আগুন থেকে বাঁচার উপায়

প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায় অগ্নিকাণ্ডে। এসব মৃত্যুর জন্য যতটা না আগুন দায়ী, তার চেয়ে অসচেতনতা বড় ভূমিকা রাখে। অগ্নিকাণ্ডে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে না। তাড়াহুড়া করে পদদলিত হয়ে পড়ে অনেকেই। আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়েই বেশি মারা পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তার এখন কী করা উচিত। থাকে না কোনো পূর্বপ্রস্তুতিও। তাতে মৃতের সংখ্যাই শুধু বাড়ে।

অগ্নিকাণ্ডের জন্য যদি পূর্বপ্রস্তুতি থাকে, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি যেমন কমানো সম্ভব, বাঁচানোও সম্ভব অনেক অমূল্য প্রাণ। এ জন্য কিছু কিছু সাধারণ প্রস্তুতি থাকা উচিত সবারই।

আগুন লাগার আগে

১. বসতবাড়িতে বা অফিসে স্বয়ংক্রিয় ফায়ার অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখা উচিত, যেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে ওঠে এবং সবাই সতর্ক হতে পারে।

২. পরিবারের সবাইকে আগুনের বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। আগুন লাগলে সবাই কোথায় আশ্রয় নেবেনে, আগে থেকেই তা ঠিক করে রাখতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে কীভাবে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো যায়, তা অনুশীলন করে দেখতে হবে।

৩. আপনার বাসা যদি দোতলা বা তার ওপরে হয়, তাহলে কীভাবে ঘর থেকে বের হবেন, তার পূর্বপ্রস্তুতি নিন। এ ক্ষেত্রে জানালা ভালো উপায় হতে পারে। এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় জানালা গলে বের হওয়া যায়।

৪. ঘরের ভেতরে দাহ্য তরল না রাখাই ভালো। যদি থাকেও তাহলে তার আশপাশে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। দাহ্য তরল যেন চুলা বা মশার কয়েল থেকে দূরে থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

৫. রান্না করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। গ্যাসের চুলা অযথা জ্বালিয়ে রাখা উচিত নয়। যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।

৬. দেশলাই বা ম্যাচ বাক্স যথাসম্ভব ওপরে এবং বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত। ড্রয়ারে তালাবদ্ধ করে রাখা বেশি নিরাপদ। দেশলাই কখনো চুলা বা মশার কয়েলের আশপাশে রাখা উচিত নয়।

৭. ঘুম ঘুম অবস্থায় ধূমপান না করাই ভালো। কারণ, মাঝেমধ্যে তন্দ্রাভাব থেকে যেকোনো সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে পারেন।

৮. ধূমপান করলে অবশ্যই সিগারেটের অবশেষ নিভিয়ে ফেলা উচিত। যেখানে–সেখানে জ্বলন্ত সিগারেট ফেলা উচিত নয়।

৮. অগ্নিনির্বাপক অ্যালার্ম মাঝেমধ্যে রাতে বাজিয়ে দেখতে হবে, পরিবারের সবাই অ্যালার্ম শুনে সতর্ক হচ্ছেন কি না। সতর্ক না হলে তাঁদের বারবার অনুশীলন করাতে হবে।

৯. নিকটবর্তী অগ্নিনির্বাপক অফিসের নম্বর সংগ্রহ করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তাদের মাধ্যমে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

আগুন লাগার সময়

১. বাসায় বা আশপাশে আগুন লাগলে প্রথম কাজ সবাইকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো, কোনো মূল্যবান জিনিস বাঁচানো নয়।

২. মাথা ঠান্ডা রেখে বিদ্যুতের মেইন সুইচ অফ করতে হবে।

৩. যত দ্রুত সম্ভব অগ্নিনির্বাপক অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

৪. ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে, তাড়াহুড়া করে দরজা খুলতে যাবেন না। প্রথমে দেখে নিতে হবে দরজা গরম কি না। দরজা গরম থাকলে দরজা দিয়ে বের না হয়ে অন্য উপায় খুঁজতে হবে। এ ক্ষেত্রে জানালা ভালো উপায় হতে পারে।

৫. দরজা গরম না থাকলে সাবধানে দরজা খুলে বের হতে হবে। নাকে অবশ্যই কাপড় দিয়ে রাখতে হবে, যাতে কোনো ক্ষতিকর গ্যাস শ্বাসের সঙ্গে ঢুকতে না পারে।

৬. নিচে নামার ক্ষেত্রে লিফট ব্যবহার করা যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। কোনো কারণে লিফটে আটকা পড়লে জীবন বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সাবধান থাকতে হবে। পা হড়কে পড়ে গেলে পদদলিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

৭. পোশাকে আগুন ধরে গেলে দৌড়ানোর চেষ্টা না করে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে। দৌড়ালে আগুন বেড়ে যাবে, আরও বেশি করে জ্বলে উঠবে। গড়াগড়ি করলে আগুন অক্সিজেনের অভাবে নিভে যাবে।

৮. অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘর থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর দরজার নিচের ফাঁকা জায়গা ও ভেন্টিলেটর ভেজা কাপড় বা কাঁথা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে, যেন বাইরের ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস ভেতরে না আসে। এ সময় আগুনের বিপরীত দিকের জানালা খুলে বাইরের সাহায্য চাইতে হবে।

আগুন নেভার পরে

১. অগ্নিদগ্ধ হলে প্রথমেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

২. আগুন থেমে যাওয়ার পরও ওই ভবনে যাওয়া যাবে না। ভবন পরীক্ষা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভবনে যেতে হবে।

৩. আগুন লাগা ঘরে যে খাবার ছিল, সেগুলো ব্যবহার করা যাবে না। সেগুলো ফেলে দেওয়া বরং নিরাপদ।

তথ্য: লাইফ হ্যাকার ডট কম