকের অবশ্যই ৫০টি আপেল বিক্রি করতে হবে। একইভাবে শাফায়েত ও সাব্বিরের যথাক্রমে ৩০টি ও ১০টি আপেল বিক্রি করতে হবে।’

শুরুতে বাবার কথা শুনে ছেলেদের কাছে অসম্ভব মনে হলো। কিন্তু তাঁরা কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে একটা সমাধানে পৌঁছে গেলেন। প্রত্যেকে নিজেদের আপেলগুলো নিয়ে বাজারে গেলেন এবং বাবার দেওয়া নির্দেশ মতো আপেলগুলো বিক্রি করলেন। একই দামে শফিক ৫০টি, শাফায়েত ৩০টি ও সাব্বির ১০টি আপেল বিক্রি করলেন। আর প্রত্যেকে তাঁদের বাবার কাছে সমপরিমাণ টাকা এনে জমা দিলেন।

শুনতে অবাক লাগলেও এটা সম্ভব। একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আপনি সমাধান করতে পারেন কি না। ওদের তিন ভাইয়ের কোনো একজনের জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন? ভাবুন। তারপর মিলিয়ে দেখুন নিচের সমাধানটার সঙ্গে।

আরও পড়ুন

সমাধান

শফিক প্রতি ৭টা আপেল ১০ টাকায় বিক্রি করলেন। এভাবে তিনি মোট ৪৯টি আপেল বিক্রি করে পেলেন ৭০ টাকা। ধরে নিন, এই আপেলগুলো তাঁরা পাইকারি দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এরচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে গেলে সবার সমপরিমাণ টাকা মেলাতে জটিলতা দেখে দেবে। এবারে আর একটা আপেল বাকি রইল। এটার কথায় পরে আসছি।

এরপর শাফায়েতও নিয়ম মেনে প্রতি ৭টা আপেল ১০ টাকা করে মোট ২৮টি আপেল বিক্রি করলেন। তিনি পেলেন ৪০ টাকা। তাঁর কাছে বাকি রইল ২টি আপেল।

আর সাব্বির শুধু ৭টা আপেল ১০ টাকায় বিক্রি করলেন। তাঁর কাছে বাকি রইল ৩টা আপেল।

এবার তিন ভাই বাকি আপেলগুলোর প্রতিটি ৩০ টাকা করে খুচরা বিক্রি করলেন। তাহলে শফিক একটা আপেলের জন্য পেলেন আরও ৩০ টাকা, শাফায়েত ২টি আপেলের জন্য ৬০ টাকা এবং সাব্বির ৩টা আপেলের জন্য ৯০ টাকা। হিসাব করলে দেখবেন, প্রত্যেকের টাকার পরিমাণ সমান। ছকের সাহায্যে দেখলে বুঝতে আরও সুবিধা হবে।

প্রত্যেক ভাই বাবার নির্দেশ মতো যথাক্রমে ৫০টি, ৩০টি ও ১০টি আপেল বিক্রি করেছেন। কিন্তু সবাই ১০০ টাকা করে তাঁদের বাবার কাছে জমা দিয়েছেন। ছেলেদের বুদ্ধি দেখে শারাফাত করিম বেশ খুশি হলেন। ওদের হাতে হয়তো এখন ব্যবসার দায়িত্ব তুলে দেওয়াই যায়!

সূত্র: হাউ টু বি আ ম্যাথ ম্যাজিশিয়ান অবলম্বনে